নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে জোহরান মামদানির বিস্ময়কর বিজয় দুটি শহর ও দুটি আমেরিকার গল্প। একটিতে আশাবাদী ও প্রগতিশীল রাজনীতির বাহক একজন যুবক, যা তাদের বিশাল তহবিল, নেটওয়ার্ক এবং ডেমোক্রেটিক দলের সিলসিলার মধ্য দিয়ে এস্টাবলিশমেন্ট বা ক্ষমতা বলয়ের হর্তাকর্তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন এবং বিজয় ছিনিয়ে আনলেন।

অন্য গল্পে বর্ণবাদ ও ইসলামবিদ্বেষের এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে মুসলিমবিদ্বেষী যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরটি দখল করেছে। মামদানির জয়ের পর প্রবল স্রোত, তীব্র ও নোংরা বর্জ্যের মতো মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রতিরোধ্যভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আজকাল অবাক করে দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক কিছু করতে হয়। কিন্তু মামদানি মূলধারার কুসংস্কারের অশ্লীল মাত্রা তুলে ধরতে বা উদোম করে দিতে অল্পতেই সক্ষম হয়েছেন।

রাজনীতিবিদ, জনসাধারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সদস্য এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব-অনুসারীদের নরককুণ্ড– সবাই একত্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা কেবল একটি সম্মিলিতভাবে স্বপ্রণোদিত ভ্রান্ত ধারণা বলে তুলে ধরা যেতে পারে। যেমন স্ট্যাচু অব লিবার্টির ওপর বোরকার একটি ছবি; হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের মধ্যে ডেপুটি চিফ স্টিফেন মিলার বলেছেন, মামদানির জয় তখনই ঘটে, যখন কোনো দেশ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।

রিপাবলিকান ও কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ডি ওগলস মামদানিকে ‘ছোট্ট মুহাম্মদ’ বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে দেশ থেকে নির্বাসনের আবেদন করেছেন। তাঁকে ‘হামাস সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল’ ও ‘জিহাদি সন্ত্রাসী’ বলা হয়েছে।

মামদানিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘কমিউনিস্ট-পাগল’ বলার মধ্য দিয়ে কতটা বর্ণবাদী প্রতিক্রিয়ার চাষ হয়েছে, তার পরিমাপক হিসেবে দেখা যায়। তবে তার একটি পরিমাপক হলো তুলনামূলক সংযত থাকা। কিছু প্রতিক্রিয়া এতটাই উগ্র ছিল, আমি প্রায়ই বুঝতে পারতাম না, কোনটা আসল আর কোনটা উপহাস। কারণ মামদানির ব্যাপারে একজন ভয়ংকর ইসলামপন্থি স্লিপার এজেন্টের ধারণাটি স্পষ্টতই রসিকতা, যার জীবনাচার অন্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রচণ্ড আন্তরিকতাই প্রধান।

কিন্তু এটা কোনো রসিকতা নয় এবং যদি তাই-ই হয়, তাহলে এটা আমার ওপরই নির্ভর করছে। কারণ এত বছর পরও জনসাধারণের মধ্যে মুসলমানরা জনসাধারণের মন ও মগজে কী প্রভাব ফেলে, তা অবমূল্যায়ন করছি। আর অনেকেই মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা নিয়ে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং কেন তারা তা করবেন না? আজ পর্যন্ত মামদানির নিজ দলের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, চাক শুমার ও হাকিম জেফ্রিস এই আক্রমণের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করেননি। আর যেসব রাজনীতিবিদ ও চেনামুখ এটি তৈরি করেছেন, তাদের কোনো নিন্দা বা পরিণতি ভোগ করতে হবে না। কারণ মৌলিকভাবে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা সব ধরনের বর্ণবাদের মতো যখন এটি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তখনই তা বৃদ্ধি পায় যখন এর একটি পদ্ধতিগত সমর্থনের প্রক্রিয়া থাকে। যার ফলে এর আক্রমণাত্মক দিকও প্রকাশ পায় না।
কিন্তু মামদানির বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রতি উদাসীনতার কারণ হলো তিনি কেবল তাঁর ধর্মীয় পটভূমিতেই নন, বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে একজন বহিরাগত। তাঁর অপরাধ তিনি একজন মুসলিম ও রাজনীতিবিদ হতে সাহস দেখিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। বরং তিনি যদি একজন প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপক হতেন, তবে তিনি ‘পাস’ করতে পারতেন। এ ছাড়া অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর দৃঢ় মতামত রয়েছে, যা তাঁকে পুঁজিবাদ ও ইসরায়েলের ব্যাপারে মূলধারার গোঁড়ামির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চিহ্নিত করে।

কর ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তাঁর বাম ধারার মতামত এবং মার্কিন পয়সায় ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিরুদ্ধে আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে মামদানির প্রতি প্রতিক্রিয়া সব সময়ই সম্ভব ছিল। কিন্তু তিনি এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি ইহুদিবিদ্বেষের প্রতি তাঁর বিরোধিতা, সব ধরনের ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর অর্থনৈতিক এজেন্ডা হলো শহরটিতে খাদ্য থেকে শুরু করে শিশুযত্ন আরও সাশ্রয়ী করে তোলার পাটাতন গড়ে তোলা, যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা তিনি তুলে ধরেছেন।

‘ইন্তিফাদা বিশ্বায়ন করুন’ বাক্যাংশটি প্রত্যাখ্যান করতে মামদানি অস্বীকৃতি জানান। কারণ এটি ‘ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সমতা এবং সমানাধিকারের জন্য মরিয়া আকাঙ্ক্ষা’ প্রকাশ করে। এটি একটি ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হয়েছে, তিনি এক ধরনের সহিংস জিহাদকে সমর্থন করেন। এটি এমন এক পাঠ, যা ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারের ক্ষেত্রে তাঁর বারবার দাবি তোলা এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে যে কোনো সহিংসতার নিন্দা করাকে উপেক্ষা করে। 

মামদানি এখনও মেয়র হননি এবং সম্ভবত তিনি পরিচয় ব্যবহার করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর বিশ্বাসকে অসম্মান করার জন্য ক্রমবর্ধমান প্রোপাগান্ডার মুখোমুখি হবেন। আর এখানেই তাঁর জয়ের প্রতিক্রিয়া উদ্বেগজনক এবং সম্ভাব্যভাবে প্ররোচিত। যেমন জ্বরের শেষ ভাঙনের আগ পর্যন্ত জমাট বাঁধা রূপ।

নাসরিন মালিক: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক; 
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম মদ ন র র জন য র জন ত ইসল ম ম সলম

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ের দুই সপ্তাহ যেতেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু লিভারপুল তারকার

বিশ্ব ফুটবলজুড়ে শোকের ছায়া। গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন লিভারপুল ও পর্তুগালের তারকা ফরোয়ার্ড ডিয়োগো জোটা। বয়স হয়েছিল মাত্র ২৮ বছর। বিয়ের মাত্র দুই সপ্তাহ পরই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এই প্রতিভাবান ফুটবলার। 

রয়টার্স জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর স্পেনের জামোরা প্রদেশের সারনাদিল্লা অঞ্চলে। স্থানীয় সময় ভোরে এ পর্তুগিজ ফুটবলার তার ভাই আন্দ্রেকে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে। এতে মুহূর্তেই গাড়িতে আগুন ধরে যায়। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে স্পেনের জামোরা প্রদেশের এ–৫২ মহাসড়কে। এতে জোটার সঙ্গে তার ২৬ বছর বয়সী ভাই আন্দ্রে সিলভাও ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। জোটার মত সিলভাও ফুটবলার ছিলেন। পর্তুগালের দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব পেনাফিয়েলে খেলতেন ২৬ বছর বয়সী সিলভা। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করতে পারেনি, কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বা কী ভাবে দুর্ঘটনা হয়েছে।

মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই শৈশবের প্রেমিকা রুতে কারদোসোকে বিয়ে করেন জোতা। এই জুটির তিনটি সন্তান আছে। গত ২২ জুন পোর্তোয় বিয়ের ছবি সামাজিক কিছুদিন আগে (২৮ জুন) পোস্ট করেন জোতা। এরপর নিয়মিতই নিজেদের ছবি পোস্ট করেছেন। এর মধ্যেই ভেসে এল এমন মর্মান্তিক খবর।

দুর্ঘটনার মাত্র একদিন আগেই একটি সাক্ষাৎকারে স্ত্রী রুতে কারদোসো ও তিন সন্তানকে নিয়ে জোটা বলেছিলেন, ‘আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ।’ মাত্র দুই সপ্তাহ আগে পর্তুগালের পোর্তোতে ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে করেন তিনি।

পর্তুগাল ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পেদ্রো প্রোএঞ্জা জোতা ও তার ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে শোকবার্তায় বলেন, ‘ডিয়োগো শুধু একজন অসাধারণ খেলোয়াড়ই নয়, ছিলেন একজন দারুণ মানুষ। জাতীয় দলের হয়ে প্রায় ৫০টি ম্যাচ খেলেছেন। তার প্রাণবন্ততা ও আন্তরিকতা সবসময়ই মনে রাখবে পর্তুগাল।’

২০২০ সালে উলভারহ্যাম্পটন থেকে লিভারপুলে যোগ দিয়েছিলেন জোটা। তার পরেই তৎকালীন কোচ জার্গেন ক্লপের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। নিয়মিত প্রথম একাদশে সুযোগ পেতে থাকেন। গত মৌসুমে লিভারপুলের লিগ জয়ী দলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২৬টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা
  • ‘নারীর একাধিক পুরুষ বন্ধু থাকলে অনায়াসে তাকে চরিত্রহীন বলা যায়’
  • আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদান আবার শুরু, স্থানীয় শিক্ষকদের পুনর্বহালের আশ্বাস
  • ‘কিল বিল’ তারকা মাইকেল মারা গেছেন
  • বোমা হামলার হুমকি, সাময়িক বন্ধ ছিল কানাডার ৬ বিমানবন্দরের ফ্লাইট
  • আমাজনের বৃষ্টিবনে
  • দালাই লামার উত্তরসূরি কীভাবে নির্বাচন করা হবে
  • ‘উপহাসে এখন আর খারাপ লাগে না, কষ্ট হয় না’
  • বিয়ের দুই সপ্তাহ যেতেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু লিভারপুল তারকার