প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের চার হাজার লার্নিং সেন্টার (শিক্ষাকেন্দ্র) আবার চালু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এসব শিক্ষাকেন্দ্রে আবারও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শিক্ষাকেন্দ্রগুলোয় প্রায় চার রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরকে পাঠদান করা হয়। ছাঁটাইয়ের মুখে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে গত ৪ জুন আশ্রয়শিবিরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর গত বুধবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সভায় বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো আবার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতিনিধি, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে পড়ায় চার লাখ রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর অলস সময় পার করছে এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কার কথা উঠে আসে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বৈঠকে বলেন, তহবিল–সংকটের কথা বলে ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশি ১ হাজার ১৭৯ শিক্ষককে ছাঁটাই করলেও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষক দিয়ে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালু রেখেছিল। এটি বৈষম্য। তাই তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছেন। বাংলাদেশি শিক্ষকদের বাদ দিয়ে শিক্ষাকেন্দ্র চালু রাখতে দেবেন না তাঁরা।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী এক মাসের মধ্যে ছাঁটাই হওয়া শিক্ষকদের পুনর্বহালের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করবে ইউনিসেফ। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তহবিল–সংকটের কারণে ১ হাজার ১৭৯ জন স্থানীয় (বাংলাদেশি) শিক্ষকের চাকরির চুক্তি শেষ হয়। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে আশ্রয়শিবিরের সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। বুধবারের বৈঠকে বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পরদিন থেকে চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদান শুরু হলেও ইউনিসেফের তহবিল–সংকট রয়েছে। এক মাস সময়ের মধ্যে তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে বাংলাদেশি ১ হাজার ১৭৯ শিক্ষকের চাকরি হবে। তহবিল সংগ্রহ না হলে রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদান আবার বন্ধ হয়ে যাবে, এমন অনিশ্চয়তাও রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষকনেতা বলেন, এক মাস সময়ের মধ্যে তাঁদের পুনর্বহাল না করলে আবারও তাঁরা কর্মসূচি জোরদার করবেন। তাঁদের বাদ দিয়ে কোনো শিক্ষাকেন্দ্র চালু রাখতে দেবেন না।

৪ জুন সকাল সাতটা থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার কোর্টবাজার পেট্রলপাম্প এলাকায় টানা ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ছাঁটাই হওয়া শিক্ষকেরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। একই সময় আশ্রয়শিবিরে কর্মরত দেশি-বিদেশি শতাধিক বেসরকারি সংস্থার কাউকে আশ্রয়শিবিরে ঢুকতে দেননি আন্দোলনকারীরা। পরে ওই দিন বিকেল চারটার দিকে আশ্রয়শিবিরের সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন।

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। আশ্রয়শিবিরগুলোর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের আট হাজার শিক্ষকের মধ্যে চার হাজার বাংলাদেশি। তবে সম্প্রতি ১ হাজার ১৭৯ বাংলাদেশি শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়।

আরআরআরসি কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে আশ্রয় শিবিরগুলোয় থাকা ১৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু-কিশোরের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার। তাদের মধ্যে প্রায় চার লাখ শিশু-কিশোর শিক্ষাকেন্দ্রে পড়াশোনা করছে।

আশ্রয়শিবিরের শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বাঁশ ও টিনের ছাউনি দিয়ে গড়া। প্রতিটা কেন্দ্রে ৬-১৪ বছর বয়সী ৪০ শিশু মেঝেতে বসে পড়াশোনা করে। রোহিঙ্গা শিশুদের এলসি লেভেল-১ ও লেভেল-২—এই দুই ভাগে ইংরেজি, বর্মিজ ভাষা, গণিত ও লাইফ স্কিল বিষয়ে পড়ানো হয়। দুটি পালায় ৮০ শিশুকে সপ্তাহের ছয় দিন (শুক্রবার বন্ধ) পড়ানো হয়। প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে নিয়োজিত রাখা হয় দুজন শিক্ষক। যার মধ্যে একজন বাংলাদেশি ও একজন রোহিঙ্গা।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা মদিনা খাতুন বলেন, তাঁদের শিবিরে ১৪-১৫ বছর বয়সী এক হাজারের বেশি মেয়ে রয়েছে। টানা এক মাস শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বহু মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় এক মাস বন্ধ থাকায় রোহিঙ্গা কিশোরদের অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে। শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে অপরাধ বেড়ে যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষ ক ন দ রগ ল ১ হ জ র ১৭৯ শ ক ষকদ র বন ধ থ ক ইউন স ফ তহব ল স এক ম স র বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন

যমুনা ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. বেলাল হোসেন সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দেশের একজন সফল উদ্যোক্তা। খবর বিজ্ঞপ্তি

যমুনা ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, মো. বেলাল হোসেন ১৯৫৬ সালে নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে তাঁর পরিবারের দেশ-বিদেশে সুনাম আছে। পরিবারের মালিকানাধীন বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে নানা ধরনের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ খাদ্যশস্য শিল্প। তিনি একজন বিশিষ্ট আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক। বর্তমানে তিনি বেলকন কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, বিএইচ হাইটেক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড, নাদিয়া ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড ও বিএইচ স্পেশালাইজড কোল্ডস্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বেলাল হোসেন নওগাঁ, দিনাজপুর ও হিলি অঞ্চলের বিভিন্ন ক্রীড়া ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদের এডিজিপি ফেলো মেম্বারশিপ সম্মাননা লাভ করেন। ২০০৫ সালে এফএনএস বিজনেস অ্যাওয়ার্ডে সেরা কৃষিভিত্তিক শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান।

বেলাল হোসেন নওগাঁ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, নওগাঁ এবং বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতি, ঢাকার কার্যনির্বাহী সদস্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
  • চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১
  • চলন্ত গাড়ির নিচে পড়েও অক্ষত অবস্থায় ফিরল ৩ বছরের শিশুটি
  • মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন
  • যমুনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন