ইসরায়েল শুধু ইরানের ওপর আক্রমণই করেনি, এটি ছিল ইহুদি রাষ্ট্রটির বড় সামরিক শক্তির প্রদর্শনও। কিন্তু ইরানের ওপর হামলার ইসরায়েলের সেই সামরিক শক্তি প্রদর্শন তুরস্কের নাগরিকদের হকচকিত করে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ও দরিদ্র হলেও ইরান তুর্কিদের কাছে একটি স্থিতিশীল দেশ। তা ছাড়া ইরানিরা একটি মহৎ জাতি, যার রয়েছে প্রাচীন সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সাহিত্য সম্ভার। তুর্কিরা ইরানিদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা আধিপত্যের প্রতিরোধ এবং নিজেদের ধর্মীয় নেতৃত্বের ওপর আস্থার প্রতি সম্মান করে।

ইরাক বা লেবাননের ওপর হামলার তুলনায় ইরানের ওপর হামলার ঘটনা তুরস্কে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া হয়। ইরানে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে তাদের আসলে অন্য আরও উদ্দেশ্য রয়েছে, যেমন বৃহত্তর ইসরায়েল গঠন এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার; ফলে তুরস্কের নাগরিকেরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে সেখানে তুরস্ক হতে পারে ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট।

আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫

ইরানে হামলার পর তুর্কিদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সবার প্রথম ও প্রধান উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তুরস্কের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা নিয়ে। ‘তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কী অবস্থা?’, ‘আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি এফ-৩৫ শনাক্ত করতে পারবে?’—এই প্রশ্নগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে এসেছে। এসব প্রশ্ন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চলাকালে দৈনন্দিন আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আশা প্রকাশ করা যাচ্ছে। ধারণা করা যায় তিনি তুর্কি জনগণের এ প্রশ্নগুলোর উত্তর ভালোভাবে দিতেই প্রস্তুত আছেন। তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের বিষয়ে তিনি ইতিমধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।

ইস্তাম্বুলের সাবেক মেয়র একরেম ইমামোগ্লুর দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার (যাকে বিরোধীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে) এবং অর্থনৈতিক সংকটের বাইরে এরদোয়ান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যেখানে নিজের সাফল্য দেখাতে পারেন, তা হলো নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশ।

সামনের নির্বাচনে তাঁর চ্যালেঞ্জ হবে তুরস্কের সামরিক শক্তি এবং এর নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতা সম্পর্কে জনসাধারণকে বোঝানো। প্রতিরক্ষা শিল্পের পরিসর আরও বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কর আরোপ করে তিনি তুর্কি জনগণের কাছে আর্থিক ত্যাগের জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন। এ ধরনের একটি নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল তুরস্কের তরুণ প্রজন্মের কাছেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নামার ক্ষেত্রে এরদোয়ান ইসরায়েল ও তুরস্কের তুলনামূলক প্রতিরক্ষাবিষয়ক অর্জনগুলোর ওপর জোর দিতে পারেন। ২০২৩ সালে নির্বাচনের আগে তিনি তুর্কি নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপ টিসিজি আনাদলু সামনে এনেছিলেন। জাহাজটিতে সাধারণ তুর্কি নাগরিকদের ওঠার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, মানুষ সেটির বিশালতা নিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। নির্বাচনের মাত্র ৩৪ দিন আগে জাহাজটি সামরিক শক্তিতে যোগ করা হয়।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের কারণে তুরস্কের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতার প্রতি তুর্কি নাগরিকদের মনোযোগ আরও বেশি থাকবে। এরদোয়ানও নির্বাচনী প্রচারণার সময় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে ভালোভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন। তুর্কিদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ বিরোধীদের তুলনায় এরদোয়ানকে স্থিতিশীল তুরস্কের শক্তি হিসেবে দেখে। ক্রমবর্ধমান অস্থির হয়ে উঠা এ অঞ্চলে দেশ পরিচালনার জন্য বিরোধীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও সংকল্পের অভাব রয়েছে বলে তারা মনে করে।

আরও পড়ুনতুরস্ক কেন ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিন্দা জানায়নি২৩ জুন ২০২৫

টিসিজি আনাদলু জাহাজ সংযোজন তুর্কি সামরিক বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়ে থাকে। এটি এক ব্যাটালিয়নের একটি বাহিনী পরিবহন এবং আটটি নৌযান বহন করতে সক্ষম ও বিমান পরিচালনাও করা সম্ভব এ জাহাজ থেকে। সহায়ক সামরিক সম্পদে অত্যাধুনিক ড্রোনের চেয়েও বড় কিছু দাবি করা হয়ে থাকে এ জাহাজকে।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে এরদোয়ানের প্রতিক্রিয়া ছিল লক্ষণীয়ভাবে সংযত ও গঠনমূলক। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একটি আলাদা যোগাযোগের চ্যানেল খোলার চেষ্টা করেছিলেন, যার মধ্য দিয়ে ইস্তাম্বুলে একটি মার্কিন-ইরান বৈঠক করা যায়। যুদ্ধকালীন এরদোয়ানের মন্তব্যগুলো আগের মতো আক্রমণাত্মকও ছিল না।

সামনের নির্বাচনে তাঁর চ্যালেঞ্জ হবে তুরস্কের সামরিক শক্তি এবং এর নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতা সম্পর্কে জনসাধারণকে বোঝানো। প্রতিরক্ষা শিল্পের পরিসর আরও বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত কর আরোপ করে তিনি তুর্কি জনগণের কাছে আর্থিক ত্যাগের জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন। এ ধরনের একটি নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল তুরস্কের তরুণ প্রজন্মের কাছেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র না রাশিয়া, কোন দিকে যাবে তুরস্ক২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

অনেক বিশ্লেষক যা মনে করেন, তাঁর বিপরীতে তুর্কি তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন ও এর পেছনে ব্যয়ের বিষয়টি নিবিড়ভাবে অনুসরণ করে। তারা তুরস্কের নির্মিত যুদ্ধবিমানগুলো সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখে এবং এগুলো তৈরির তাৎপর্য বোঝে। ফলে তুরস্কের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শিল্পকে নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান কৌশল হিসেবে নিলে এরদোয়ানের জন্য ভালো ফল দেবে।

ইলকার সেজার তুর্কি টুডে-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক

তুর্কি টুডে থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ত রস ক র ত রস ক র ত ত রস ক র ন এরদ য় ন র ন র জন য ইসর য় ল ন র ওপর ব যবস থ ক ত কর র একট ন ইসর

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে এখন রাজনৈতিক দলের অভাব নেই: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “দেশে এখন রাজনৈতিক দলের অভাব নেই। নতুন করে অনেক রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হয়েছে। তারা কেউ কেউ নির্বাচন চায়, আবার কেউ বলে হাসিনার বিচার হওয়ার আগ পযন্ত নির্বাচন হতে দেবে না। এমনও কথা মাঝে মাঝে শুনি।” 

শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে চুনকুটিয়া গালস স্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে সংস্কার ও দ্রুত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। 

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “নির্বাচন নিয়ে জনগণের সঙ্গে কোনো প্রহসন মেনে নেওয়া হবে না। রাজনীতি করেন, রাজীনীতি করার অধিকার সবার আছে। কারণ দেশটা সবাই মিলে স্বাধীন করেছে। এই দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সবার। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।” 

আরো পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে তৈরি হচ্ছে রাজকীয় চেয়ার

দুই বছর ধরে নেতৃত্বহীন বরগুনা জেলা বিএনপি

 

তিনি বলেন, “দুই একটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। দেশের মানুষ ১৬ বছর ভোট দিতে পারেনি। দ্রুত সব সংস্কার শেষ করে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।” 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “দেশের মানুষ স্বৈরাচার হাসিনা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তবে, তাদের গণতান্ত্রিক ভোটের অধিকার ফিরে পায়নি। জনগণ চায় তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে।”

তিনি বলেন, “গত ১৬ বছর হামলা, মামলা দিয়ে বিএনপির লোকজনকে হয়রানি করে বাসায় ঘুমাতে দেওয়া হয়নি। শত হামলা, মামলা মাথায় নিয়ে রাজপথে ছিলাম জনগণের ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য। এখন সময় এসেছে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার।” 

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামা ওবায়েদ, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক, আজিজুল বারি হেলাল, বিএনপির প্রবীণ নেতা নাজিম উদ্দিন, ঢাকা জেলা বিএনপি সাবেক সহ-সভাপতি সুলতান নাসের।

ঢাকা/শিপন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চাইছে চরের দল: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • দেশে এখন রাজনৈতিক দলের অভাব নেই: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • এ দেশের মানুষ আর কত জীবন দেবে, কত লড়াই করবে: নজরুল ইসলাম
  • ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না: অ্যাটর্নি জেনারেল  
  • ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না 
  • আইনে অস্পষ্টতার সুযোগে জনগণের ওপর নিপীড়ন চলে: নজরুল ইসলাম খান
  • জনগণের দাবি, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন : গিয়াসউদ্দিন
  • ‘নির্বাচন হলেই তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন’
  • জুলাই ঘোষণা, জুলাই সনদ এবং গণমাধ্যম