হামলা চালিয়ে যাবে মস্কো, পুতিনে হতাশ ট্রাম্প
Published: 5th, July 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তবে এবার তিনি যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আশাবাদ দিতে পারেননি। উল্টো তাঁকে হতাশ হতে হয়েছে। তিনি জানান, আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুতিন যুদ্ধ থামাতে চাচ্ছেন– মনে হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুই নেতার কথোপকথনের পর ক্রেমলিন জানায়, লক্ষ্য অর্জনে হামলা চালিয়ে যাবে মস্কো।
দুই নেতার ফোনালাপের পর রাতে ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মস্কো। ইউক্রেনের আকাশে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টি ঝরেছে। হামলায় ক্রুজ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে রাশিয়া। এসব হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়েছেন। এর আগে ২৮ জুন রাতের হামলাটিও ছিল ভয়াবহ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিনের অবস্থানের কারণে কূটনীতির মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের মার্কিন প্রচেষ্টা মূলত স্থগিত হয়ে গেল। এই অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুতিনের ওপর চাপ বাড়ানোর পরামর্শ এসেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর অভিযোগও উঠেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এএফপিকে বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। কারণ, তারা কূটনৈতিক উপায়ে লক্ষ্য অর্জন করতে অক্ষম। বিশেষ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আমরা লক্ষ্য অর্জনে আগ্রহী এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে সংকটের সমাধান হওয়াই ভালো। কিন্তু যতক্ষণ না তা সম্ভব হয়, রাশিয়া বিশেষ অভিযান চালিয়ে যাবে। পুতিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, দুই নেতার মধ্যে এক ঘণ্টার মতো কথা হলেও মুখোমুখি বসার ব্যাপারে তাদের কথা হয়নি।
ইউক্রেনের অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারেও কথা বলেছেন ট্রাম্প। আইওয়ার উদ্দেশে ওয়াশিংটন ত্যাগ করার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করিনি। তবে জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনে অনেক বেশি অস্ত্র দিয়েছিল। এতে মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করছি। বাইডেনের মতো অস্ত্র সরবরাহ করে দেশকে খালি করে ফেলা যাবে না।’
তবে কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে আনা হয়েছে। এই অবস্থায় ইউক্রেনের বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রাশিয়ার হামলা আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘মূল সমস্যার সমাধান হলেই কেবল তিনি যুদ্ধ বন্ধ করবেন।’ পুতিন মূলত ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে দেখতে চান না।
অন্যদিকে ন্যাটো নেতারা বলছেন, রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ইউক্রেন দুর্বল হয়ে পড়বে। জার্মানি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্যাট্রিয়ট কিনে ইউক্রেনে সরবরাহ করা সম্ভব। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল যুদ্ধবন্দিদের আরেকটি দল বিনিময় করেছে মস্কো-কিয়েভ।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফোনালাপ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা করেছে মস্কো। বিস্ফোরণ, ভারী মেশিনগানের গোলাবর্ষণ হয়েছে। রাশিয়া রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন পাঠায়। একাধিক ভবন ও আবাসিক এলাকায় সেগুলো আঘাত করেছে। কিয়েভ শহর ও সামরিক কর্তৃপক্ষের মতে, ১৩ ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন আহত হয়েছেন। দেশটির বিমানবাহিনীর মতে, ইউক্রেনে রেকর্ড ৫৩৯টি রাশিয়ান ড্রোন ছোড়ে। এর মধ্যে ৪৭৬টি ধ্বংস করা হয়। ১১টি ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোরেও শহরজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। হাজার হাজার বাসিন্দা পাতাল রেলস্টেশন, ভূগর্ভস্থ পার্কিং লট কিংবা বাঙ্কারে রাত কাটান।
নেদারল্যান্ডসের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুবেন ব্রেকেলম্যানস মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া ব্যাপক রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করছে। ডাচ ও জার্মান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে বহু প্রমাণ আছে। তাঁর দাবি, রাশিয়া আগের চেয়ে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র স ত র সরবর হ এই অবস থ য় ইউক র ন র ব যবহ র লক ষ য বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
সিএমএসএমই ঋণ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা
তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণে রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, আর রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামে ১৪০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে, একই দরে গত ১৫ জুলাই ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। আর ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বে অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।
গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ