শুক্রবার বিকেল ৩টা। নগরীর বহদ্দারহাট মোড়। বহদ্দরহাট মসজিদের পাশে সারি সারি ব্যাটারিচালিত ও প্যাডেলচালিত  রিকশা। রয়েছে তিন-চারটি সিএনজি অটোরিকশা ও অটোটেম্পো। বহদ্দারহাট থেকে চাঁন মিয়া সড়ক হয়ে যেতে হয় শমসেরপাড়া। এখানে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট। মধ্যবয়সী স্বামীকে নিয়ে এ হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার জন্য যেতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন এক নারী। দূরত্ব বড়জোর দেড় কিলোমিটার। এ দূরত্বে আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন রিকশা ভাড়া প্রায় তিন গুণ, ৮০ টাকা। 
এত বেশি ভাড়া কেন দাবি করছেন– এমন প্রশ্নে রিকশাচালক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘একবার রাস্তাটা দেখেন। কী অবস্থা। এই রাস্তা দিয়ে তো রিকশা চালিয়ে যাওয়া যাবে না। টেনে টেনে নিয়ে যেতে হবে। কষ্ট করে নিয়ে যেতে হবে; তাই ভাড়াও বেশি লাগবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে এ রিকশাচালক বলেন, ‘একসময় প্যাডেলচালিত রিকশা চালাতাম। এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছি। শমসেরপাড়া হাসপাতালে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়ও যাত্রী আনা-নেওয়া করেছি। এখন তিন গুণ বেশি পরিশ্রম হয়। সময়ও লাগে বেশি। তাই ভাড়াও দুই গুণ নিচ্ছি।’ 
ইকরাম হোসেন নামে শমসেরপাড়ার এক বৃদ্ধ বাসিন্দা জানান, বহদ্দারহাট মোড় থেকে শমসেরপাড়া পর্যন্ত কিছুদিন আগেও টেম্পো ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন সড়কের অবস্থা খারাপের কারণে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। 
নগরীর বহদ্দারহাট মোড় থেকে হাজীরপুল প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা। অনেকটাই ঘিঞ্জি এই এলাকায় বসবাস করেন হাজার হাজার মানুষ। এসব মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা হচ্ছে চাঁন মিয়া সড়ক। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। তার মধ্যে অবশ্য রিকশার সংখ্যাই বেশি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সড়কটির ভয়াবহ চিত্র। এমনিতে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। তার ওপর সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। সড়কে কার্পেটিংয়ের চিহ্নমাত্র নেই। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোড়-বড় গর্ত। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সড়কের দুরবস্থা ও জলাবদ্ধতার কারণে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
চাঁন মিয়া সড়কের ফরিদাপাড়া এলাকার দোকান ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বহদ্দাহাট ও আশপাশের এলাকা। এমন এলাকায় এ রকম ভয়াবহ ভাঙাচোরা রাস্তা মানা যায় না। মানুষের কষ্টের সীমা নেই। বিত্তবানরা এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ নিম্ন ও মধ্যবিত্তের। তারা অসহায়, দুর্ভোগ সঙ্গী করে দিন পার করছেন।’
দীর্ঘদিন পর বহদ্দারহাট মোড় থেকে সড়কটিতে ইটের কার্পেটিং করছে সিটি করপোরেশন। কিছু শ্রমিক সড়কে সামান্য বালুর আস্তরণ দিয়ে তার ওপর ইট বসাচ্ছেন। কয়েক দিন ধরে এই কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকশ’ মিটার ইটের কার্পেটিং করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, বৃষ্টি হতেই কার্পেটিং দেবে যাচ্ছে। কাদা আর বালু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত হলেই কার্পেটিং করা সড়কটি আগের চেহারায় ফিরে যাবে।
চাঁন মিয়া সড়কে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক বছর পর এই সড়কটিতে সিটি করপোরেশনের নজর পড়েছে। কিন্তু যেভাবে সড়কটি ইটের কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি সুফল পাওয়া যাবে না। ইটগুলো উঠে গিয়ে, ভেঙে চুরমার হয়ে সড়কটিকে আরও নাজুক করে দেবে। সময় নিয়ে ভালোভাবে পাথরের কার্পেটিং করা ছাড়া এটিকে যানবাহন চলাচল উপযোগী করা যাবে না।’
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে যায় বহদ্দারহাট মোড়সহ আশপাশের এলাকা। নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বৃষ্টির পানি আটকে যায় মোড়টিতে। এতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা নিরসনে নালার প্রশস্ততা বাড়ানো এবং এই নালাকে দুটি খালের (চশমা ও মীর্জা খাল) সঙ্গে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নালার ওপর নির্মিত সিটি করপোরেশনের বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে রাত-দিন সমানে কাজ চলছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় এ কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড। এই প্রকল্পের কাজের কারণে চাঁন মিয়া সড়কে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক প রকল প র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান