চালকের কষ্ট তিন গুণ তাই গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ
Published: 5th, July 2025 GMT
শুক্রবার বিকেল ৩টা। নগরীর বহদ্দারহাট মোড়। বহদ্দরহাট মসজিদের পাশে সারি সারি ব্যাটারিচালিত ও প্যাডেলচালিত রিকশা। রয়েছে তিন-চারটি সিএনজি অটোরিকশা ও অটোটেম্পো। বহদ্দারহাট থেকে চাঁন মিয়া সড়ক হয়ে যেতে হয় শমসেরপাড়া। এখানে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট। মধ্যবয়সী স্বামীকে নিয়ে এ হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার জন্য যেতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন এক নারী। দূরত্ব বড়জোর দেড় কিলোমিটার। এ দূরত্বে আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন রিকশা ভাড়া প্রায় তিন গুণ, ৮০ টাকা।
এত বেশি ভাড়া কেন দাবি করছেন– এমন প্রশ্নে রিকশাচালক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘একবার রাস্তাটা দেখেন। কী অবস্থা। এই রাস্তা দিয়ে তো রিকশা চালিয়ে যাওয়া যাবে না। টেনে টেনে নিয়ে যেতে হবে। কষ্ট করে নিয়ে যেতে হবে; তাই ভাড়াও বেশি লাগবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে এ রিকশাচালক বলেন, ‘একসময় প্যাডেলচালিত রিকশা চালাতাম। এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছি। শমসেরপাড়া হাসপাতালে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়ও যাত্রী আনা-নেওয়া করেছি। এখন তিন গুণ বেশি পরিশ্রম হয়। সময়ও লাগে বেশি। তাই ভাড়াও দুই গুণ নিচ্ছি।’
ইকরাম হোসেন নামে শমসেরপাড়ার এক বৃদ্ধ বাসিন্দা জানান, বহদ্দারহাট মোড় থেকে শমসেরপাড়া পর্যন্ত কিছুদিন আগেও টেম্পো ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন সড়কের অবস্থা খারাপের কারণে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
নগরীর বহদ্দারহাট মোড় থেকে হাজীরপুল প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা। অনেকটাই ঘিঞ্জি এই এলাকায় বসবাস করেন হাজার হাজার মানুষ। এসব মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা হচ্ছে চাঁন মিয়া সড়ক। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। তার মধ্যে অবশ্য রিকশার সংখ্যাই বেশি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সড়কটির ভয়াবহ চিত্র। এমনিতে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। তার ওপর সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। সড়কে কার্পেটিংয়ের চিহ্নমাত্র নেই। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোড়-বড় গর্ত। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সড়কের দুরবস্থা ও জলাবদ্ধতার কারণে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
চাঁন মিয়া সড়কের ফরিদাপাড়া এলাকার দোকান ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বহদ্দাহাট ও আশপাশের এলাকা। এমন এলাকায় এ রকম ভয়াবহ ভাঙাচোরা রাস্তা মানা যায় না। মানুষের কষ্টের সীমা নেই। বিত্তবানরা এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ নিম্ন ও মধ্যবিত্তের। তারা অসহায়, দুর্ভোগ সঙ্গী করে দিন পার করছেন।’
দীর্ঘদিন পর বহদ্দারহাট মোড় থেকে সড়কটিতে ইটের কার্পেটিং করছে সিটি করপোরেশন। কিছু শ্রমিক সড়কে সামান্য বালুর আস্তরণ দিয়ে তার ওপর ইট বসাচ্ছেন। কয়েক দিন ধরে এই কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকশ’ মিটার ইটের কার্পেটিং করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, বৃষ্টি হতেই কার্পেটিং দেবে যাচ্ছে। কাদা আর বালু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত হলেই কার্পেটিং করা সড়কটি আগের চেহারায় ফিরে যাবে।
চাঁন মিয়া সড়কে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক বছর পর এই সড়কটিতে সিটি করপোরেশনের নজর পড়েছে। কিন্তু যেভাবে সড়কটি ইটের কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি সুফল পাওয়া যাবে না। ইটগুলো উঠে গিয়ে, ভেঙে চুরমার হয়ে সড়কটিকে আরও নাজুক করে দেবে। সময় নিয়ে ভালোভাবে পাথরের কার্পেটিং করা ছাড়া এটিকে যানবাহন চলাচল উপযোগী করা যাবে না।’
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে যায় বহদ্দারহাট মোড়সহ আশপাশের এলাকা। নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বৃষ্টির পানি আটকে যায় মোড়টিতে। এতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা নিরসনে নালার প্রশস্ততা বাড়ানো এবং এই নালাকে দুটি খালের (চশমা ও মীর্জা খাল) সঙ্গে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নালার ওপর নির্মিত সিটি করপোরেশনের বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে রাত-দিন সমানে কাজ চলছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় এ কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড। এই প্রকল্পের কাজের কারণে চাঁন মিয়া সড়কে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক প রকল প র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
কাজ না করেই অর্ধেক টাকা তুলে নেন ঠিকাদার
সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রতিবাদে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এমনকি ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। গতকাল সোমবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের সূর্য নারায়ণপুর এলাকার কর্মসূচিতে শতাধিক মানুষ অংশ নেন। তারা সড়কটির কাজ যথাযথভাবে করার দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সূর্য নারায়ণপুরের আব্দুর রশিদের বাড়ি থেকে বক্তারটেক পর্যন্ত ২৮০ ফুট দীর্ঘ রাস্তাটিতে ইট বিছিয়ে (সলিং) ৮ ফুট চওড়া করার কথা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় এ কাজের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সদর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আল আমিন পালোয়ান এ কাজের ঠিকাদার। কিন্তু এলাকাবাসী সড়কটিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার ও বালু না দিয়েই কাজ শুরুর অভিযোগ করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আল আমিন পালোয়ান একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। যে কারণে গত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর একাধিক মামলায় আসামি হয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু সম্প্রতি এলাকায় এসে ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। নিম্নমানের সামগ্রী বসানোর প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির গুজব ছড়িয়েছেন তিনি। এমনকি নানা মাধ্যমে আল আমিন হুমকিও দিচ্ছেন।
সেখানে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার কাজল, মো. রানা শেখ প্রমুখ। তাদের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আল আমিন পালোয়ানের নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ মেলেনি।
কাপাসিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. তামান্না তাস্নীম বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শনে যেতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।