জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার এক মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে ও একই থানার অপর দুটি মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুম মিয়া এ নির্দেশ দেন।

এদিন সকাল ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে আদালতের হাজতখানা থেকে তাঁদের সিএমএম আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এ সময় দীপু মনির হাতে তসবি দেখা যায়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তসবি জপছিলেন তিনি। শুনানি শেষে আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার সময়ও দীপু মনির হাতে তসবি দেখা যায়।

অন্যদিকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পলক কথা বলছিলেন তাঁর আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিনের সঙ্গে। কথা বলার পরেই তিনি আদালতের বাইরে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। তার চোখে পানি দেখে বারান্দায় থাকা স্বজনরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আজ ঢাকার সিএমএম আদালতে এমন চিত্র দেখা গেছে। 
আইনজীবী ফারজানা জানান, আদালতে এসে পলক তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে শোকাহত হয়ে কেঁদেছেন। এ সময় তার মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরানো ছিল। পরে তাকে কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। 

গত বছর আগস্টে দীপু মনি ও পলককে রাজধানী থেকে আটক করে পুলিশ। পরে বিভিন্ন হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়।

নতুন মামলায় আনিসুল-সালমানসহ ৯ গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক মামলায় শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুম মিয়ার আদালত শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখান।  

গ্রেপ্তার দেখানো অন্যরা হলেন- সাবেকমন্ত্রী আনিসুল হক, ডা.

দীপু মনি, আমির হোসেন আমু, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান। তাদের মধ্যে সালমান এফ রহমান, দীপু মনি ও আমু এক মামলায়, আনিসুল হক, পলক, জাহাঙ্গীর, শহিদুল ও আবুল হাসান দুই মামলায় এবং মনুকে আট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ প মন

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরের এমএম কলেজের ক্লাবগুলো যেভাবে শিক্ষার্থীদের তৈরি করছে

মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না রোকেয়া তাসমিমের। কলেজের ইতিহাস ক্লাবে যদি যুক্ত না হতেন, রোকেয়ার হয়তো জানাই হতো না, চমৎকার উপস্থাপনাও তিনি করতে জানেন। রোকেয়া পড়েন যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ইতিহাস বিভাগে। দ্বিতীয় বর্ষে।

রোকেয়া তাসমিমের মতো এমন আরও অনেক শিক্ষার্থীই নিজেকে ‘আবিষ্কারের’ সুযোগ পাচ্ছেন ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে। কলেজের ১৯টি বিভাগের মধ্যে অন্তত ৯টি বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই নিজস্ব ক্লাব আছে। বিভাগের শিক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতায় শুধু যে ক্লাসরুমের বাইরেও বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখার চর্চা হচ্ছে, তা নয়, এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করছেন নেতৃত্বের গুণ।

ইতিহাসের ইতিবাচক শক্তি

গত ১৫ অক্টোবর ঢুঁ মেরেছিলাম এমএম কলেজের ইতিহাস বিভাগে। দেখা গেল একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী বিভাগের সেমিনার রুমে বসে আড্ডায় মেতেছেন। একফাঁকে বিভাগের শিক্ষার্থী ও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় আবৃত্তি করে শোনালেন নিজের লেখা রুবাই (চার পঙ্‌ক্তির কবিতা)। একটি করে রুবাই শেষ হচ্ছিল, আর তাঁর সহপাঠীরা বলে উঠছিলেন, ‘সাধু সাধু’! এরপর দ্বিতীয় বর্ষের রোকেয়া তাসমিম শোনালেন গান। তালিও পেলেন তুমুল।

আরও পড়ুনঘরে শান্তি বজায় রাখতে কথাবার্তায় সংযত থাকতে হবে কোন রাশির জাতককে০১ নভেম্বর ২০২৫

বিভাগের শিক্ষার্থী লিমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের মাধ্যমেই প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে। নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বেড়েছে। ক্লাবের উদ্যোগে কখনো আমরা বেরিয়ে পড়েছি রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী সুন্দরবনের ধুমঘাটে। আবার কখনো ভরত রাজার দেউল পরিদর্শনে। সেখান থেকে ফিরে ইতিহাসের খোঁজে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আমাদের মধ্যে গবেষণামুখী হওয়ার উৎসাহ বেড়েছে। সেমিনার পেপার তৈরির মতো জটিল বিষয় আমরা রপ্ত করেছি। ক্লাব আছে বলেই প্রতিদিন একধরনের রোমাঞ্চ নিয়ে ক্যাম্পাসে আসি, পাঠ গ্রহণ করছি।’

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, এই কলেজের ১৯টি বিভাগের মধ্যে শুরুতে ইতিহাস বিভাগই ক্লাব চালু করেছিল—২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর। ক্লাবের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ভ্রমণ, ‘রিসার্চ মেথডোলজি’ শিরোনামে দিনব্যাপী কর্মশালা, ইফতার পার্টি, টি পার্টি ও পিঠা উৎসবের মতো নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। দুর্গত মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে কাজ করছে। পড়ালেখায় আনন্দ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গবেষণামুখী হয়েছে। সেমিনার, ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণসহ অনুষ্ঠান আয়োজনে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়, তা-ও তারা শিখেছে। জড়তা কাটিয়ে কথা বলার দক্ষতা অর্জন করেছে।’

গণিতের গতি

স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতভীতি দূর করতে দুর্বার গতিতে কাজ করে যাচ্ছে এমএম কলেজের গণিত ক্লাব। ক্লাবের উদ্যোগে ইতিমধ্যে যশোর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে অলিম্পিয়াড। অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া সেরা ১০ জন সনদ পেয়েছেন। তিনজন জিতেছেন পুরস্কার।

গণিত ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গণিতভীতি দূর করতেই আমরা কাজ করি।’ ক্লাবের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গণিতের জটিল সমস্যা তুলে দিয়ে আবার সেটির সমাধানও দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া পিঠা উৎসব, বার্ষিক বনভোজন ও মাসিক বৈঠকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করা হয়।

শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভাগের ক্লাবগুলো অবদান রাখছে। এ ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বরাবরই কলেজ কর্তৃপক্ষ উৎসাহ দিয়েছে। প্রতিটি বিভাগ যেন সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্লাব গড়ে তোলে, সে বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আছে।এস এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজফিন্যান্স ক্লাবের উদ্যোগে ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরের এমএম কলেজের ক্লাবগুলো যেভাবে শিক্ষার্থীদের তৈরি করছে