আসামির বাসা থেকে ব্যাংক চেক আনা হলেও নেই জব্দ তালিকায়, এডির অফিস সিলগালা
Published: 11th, July 2025 GMT
গাজীপুরে টঙ্গীতে অভিযানে গিয়ে আসামির বাসা থেকে ব্যাংক চেক বই নেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মারফিয়া আফরোজ ও তাঁর দল। তবে সেই চেক বই জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। এ নিয়ে মারফিয়া আফরোজ ও তাঁর আভিযানিক দলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ডিএনসি। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় তাঁর কার্যালয়টি সিলগালা করা হয়। এ ছাড়া পরদিন মারফিয়াসহ চারজনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে (স্ট্যান্ড রিলিজ) দেওয়া হয়েছে। অন্য তিনজন হলেন– এসআই জান্নাতুল ফেরদাউস, এএসআই আতাউল হক ও সিপাহী সোহেল রানা। তাদের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২২ জুন মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে একটি দল টঙ্গীতে মাদকবিরোধী অভিযানে যায়। টঙ্গী সরকারি কলেজ এলাকা থেকে রমিজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে ইয়াবাসহ আটক করেন তারা। পরে দুপুরে তাঁকে নিয়ে দক্ষিণ খাঁপাড়ায় ৭৩/৪ নম্বর বাড়ির তিনতলায় রমিজ উদ্দিনের ভাড়া বাসায় যায় আভিযানিক দলটি। যদিও এ ঘটনায় পরদিন টঙ্গী পশ্চিম থানায় করা মামলায় রমিজকে বাসা থেকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, বাসায় রমিজ উদ্দিনের লুঙ্গির কোচরে থেকে পাঁচ হাজার পিস এবং ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ার থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এই মামলার বাদী সহকারী পরিচালক মারফিয়া আফরোজ। অভিযানে তিনিসহ মোট ৯ জন অংশ নেন। অপর আটজন হলেন– বিভাগীয় পরিদর্শক শাহরিয়ার শারমিন, এসআই আবদুল আল মামুন ও জান্নাতুল ফেরদাউস, এএসআই আতাউল, সিপাহি সোহেল, আব্দুর রহমান, সাইমুম হাসান খান ও লুৎফর রহমান।
সূত্র জানিয়েছে, আসামি রমিজের বাসা থেকে তাঁর সই করা ব্যাংক হিসাবের চেক আনার অভিযোগ ওঠে সহকারী পরিচালক মারফিয়া আফরোজের বিরুদ্ধে। সেটি কত টাকার চেক– নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ আসার পর পরিচালক (অপারেশনস্) বশির আহমেদ, অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ বদরুদ্দীন তদন্ত শুরু করেন। তারা গত মঙ্গলবার গেণ্ডারিয়া গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান। তদন্তের স্বার্থে মারফিয়া আফরোজের অফিস কক্ষ সিলগালা করে দেন তারা।
বুধবার তারা আবারও তদন্তের জন্য গেণ্ডারিয়া যান। মারফিয়া আফরোজকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা। এর পর দুপুরে চারতলায় গিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে যান তিনি। তাঁকে দয়াগঞ্জে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আভিযানিক দলে থাকা আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে সহকারী পরিচালকের কক্ষের সিলগালা ভেঙে পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালক ভেতরে তল্লাশি করেন। পরে বিকেলে আবারও অফিস কক্ষটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। অফিস কক্ষ থেকে বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল গোয়েন্দা বিভাগের এসআই জান্নাতুল ফেরদৌসকে। কিন্তু অভিযোগের পর তাঁকে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করায় পরে ঢাকা দক্ষিণের পরিদর্শক লোকমান হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মারফিয়া আফরোজ চেক বইয়ের কথা স্বীকার করে বৃহস্পতিবার রাতে সমকালকে বলেন, ‘টঙ্গীতে রমিজের বাসায় অভিযানের সময় কিছু ডকুমেন্ট পাওয়া যায়। সেগুলো এনে আমার কাছে রাখি। জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। কাজের চাপে ডকুমেন্টগুলো আর দেখাও হয়নি। বৃহস্পতিবার সিপাহি সোহেল রানা ডকুমেন্ট খুলে দেখেন, তার মধ্যে একটি চেক বই। ২-৩টা চেকের পাতায় সই করা। তখন আমি সোহেলকে চেক বইটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জান্নাতুল ফেরদৌসকে দিয়ে দিতে বলি। কিন্তু সে আমার ড্রয়ারে রেখে দেয়। পাঁচ দিন ছুটি নিয়ে আমি শুক্রবার সুনামগঞ্জে যাই। মঙ্গলবার জানতে পারি, আমার অফিস সিলগালা করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে সোহেল রানা ফোন দিয়ে বলে, ম্যাডাম, ভুল করে ফেলেছি। চেক বইটা তো আপনার ড্রয়ারে রয়েছে। তখন আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে আসতে বলেন। বুধবার দুপুর ১২টায় আমি অফিসে আসি। আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়।’
মারফিয়া আফরোজ আরও বলেন, ‘আমি জেনে-বুঝে চেক নিয়ে আসিনি। ডকুমেন্টসের মধ্যে সিডিআর (মোবাইল কললিস্ট) পাওয়া যায়। চেক বই দিয়ে কোনো অর্থ লেনদেন করা হয়নি।’
ডিএনসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ব্যক্তির অপরাধের দায়ভার প্রতিষ্ঠান নেবে না। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এডি মারফিয়া আফরোজের কার্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে পরিস্থিতি সন্তোষজনক মনে না করায় সিলগালা করে দেন।’
কার্যালয় সিলগালা এবং মারফিয়া আফরোজ ও তাঁর টিমের তিনজনকে স্ট্যান্ড রিলিজের কারণ জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এটা প্রশাসনিক কার্যক্রম।’
মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে ডিএনসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আসামি বা তার স্বজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। প্রায়ই এমন অভিযোগ ওঠে কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গত ১৮ জুন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার সাবেক সংরক্ষিত কাউন্সিলর ছালেহা বেগমের বাড়িতে অভিযানে গিয়ে বাসা থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ডিএনসির টাঙ্গাইল জেলা কর্যালয়ের কর্মকর্তা-সিপাহিদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে সোমবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই অভিযোগে বুধবার এএসআই শামীম আল আজাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলমকে কয়েকবার ফোন করা হয় তাঁর অধীন এডির কার্যালয় সিলগালা ও টঙ্গীর অভিযান সম্পর্কে মন্তব্য নেওয়ার জন্য। তবে তিনি ফোন ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে এ ব্যাপারে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব দেননি তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ য ন কর মকর ত র ন কর মকর ত ড এনস র তদন ত র আফর জ র চ ক বই সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নেবে সিআইডি
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে নিহত ১৬ জনের মধ্যে ৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসব মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্ত করা হয়।
তবে পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সব মরদেহই ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে থাকবে।
রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আজ সন্ধ্যায় ৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক চিকিৎসকেরা ওই সব মরদেহ থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সব দাবিদারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করবে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব। পোশাক কারখানার নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে মালিবাগে সিআইডির ল্যাবে যেতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ল্যাবের পরীক্ষক মাসুদ রাব্বি।
রূপনগর থানার এসআই মোখলেছুর বলেন, বাকি মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত পর্যায়ক্রমে করা হবে। তিনি আরও বলেন, ডিএনের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
শিয়ালবাড়ির একটি টিনশেড দোতলা রাসায়নিক গুদামে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগে। গুদামে আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়ে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। সেদিনও সন্ধ্যার পর মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজ দুপুরের দিকে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ৯ জন পুরুষ ও ৭ জন নারীর লাশ এখানে এসেছে। স্বজনেরা চাইলে, আর পুলিশ বা জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে শনাক্ত হওয়া লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া হস্তান্তর করা যাবে।
আরও পড়ুনমিরপুরে আগুন: ১০ জনের লাশ শনাক্তের দাবি স্বজনদের৮ ঘণ্টা আগে