আসামির বাসা থেকে ব্যাংক চেক আনা হলেও নেই জব্দ তালিকায়, এডির অফিস ‘সিলগালা’
Published: 10th, July 2025 GMT
গাজীপুরের টঙ্গীতে অভিযানে গিয়ে আসামির বাসা থেকে চেক বই নিয়ে এলেও তা জব্দ তালিকায় দেখাননি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে (ডিএনসি) ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মারফিয়া আফরোজ। এ ঘটনায় মারফিয়া আফরোজ ও তার টিমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন ডিএনসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরই অংশ হিসেবে ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ওই সহকারী পরিচালকের অফিসকক্ষ সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২২ জুন এডি মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে একটি দল মাদকবিরোধী অভিযানে টঙ্গীতে যায়। রমিজ উদ্দিন (৪৩) নামে এক ব্যক্তিকে ইয়াবাসহ টঙ্গী সরকারি কলেজ এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে দুপুরে রমিজ উদ্দিনকে নিয়ে দক্ষিণ খাঁপাড়ায় তার ভাড়া বাসায় যায় দলটি। যদিও এ ঘটনায় পরদিন টঙ্গী পশ্চিম থানায় করা মামলায় রমিজকে বাসা থেকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, রমিজের কাছ থেকে পাঁচ হাজার ইয়াবা এবং ওয়ার্ডরোব থেকে ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এই মামলার বাদী মারফিয়া আফরোজ। অভিযানে তিনিসহ নয়জন অংশ নেন। তারা হলেন- বিভাগীয় পরিদর্শক শাহরিয়ার শারমিন, এসআই আবদুল আল মামুন ও জান্নাতুল ফেরদাউস, এএসআই আতাউল হক, সিপাই সোহেল রানা, আব্দুর রহমান, সাইমুম হাসান খান ও লুৎফর রহমান।
সূত্রে জানা যায়, আসামি রমিজ উদ্দিনের বাসা থেকে তার সই করা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক আনার অভিযোগ ওঠে মারফিয়া আফরোজের বিরুদ্ধে। পরে এ অভিযোগ যায় ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে। এরপরই ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস্) বশির আহমেদ, অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ বদরুদ্দীন তদন্ত শুরু করেন। তারা মঙ্গলবার গেন্ডারিয়া গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত এডি মারফিয়া আফরোজের অফিসকক্ষ সিলগালা করে দেন তারা। বুধবার তারা ফের তদন্তর জন্য গেন্ডারিয়ায় যান। মারফিয়াকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর দুপুরে চারতলায় গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। তাকে দয়াগঞ্জে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আভিযানিক দলে থাকা আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে বুধবার সহকারী পরিচালকের কক্ষের সিলগালা ভেঙে পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালক ভেতরে তল্লাশি করেন। পরে বিকেলে আবারও অফিসকক্ষটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। অফিস কক্ষ থেকে বেশকিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। এরপর এডি মারফিয়া, এসআই জান্নাতুল ফেরদাউস, এএসআই আতাউল হক ও সিপাই সোহেল রানাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে প্রধান কার্যালয় সংযুক্ত করা হয়।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল গোয়েন্দা বিভাগের এসআই জান্নাতুল ফেরদৌসকে। কিন্তু অভিযোগের পর তাকে প্রধান কার্যালয় সংযুক্ত করায় পরে ঢাকা দক্ষিণের পরিদর্শক লোকমান হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চেক নেওয়ার কথা স্বীকার করে মারফিয়া আফরোজ সমকালকে বলেন, টঙ্গীতে রমিজের বাসায় অভিযানের সময় কিছু ডকুমেন্ট পাওয়া যায়। সেগুলো আমরা নিয়ে আসি। সেগুলো আমার কাছে রাখা হয়। জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। কাজের চাপে ডকুমেন্টগুলো আর দেখাও হয়নি। বৃহস্পতিবার আমার সিপাই সোহেল রানা ডকুমেন্ট খুলে দেখে তার মধ্যে একটি চেক বই রয়েছে। দুই-তিনটা চেকের পাতায় সই করা। তখন আমি সোহেল রানাকে বলি চেকের বইটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জান্নাতুল ফেরদৌসকে দিয়ে দাও। কিন্তু সে আমার ড্রয়ারে রেখে দেয়। পাঁচ দিন ছুটি নিয়ে আমি শুক্রবার সুনামগঞ্জে যাই। মঙ্গলবার জানতে পারি আমার অফিস সিলগালা করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে সোহেল রানা ফোন দিয়ে বলেন, ‘ম্যাডাম ভুল করে ফেলেছি, চেক বইটা তো আপনার ড্রয়ারে রয়েছে। তখন আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি।’
তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে আসতে বলেন। বুধবার দুপুর ১২টায় অফিসে আসি। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়। আমি জেনে বুঝে চেক নিয়ে আসেনি। ডকুমেন্টের মধ্যে সিডিআর (মোবাইল কল লিস্ট) পাওয়া যায় চেক দিয়ে কোনো লেনদেন করা হয়নি।
ডিএনসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ সমকালকে বলেন, ব্যক্তি অপরাধের দায়ভার প্রতিষ্ঠান নেবে না। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ য ন কর মকর ত ড এনস র র অফ স আফর জ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
জাল টাকা বহন: ২ জনের ১৪ বছর কারাদণ্ড
ঝালকাঠিতে জাল টাকা বহনের দায়ে নুপুর বেগম ও জসিম খলিফা নামে দুইজনকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঝালকাঠির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
আরো পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে বিদেশি পিস্তল উদ্ধার
খুলনায় নবজাতক চুরি: নারী গ্রেপ্তার
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আক্কাস সিকদার রায়ের তথ্য জানিয়েছেন। দুই আসামিকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত নুপুর বেগম (৩৫) পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুর এলাকার আল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী এবং জসিম খলিফা (৩৬) ঝালকাঠির সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকার ওয়াজেদ খলিফার ছেলে।
ঝালকাঠি জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহেব হোসেন জানান, ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঝালকাঠি শহরের কবিরাজ বাড়ি রোড থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সূবর্ণ চন্দ্র দের নেতৃত্বে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকার ১৯৬টি জালনোট, ৫০০ টাকার ২০০টি জালনোট ও ২০০ টাকার ৫টি জালনোট জব্দ করা হয়।
এসআই সুবর্ণ চন্দ্র দে বাদী হয়ে দুইজনকে আসামি করে ঝালকাঠি থানায় মামলা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামি নুপুর বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। জসিম খলিফা জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আরো মামলা রয়েছে।
ঢাকা/অলোক/বকুল