হাসিনার শাসন ও পতন নিয়ে প্রথমার ৬ বই
Published: 13th, July 2025 GMT
গণ-অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরেই, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ৬টি বই প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইগুলো হলো: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামানের লেখা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: নতুন পথে বাংলাদেশ (ডিসেম্বর ২০২৪), অধ্যাপক আলী রীয়াজের আমিই রাষ্ট্র: বাংলাদেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র (জানুয়ারি ২০২৫), সাংবাদিক সাজ্জাদ শরিফ সম্পাদিত জুলাই: গণ-অভ্যুত্থানের সাক্ষ্য (জানুয়ারি ২০২৫), অধ্যাপক আসিফ নজরুলের শেখ হাসিনার পতনকাল, গবেষক ও লেখক আলতাফ পারভেজের লেখা লাল জুলাই: চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পথপরিক্রমা (ফেব্রুয়ারি ২০২৫) এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক, অন্তর্বর্তী সরকারের যুব, ক্রীড়া ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার লেখা জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু।
প্রথম বই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: নতুন পথে বাংলাদেশ লিখেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান। তিনি চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে এক নতুন বাস্তবতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এ বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাপক আলী রীয়াজের আমিই রাষ্ট্র: বাংলাদেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র (জানুয়ারি ২০২৫)। এ বইতে লেখক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্বৈরশাসকদের উত্থান কীভাবে হয়, স্বৈরতন্ত্র কীভাবে ব্যক্তিতান্ত্রিক হয়ে ওঠে, বিভিন্ন দেশের দৃষ্টান্তসহ তা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে কীভাবে স্বৈরতন্ত্রের উত্থান ঘটে এবং শেখ হাসিনার আমলে স্বৈরতন্ত্র কীভাবে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছিল, তার বিশদ বর্ণনা ও ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ করেছেন।
জানুয়ারিতেই প্রকাশিত হয়েছে সাজ্জাদ শরিফের সম্পাদনায় জুলাই: গণ-অভ্যুত্থানের সাক্ষ্য নামের বইটি একটি মূল্যবান প্রামাণ্য দলিল। এই বইয়ের লেখাগুলো তৈরি হয়েছে প্রধানত গণ-অভ্যুত্থানের সংগঠক ও নানাভাবে নানা স্তরে অংশগ্রহণকারীদের হাতে। অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নাহিদ ইসলাম, উমামা ফাতেমা, সারোয়ার তুষার—দীর্ঘ লেখক-তালিকার কয়েকটি নাম দেখে বোঝা যায় যে বইটি গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ফসল।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল দীর্ঘ সময় ধরে প্রথম আলোয় নিয়মিতভাবে উপসম্পাদকীয় লিখেছেন। শেখ হাসিনার দেড় দশকের পুরোটা সময়ে যখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে খর্বিত ছিল, সে সময় অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন। তাঁর লেখাগুলো মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের নানা চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রথম আলোয় ২০২০–২৪ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধগুলো থেকে বাছাই করে প্রকাশ করা হয়েছে শেখ হাসিনার পতনকাল নামের বইটি। এ বইয়ের শেষ লেখাটিতে তিনি বর্ণনা করেছেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে তাঁর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা।
গবেষক আলতাফ পারভেজ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এর প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছিলেন। তিনি একজন পরিশ্রমী গবেষক; দেশের প্রায় সব প্রধান সংবাদপত্র ঘেঁটে, অভ্যুত্থানের সংগঠক ও অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে আলাপ করে এবং নিজের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে তিনি লিখেছেন লাল জুলাই: চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পথপরিক্রমা।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক হিসেবে সুপরিচিত। জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু নামে তাঁর লেখা যে বইটি প্রথমা এ বছরের মার্চ মাসে প্রকাশ করেছে, সেটি চব্বিশের সফল গণ-অভ্যুত্থানের আদ্যোপান্ত নিয়ে একজন সম্মুখযোদ্ধার অকপট, আন্তরিক টেস্টামেন্ট বা জবানবন্দি, যা শুভবাদী রাজনীতিসচেতন যেকোনো তরুণমনকে আবেগাপ্লুত করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব রতন ত র কর ছ ন প রথম স গঠক
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা চালিয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, গাজার যুদ্ধবিরতি হলেও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাঁর দেশের দায়ের করা মামলার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। গতকাল মঙ্গলবার কেপটাউনের পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গাজায় জাতিগত নিধনের অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলাটি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে তা সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২৩ সালে শুরু করা মামলাটি চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্পে অটল রয়েছে।
পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে রামাফোসা বলেন, ‘যে শান্তিচুক্তি হয়েছে, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান মামলার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মামলাটি দায়ের করে। দেশটির অভিযোগ, গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুনইসরায়েলের আরও ৪ জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করল হামাস৬ ঘণ্টা আগে২০২৪ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ৫০০ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত আবেদন দাখিল করে। ইসরায়েলের পাল্টা যুক্তি জমা দেওয়ার শেষ সময় ২০২৬ সালের ১২ জানুয়ারি। ২০২৭ সালে মৌখিক শুনানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৭ সালের শেষ দিকে বা ২০২৮ সালের শুরুতে চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত তিনটি অস্থায়ী নির্দেশ জারি করেছে। এর আওতায় ইসরায়েলকে জাতিগত নিধন বন্ধ ও গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর সুযোগ দিতে বলা হয়েছে। তবে ইসরায়েল অনেকাংশেই এই নির্দেশগুলো মানতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ৫০০ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত আবেদন দাখিল করে। ইসরায়েলের পাল্টা যুক্তি জমা দেওয়ার শেষ সময় ২০২৬ সালের ১২ জানুয়ারি। ২০২৭ সালে মৌখিক শুনানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৭ সালের শেষ দিকে বা ২০২৮ সালের শুরুতে চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হতে পারে।মামলা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রামাফোসা যে ঘোষণা দিয়েছেন তা নিয়ে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা, ক্ষতিপূরণ এবং পুনরাবৃত্তি রোধের নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো শান্তিই টেকসই নয়।’
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানশেজ ইসরায়েলের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তিনিও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। স্প্যানিশ রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির মানে ইসরায়েলের দায়মুক্তি হতে পারে না। এখানে দায়মুক্তির সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের ওপর কেন হামাস এতটা আস্থা রাখছে২১ ঘণ্টা আগেস্যানশেজ মনে করেন, জাতিগত নিধনের ঘটনায় মূল দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ কিছু মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ করেছে। গত মাসে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি তদন্ত কমিশন বলেছে, গাজায় ইসরায়েল জাতিগত নিধন চালিয়েছে।
তবে গাজায় জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।
স্পেন, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক ও কলম্বিয়াসহ কিছু দেশ ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন দিয়েছে বা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা দ্য হেগ গ্রুপ নামের একটি জোটে সহসভাপতিত্ব করছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গঠিত এই জোটটি আইনি, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনার চেষ্টা করছে।