Prothomalo:
2025-11-03@00:30:49 GMT

গণিতে ইবনে হাইমের অবদান

Published: 23rd, July 2025 GMT

ইবনে হাইম মাকদিসি ছিলেন বিখ্যাত ইসলামবেত্তা ইবনে হাজার আসকালানির (রহ.) শিক্ষক। ফিলিস্তিনের ইতিহাসে অসংখ্য পণ্ডিত ইসলামি জ্ঞান ও সংস্কৃতির অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন, ইবনে হাইম তাঁদের অন্যতম।

ইবনে হাজার (রহ.) তাঁর সম্পর্কে বলেন, তিনি গণিত ও ‘ফারায়েজ’ শাস্ত্রে সমসাময়িকদের তুলনায় ছিলেন শ্রেষ্ঠ, আর এ জন্য দূরদূরান্ত থেকে মানুষ তাঁর কাছে জ্ঞান অর্জনের জন্য আসত। (ইবনে হাজার, ইনাবা, ১৯৯৪, ২/৫২৫)

ইবনে হাইম একাধারে ফিকহ, গণিত, ব্যাকরণ, কবিতা ও ফারায়েজ (উত্তরাধিকার হিসাব) বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ফারায়েজ শাস্ত্রে বিশেষ দক্ষতার কারণে তিনি ইবনে হাইম আল-ফারায়েজি নামেও পরিচিত ছিলেন।

তিনি গণিত এবং উত্তরাধিকার হিসাবে সমসাময়িকদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ছিলেন, যাঁর জন্য দূরদূরান্ত থেকে মানুষ তাঁর কাছে জ্ঞান অর্জনের জন্য আসতেন।ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.

), ইনাবা, ১৯৯৪, ২/৫২৫

তাঁকে জেরুজালেমের পণ্ডিত বলা হলেও তাঁর জন্ম হয় কায়রোতে আল-কারাফা আল-সুগরা এলাকায় ৭৫৩ বা ৭৫৬ হিজরি (১৩৫২ বা ১৩৫৪ খ্রি.) সালে। পুরো নাম শিহাব আল-দীন আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইমাদ ইবনে আলী আল-কারাফি আল-মাকদিসি।

আরও পড়ুনপৃথিবীতে মহানবী (সা.)–র অবদান: ১৩০ মার্চ ২০২৩

বেড়ে ওঠেন জেরুজালেমে এবং সেখানেই থিতু হন। মুকাদ্দাস বা পবিত্র ভূমির সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তাঁর নাম হয় ‘মাকদিসি’। তিনি ৮১৫ হিজরি (১৪১২ খ্রি.) সালে জেরুজালেমে মৃত্যুবরণ করেন এবং মামান আল্লাহ কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। (আল-উলায়মি, আব্দ আল-রহমান ইবনে মুহাম্মদ, আল-উনস আল-জালিল বি-তারিখ আল-কুদস ওয়া আল-খালিল, মিসর: আল-মাতবাআ আল-ওয়াহাবিয়্যা, ১২৮৩ হিজরি, ২/৪৫৫)

শৈশবে তিনি কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন। এরপর হাদিস শেখেন এবং আরবি ভাষা ও ধর্মীয় বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন। তিনি কায়রোর জামে আজহারের মজলিসে অংশ নেন। তারপর তরুণ বয়সে জেরুজালেমে চলে যান। যেখানে তিনি সিরাজ আল-দীন আল-বুলকিনি (১৩২৪-১৪০২), আবু আল-হাসান আল-জালাওয়ি আল-মালিকি (মৃ. ১৩৮১), আল-জামাল আল-আমিউতি (১৩১৫-১৩৮৮) প্রমুখের মতো বিখ্যাত পণ্ডিতদের অধীনে শিক্ষাগ্রহণ করেন।

ইবনে হাইম ফিকহ, গণিত, ব্যাকরণ ও কবিতায় অসাধারণ জ্ঞান অর্জন করেন। জটিল গণিত ও বৈজ্ঞানিক সমস্যাকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করার অসামান্য ক্ষমতা ছিল তার। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ও শিক্ষাদানের দক্ষতা তাঁকে জেরুজালেমের পণ্ডিতদের মধ্যে সম্মানিত করে এবং তিনি আল-সালিহিয়া স্কুলের প্রধান নিযুক্ত হন (আল-হাসানি, সালিম, ইন অনার অব ইবনে হাইম: স্কলার অ্যান্ড ম্যাথমেটিশিয়ান অব জেরুজালেম, প্রকাশিত ২৬ জুন ২০২৫)।

ইবনে হাইম ফিকহ, গণিত, ব্যাকরণ ও কবিতায় অসাধারণ জ্ঞান অর্জন করেন। জটিল গণিত ও বৈজ্ঞানিক সমস্যাকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করার অসামান্য ক্ষমতা ছিল তার।আরও পড়ুনইউরোপের নির্মাণে ইসলামের অবদান২৭ আগস্ট ২০২৩গণিতে অবদান

বিশেষ করে উত্তরাধিকার হিসাব (ফারায়েজ) ও বীজগণিতে ইবনে হাইমের গণিতে অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি সমকালীন সমাজের জন্য ব্যবহারিক গণিতের দিকে মনোযোগ দেন, যা ইসলামি উত্তরাধিকার আইনের জটিল হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো।

তাঁর গণিতের কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুরশিদাত আল-তালিব ইলা আসনা আল-মাতালিব ফি ইলম আল-হিসাব, যা তিনি ২৭ বা ৩০ বছর বয়সে (৭৮৩ হি./১৩৮১ খ্রি.) সম্পন্ন করেন। এই গ্রন্থে তিনি পূর্ণ সংখ্যা, ভগ্নাংশ এবং আনুপাতিক সংখ্যার হিসাব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি এটি সংক্ষিপ্ত করে নুযহাত আল-নুযযার ফি সিনায়াত আল-গুবার নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে ডাস্ট বোর্ড হিসাব (অর্থাৎ বালুর ওপর হিসাবের পদ্ধতি) নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

তাঁর অন্যান্য গণিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে পূর্ণ সংখ্যার গুণ, ভাগ ও ভগ্নাংশবিষয়ক আল-লাম ফি আল-হিসাব, ইবনে আল-বান্না আল-মাররাকুশির বীজগণিত ও আনুপাতিক সংখ্যা নিয়ে রচনার সংক্ষিপ্তসার আল-হাওয়ি ফি ইলম আল-হিসাব, মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা পৃথক করার পদ্ধতি সম্পর্কে লেখা রিসালাহ ফি আল-গিরবাল, বীজগণিতের অজানা মান গণনার পদ্ধতি নিয়ে রচিত ৫৯টি ছন্দোবদ্ধ পঙ্‌ক্তির একটি কাব্য আল-মুকনি ফি আল-জাবর ওয়া আল-মুকাবালাহ প্রভৃতি।

উত্তরাধিকার হিসাবে অবদান

ইবনে হাইমের উত্তরাধিকার হিসাবে অবদান ইসলামি আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ইসলামি উত্তরাধিকার আইন (ইলম আল-ফারায়েজ) জটিল হিসাবের ওপর নির্ভরশীল, যা সম্পত্তি বণ্টনের জন্য সঠিক গণনার প্রয়োজন। তিনি এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন, যা তার সময়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আল-তুহফাহ আল-কুদসিয়্যাহ ফি ইখতিসার আল-রাহবিয়্যাহ। গ্রন্থটি মিসরের জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে (নং–৩৯৬৪ জে, ১৪৫৭ খ্রি.)। এ ছাড়া মরক্কোর রাবাত আল-ফাতহ গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত (নং–২১৫/১৫৫) আরেকটি গ্রন্থ হলো আল-শুব্বাক (আল-মুনাসাখাত বি আল-জাদওয়াল)।

আরও পড়ুনটিকাদানে ওসমানিয়া নারীদের অবদান১৬ জুন ২০২৫কেবল গণিতবিদই ছিলেন না, তিনি ফিকহ, তাফসির ও ব্যাকরণেও অসাধারণ অবদান রেখেছেন। ফিকহ ও উসুলে ফিকহের অন্তত পাঁচটি গ্রন্থ লিখেছেন। কবিতায়ও দক্ষ ছিলেন।অন্যান্য শাস্ত্রে

ইবনে হাইম কেবল গণিতবিদই ছিলেন না, তিনি ফিকহ, তাফসির ও ব্যাকরণেও অসাধারণ অবদান রেখেছেন। ফিকহ ও উসুলে ফিকহের অন্তত পাঁচটি গ্রন্থ লিখেছেন তিনি। ফিকহের আর্থিক লেনদেন বিষয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি কোরআনের অপরিচিত শব্দের তাফসির বিষয়েও গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি কবিতায়ও দক্ষ ছিলেন এবং তাঁর একটি দিওয়ান (কবিতার সংকলন) রয়েছে।

তাঁর গ্রন্থসমূহ মিসরের জাতীয় গ্রন্থাগার, আল-জাহিরিয়া গ্রন্থাগার, তিউনিসিয়ার জাতীয় গ্রন্থাগার এবং তুরস্কের বিভিন্ন গ্রন্থাগার আজও সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতিটি গ্রন্থের ওপর একাধিক টীকা ও ব্যাখ্যাগ্রন্থও প্রকাশ পেয়েছে, যা সমকালে তাঁর কাজের প্রভাব ও জনপ্রিয়তার সাক্ষ্য দেয়।

উল্লেখযোগ্য ছাত্র

ইবনে হাইমের শিক্ষাদানের প্রভাব প্রকাশ পায় তাঁর ছাত্রদের মাধ্যমে। বিখ্যাত হাদিস পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক ইবনে হাজার আসকালানি (১৩৭১-১৪৪৯) ছিলেন তাঁর সরাসরি ছাত্র। এবং ইবনে হাইম সম্পের্ক বেশির ভাগ তথ্যও আসকালানির ‘ইনাবা’ থেকে জানা যায়।

এ ছাড়া শাফিয়ি ফকিহ আহমদ ইবন হুসায়ন আল-রামলি আল-মাকদিসি (১৩৩২/১৩৭৩-১৪৫০) এবং মালিকি ফিকহ ও বিচারক মুহাম্মদ ইবনে আহমদ শামস আল-দীন আল-বিসাতিও (১৩৫৮-১৪৩৮) তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

সূত্র: মুসলিম হেরিটেজ

আরও পড়ুন সাহাবির অবদান ও ত্যাগের গল্প০৯ নভেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ রন থ গ র ব য করণ ও গ রন থ র র অবদ ন আসক ল ন আল ম ক আল হ স ন কর ন ল গণ ত গণ ত ও র জন য ন ইবন দ ইবন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ