ইবি শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত ও বিচারের দাবিতে একাট্টা
Published: 23rd, July 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠন। তারা আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নেতৃত্বে যৌক্তিক সব দাবি জানাতে একাত্মতা পোষণ করেছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তারা। এ সময় চলমান আন্দোলন নিয়ে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশা স্পষ্ট করেছেন সাজিদের সহপাঠী ইনসানুল ইমাম নুর।
এতে উপস্থিত ছিলেন ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
ফিটনেসবিহীন বাস অপসারণসহ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি
কুবিতে ‘হাতে-কলমে’ শিক্ষা নিতে শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা মেলা
অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, হল কর্তৃপক্ষের কমিটি ও পুলিশ তদন্তের কাজ অব্যাহত রেখেছে। তদন্ত কাজের অগ্রগতি জানতে গতকাল মঙ্গলবার সাজিদের বাবা, চাচা, ভগ্নিপতি ও প্রতিবেশী ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তারা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, তাদের সন্তানের স্বাভাবিক মৃত্যু হলে কোনো কথা নেই, কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিচার করতে হবে। তবে লাশ নিয়ে রাজনীতি না করার অনুরোধ জানিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একমত। সব কাজের আগে এ ঘটনার তদন্ত করে বিচার হতে হবে। আমরা চাই অন্যান্য দাবি করতে গিয়ে মুখ্য বিষয় যেন হারিয়ে না যায়। তবে এসব নিয়ে যেন কোনো অপপ্রচার না হয় সেদিকে সচেতন হতে হবে। এজন্য আল কুরআন বিভাগের নেতৃত্বে সবাইকে আন্দোলনে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
এদিকে, সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত ও বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সোমবার (২১ জুলাই) প্রধান ফটকে আন্দোলনের পর আল কুরআন বিভাগের আহ্বানে সব ছাত্রসংগঠন প্রক্টর অফিসে আলোচনায় বসেন। আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নেতৃত্বে সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত, বিচারসহ অন্যান্য সকল যৌক্তিক দাবিতে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠন আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে ঐক্যমতের ভিত্তিতে পরের দিনের (মঙ্গলবার) কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়।
এক ফেসবুক পোস্টে সাজিদের বন্ধু ইনসান লেখেন, “সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার প্রতিবাদে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন, আল কুরআন বিভাগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়মতান্ত্রিক ও ন্যায়-সংগত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, ইনশাআল্লাহ! আগামীকালের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হলো!”
পরে ইবি প্রশাসন ইনসানকে নানা চাপ দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করিয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। কিন্তু এ দাবি অস্বীকার করে ইনসান বলেন, “কেউ আমাকে চাপ দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করায়নি। আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে শুধু মঙ্গলবারের কর্মসূচি স্থগিত করেছি। সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে আমরা সবাই একসঙ্গে আন্দোলন করব।”
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সাড়ে ১১টার দিকে রেজাউল ইসলাম রাকিবের নেতৃত্বে প্রশাসন ভবন চত্বরে তিন দফা দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিসমূহ হলো- শিক্ষার্থী সাজিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত সমাপ্ত ও দায়িত্ব অবহেলায় প্রশাসনের ক্ষমা চেয়ে স্পষ্ট বিবৃতি দিতে হবে।
এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সহ-সমন্বয়ক সায়েম আহমেদসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রশাসন ভবন থেকে মৌন মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সহ-সমন্বয়ক সায়েম আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে আন্দোলন করে আর একজন প্রক্টর ৩ ঘণ্টায় সেখানে আসতে পারলেন না, কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলেন না। অথচ রাতের বেলা আলোচনা করে নির্ধারণ করছেন আন্দোলন কারা করবে। এই নোংরামি আর আমাদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা কইরেন না। রাতের রাজনীতি আমরা আওয়ামী লীগ আমল থেকে দেখে আসছি। এগুলো আপনাদের রক্তের সঙ্গে যায় না।”
তিনি বলেন, “উপাচার্য লন্ডনে বসে এখন পর্যন্ত একটা ভিডিও বার্তা, বিবৃতি বা শোক বার্তা দিতে পারলেন না। এর চেয়ে লজ্জা কোথায় রাখবো আমরা। আমরা কত নগণ্য! আমাদের কারো জীবন চলে গেলে, আন্দোলন করলে আপনারা বলেন- আমরা আবেগী। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত আপনাদের এটা ভুল হইছে- এই কথা বললেন না। আপনাদের অবশ্যই নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
গত ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬ টায় শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টায় সাজিদের লাশের ময়না তদন্ত করা হয়।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোস্টমর্টেমের প্রায় ৩০ ঘণ্টা পূর্বে (অর্থাৎ ১৬ জুলাই আনিমানিক দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার আগে) সাজিদের মৃত্যু হয়। মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই এর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে উত্তাল হয়ে আছে ক্যাম্পাস।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত আল ক রআন ব ভ গ তদন ত ও ব চ র ইসল ম ইনস ন স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’