নদী কেড়ে নিয়েছে শাহিনুরের স্বামীকে, এখন দারিদ্র্য কেড়ে নিচ্ছে স্বপ্ন
Published: 24th, July 2025 GMT
বিধবা শাহিনুর বেগমের (৩৬) এক চোখে স্বপ্ন, আরেক চোখে হতাশা। তাঁর স্বপ্ন, তিন সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করা। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে সেই স্বপ্নপূরণে তাঁর চোখে নেমে এসেছে হতাশা। ভাইয়ের পরিবার থেকে খাবার না এলে সেদিন আর খাবার জোটে না তাঁদের। নিজের ঘরে রান্নার চুলা নেই। রান্নাঘরটি ভেঙে পড়ে আছে। বসবাসের ঘর সামনের দিকে একটু ভালো হলেও পেছন দিকের বেড়া ভাঙা। টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে।
ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কন্দর্পপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকেন শাহিনুর। বৃদ্ধ মা–বাবা বেঁচে আছেন। তাঁদের বাড়ির পেছনে মেঘনার শাখা নদী ইলিশা। ভরা জোয়ারে এই গ্রাম নদীর পানিতে ডুবে যায়। রাস্তাঘাট নেই। এই নদীতেই শাহিনুরের স্বামী মো.
২০২২ সালের মার্চ মাস। মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলছিল। ইলিশা নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ না হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের ভয়ে কামাল রাত জেগে মাছ ধরতেন। মার্চের কোনো এক রাতে (তারিখ শাহিনুরের মনে নেই) কামাল জাল পেতে নৌকায় শুয়ে ছিলেন। ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ তাঁর নৌকার ওপর দিয়ে চলে গেলে নৌকাটি দুমড়েমুচড়ে ডুবে যায়। পরের দিন ভাঙা নৌকা আর কামালের লাশ পাওয়া যায় নদীতে। যদিও তাঁর মাছ ধরার সঙ্গী আহত অবস্থায় বেঁচে ছিলেন।
শাহিনুরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কামালের বাবা আজিজুল হক জমাদ্দারের বাড়ি ছিল ইউনিয়নের চর মোহাম্মদ আলী। তখন তাঁরা ছিলেন অবস্থাসম্পন্ন পরিবার। চাষবাসে সংসার চলত। সেই বাড়ি ভেঙে গেলে তাঁরা চলে যান ইউনিয়নের চর সুলতানী গ্রামে। সেই বাড়িও একদিন মেঘনায় বিলীন হয়ে যায়। ততদিনে গেরস্থবাড়ির সন্তানেরা লাঙল ছেড়ে নৌকার বইঠা ধরতে শিখে গেছে। বাড়ির মানুষজন ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। কামাল ভাঙা ঘরবাড়ির চালা, বেড়া নিয়ে এসে শ্বশুরবাড়িতে ঘর তোলেন। ধারদেনা করে নিজের একটা ছোট জেলেনৌকা বানান।
কামালের ভাঙা নৌকাটি অর্থের অভাবে সংস্কার করতে পারেননি স্ত্রী শাহিনুর। গোয়ালে একজোড়া গরু-বাছুর ছিল। সেটিও বিক্রি করতে বাধ্য হন মহাজনের দেনা পরিশোধের জন্য। বড় ছেলে হযরত আলী (১২) এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। মেজো ছেলে আল আমিন পড়ছে পঞ্চম শ্রেণিতে। আর ছোট মেয়ে বিবি আছিয়া দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
বিধবা শাহিনুর বেগম বলেন, সংসারে আয় বলতে কিছু নেই। মা–বাবা আছেন। দুই ভাই ঢাকায় কাজ করে সংসার চালান। সেই আয়ে তাঁদের মুখে খাবার জোটে। জানেন না, এভাবে কত দিন চলবে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বড় ছেলে এক হাজার ২০০ টাকা উপবৃত্তি পেয়েছে। এক হাজার টাকা বেতন আর পরীক্ষার ফি বাবদ কেটে নেওয়া হয়েছে। স্বামীর নামে যে জেলে–কার্ড ছিল, তিনি মারা যাওয়ার পর ওই কার্ড দেখিয়ে দুবার চাল পেয়েছেন তাঁরা। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে কার্ডটি নিয়ে গেছে। রেশন কার্ডেও আজকাল চাল পাচ্ছেন না। ছেলেমেয়েকে যদি লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে না পারেন, তাহলে ছেলেদেরও মাছ শিকারে পাঠাতে হবে। কিন্তু শাহিনুর তা একেবারেই চান না।
ভোলার রাজাপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শাজাহান ব্যাপারী বলেন, তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর কেউ তাঁর কাছে আসেননি। এলে যথাসম্ভব সাহায্য করবেন বলে জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, লঞ্চের চাপায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়ার সব প্রমাণসহ যদি শাহিনুর আবেদন করেন, তবে সরকারি বরাদ্দ এলে তাঁকে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
ভোলার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি জানতেন না। শাহিনুরের পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ছ ধরত
এছাড়াও পড়ুন:
রূপালী ব্যাংকে পর্ষদ ও ম্যানেজমেন্টের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
রূপালী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ও সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের (এসএমটি) যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) ঢাকার দিলকুশায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পর্ষদ কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল হুদা। সভায় পর্ষদ ব্যাংকের নিরীক্ষা ও পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধির নির্দেশনা দেন। এছাড়া, প্রতি ত্রৈমাসিকে পর্ষদ ও এসএমটির মধ্যে নিয়মিত সভা আয়োজনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভায় ব্যাংকের পরিচালক এবিএম আব্দুস সাত্তার, সোয়ায়েব আহমেদ, মো. শাহজাহান, মো. আবু ইউসুফ মিয়া, এ.বি.এম শওকত ইকবাল শাহিন, মুজিব আহমদ সিদ্দিকী, এ এইচ এম মঈন উদ্দীন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক এস এম আব্দুল হাকিম উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় এসএমটির চেয়ারম্যান ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পারসুমা আলম, হাসান তানভীর ও মো. হারুনুর রশীদ এবং ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপকরা সভায় অংশ নেন।
ঢাকা/ইভা