প্রবাস থেকে বাড়ি ফিরে দেখলেন চার স্বজনের নিথর দেহ
Published: 24th, July 2025 GMT
অসুস্থ স্ত্রী সাফিয়া বেগমকে দেখতে যাওয়ার জন্য স্বজনদের বলেছিলেন কুয়েতপ্রবাসী সোহানুর রহমান। সেই দেখা আর হলো না। প্রবাস থেকে দেশে ফিরলেন। গ্রামের বাড়িতে ফিরে দেখলেন স্বজনদের নিথর দেহ।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আইড়মারী এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন আটজন। তাঁরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আটটি লাশ পৃথক স্থানে দাফন করা হয়। তবে চারটি লাশ একই গোরস্তানে পাশাপাশি দাফন করা হয়।
বুধবার ভোরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ গ্রামের ওই পরিবার মাইক্রোবাসে করে সিরাজগঞ্জে প্রবাসী সোহানুরের অসুস্থ স্ত্রী সাফিয়া বেগমকে দেখতে যাচ্ছিল। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আইড়মারী এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসের আট আরোহীর পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন ধর্মদহ গ্রামের জাহিদুল ইসলাম (৬৬), তাঁর স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৫৫), শহিদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন ওরফে আন্না (৫৫), মিজানুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৫৫), মাইক্রোবাসের চালক স্থানীয় জয়নাল আবেদীনের ছেলে সাহাব উদ্দীন (৪২), প্রাগপুর গ্রামের রফেজ চৌধুরীর স্ত্রী ইতি আরা খাতুন (৪৫), মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা (৭০) এবং ভোলার দাড় গ্রামের শুকুর আলীর স্ত্রী শিমা খাতুন (৪০)। তাঁদের মধ্যে জাহিদুল, শহিদুল ও মিজানুর পরস্পরের চাচাতো ভাই। আঞ্জুমান, শিমা ও ইতি আরা জাহিদুলের নিকটাত্মীয়।
মা–বাবাসহ স্বজনদের মৃত্যুর খবর শুনে জাহিদুলের ছেলে সোহানুর রহমান ও আনোয়ারা খাতুনের ছেলে সুইট বুধবার রাতেই কুয়েত থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা দেন। আজ বেলা ১১টার দিকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান তাঁরা। বাড়িতে ফেরার পর নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের নিথর দেহ দেখে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন। এ সময় দুর্ঘটনায় নিহত মাইক্রোবাসের চালক সাহাব উদ্দীনের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
দুর্ঘটনায় নিহত আনোয়ারা খাতুনের স্বামী শহিদুল ইসলাম আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বুধবার রাতে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বজনদ র উপজ ল র য় ন হত প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা