সবচেয়ে নিরাপদ পথ হলো কৌশলগত নিরপেক্ষতা বজায় রাখা
Published: 27th, July 2025 GMT
প্রথম আলো:
জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আপনি এর আগে জাতীয় নিরাপত্তা সমন্বয় সংস্থা গঠনের কথা বলেছিলেন। বর্তমান বাস্তবতায় সেটা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে কি?
আ ন ম মুনীরুজ্জামান: এটা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তার কারণ, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নীতিমালার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে নীতিমালাগুলো প্রণয়ন করা হয়নি। যেকোনো দেশের জন্য এই নীতিমালাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কিটেকচার বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকাঠামো গড়ে তুলতে পারিনি। সে কারণে আমাদের সক্ষমতাগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমন্বয়ের কাজটি অনেক ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নটির সঙ্গে শুধু সশস্ত্র বাহিনী জড়িত থাকে না। বর্তমান বিশ্বে এ জায়গায় সমগ্র সমাজ, সরকার ও রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা থাকে। সে জন্য রাষ্ট্রীয় সব ধরনের সক্ষমতা একই ছাতার নিচে সমন্বয় করার জন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার, সেটা খুব শিগগির আমাদের গড়ে তুলতে হবে। এ জায়গায় এখন পর্যন্ত অনেক ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, যেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্য একক কোনো বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তির দিকে ঝুঁকে পড়া কতটা বাস্তবসম্মত হবে? এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থানটা কী হওয়া উচিত?
আ ন ম মুনীরুজ্জামান: বাংলাদেশ একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক অবস্থানে অবস্থান করে। বিশেষ করে আমরা বঙ্গোপসাগরের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত দেশ। বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারত মহাসাগরীয় দেশও। এ কারণে বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে এবং উঁচু স্থানে চলে গেছে। বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রণয়ন করা ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির কারণে ভারত মহাসাগর কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
চীনের প্রণীত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভেও (বিআরআই) দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন করিডরের মাধ্যমে তারা অনেক ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। কাজেই দুটি পরাশক্তিরই একই মহাসাগরের ওপর যে কড়া দৃষ্টি বা স্বার্থ জড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে আমাদের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিটা একটু স্পর্শকাতর হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটা হচ্ছে, আমরা যাতে সব ক্ষেত্রে একটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখি।
আমরা যাতে কোনো একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে বা কোনো চুক্তির সঙ্গে এককভাবে জড়িয়ে না পড়ি। আমাদের জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে আমরা সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই এবং একইভাবে আমাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাই। আমরা এককভাবে কারও সঙ্গে সংযুক্ত হলে আমরা অন্য পক্ষের নেতিবাচক দৃষ্টিতে চলে আসতে পারি। সেখানে আমাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। কাজেই আমাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ পথ হবে কৌশলগত নিরপেক্ষতা ও কৌশলগত স্বনির্ভরতা বজায় রাখা।
মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধে ভারসাম্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ঝুঁকে পড়েছে। রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই আরাকান আর্মির হাতে। রোহিঙ্গাদের কারণে আরাকানের সঙ্গে আমাদের বড় স্বার্থ রয়েছে। রাজ্যটিতে চীন ও ভারতের স্বার্থটাও বড়। আবার মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বার্মা অ্যাক্ট পাস করেছে। সব মিলিয়ে মিয়ানমার ও রাখাইন ঘিরে একটা জটিল ভূরাজনৈতিক সমীকরণ বিরাজ করছে। এই বাস্তবতা বাংলাদেশের জন্য কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে? বাংলাদেশের সামনে পথটাই–বা কী?
আ ন ম মুনীরুজ্জামান: আমাদের দুটি পথে এগোতে হবে। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে, তাদের আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। আবার আমাদের প্রতিবেশী রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে চলে গেছে। তবে আরাকান আর্মি কোনো রাষ্ট্রীয় সত্তা নয়, তারা একটি অরাষ্ট্রীয় সত্তা। রাষ্ট্র হিসেবে আমরা তাদের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনা করতে পারি না। তবে অন্যান্য চ্যানেলে আরাকান আর্মির সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনের একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে কূটনীতির চেয়ে কৌশলগত মারপ্যাঁচ কাজে লাগাতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্মুখপথে আমাদের কূটনীতি পরিচালিত হবে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাক চ্যানেলে কূটনীতি পরিচালিত করতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে তাদের দক্ষতা প্রমাণের এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা দুই পক্ষের সঙ্গেই আমাদের কার্যকর একটা সম্পর্ক বজায় রেখে এগোতে হবে। তবে কোনোভাবেই এমন কিছু করা যাবে না, যেটা মিয়ানমার সরকারের স্বার্থের সম্পূর্ণ বিপরীতে চলে যায়।
রাখাইন পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকটে নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। নতুন করে রোহিঙ্গা এসেছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমেছে। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ জন্মভূমিতে ফেরানোর বিষয়টা কতটা জটিল হলো?
আ ন ম মুনীরুজ্জামান: পরিস্থিতিটা জটিল হয়ে উঠছে আরও বেশি কারণে যে রোহিঙ্গারা মানবিক যে একটা পরিস্থিতির ভেতরে ছিল, সেটা থেকে এটা উত্তরণ করে এটা একটা নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় রূপান্তরিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভেতরে অনেকে বিভিন্ন ধরনের বেআইনি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। যেমন তাদের অনেকে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়ে গেছে। এখান থেকে বিভিন্ন দেশে মানব পাচার হচ্ছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্রাস্ত্র আসছে, সেগুলো বিভিন্ন দেশে চোরাচালান হচ্ছে। কাজেই এটা শুধু আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে না; বরং বলা চলে, আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর একটা বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠছে।
এ ছাড়া এই অঞ্চলে যে ধরনের উগ্র মতবাদের সৃষ্টি হচ্ছে, সেটার প্রভাবও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পড়তে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন যেমন আরসা বা আরএসও ইতিমধ্যে রাখাইনের ভেতরে গিয়ে বিভিন্ন সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এখন রাখাইনের ওপর আরাকান আর্মির যে ধরনের নিয়ন্ত্রণ আছে, তাতে তাদের সমর্থন ছাড়া রোহিঙ্গারা কোনোভাবেই তাদের জন্মভূমিতে ফেরত যেতে পারবে না।
আরসা, আরএসওর মতো সংগঠনগুলোর তৎপরতার কারণে আরাকান আর্মির রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে খুবই নেতিবাচক অবস্থানে চলে গেছে। এখন আমরা যদি ধরেও নিই মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে রাজি হয়, কিন্তু দেখা যাবে যে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের রাস্তাগুলো খুলে দেবে না। কাজেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ভবিষ্যৎটা খুবই অনিশ্চিত।
অদূর ভবিষ্যতে তারা সেখানে ফেরত যাবে বলে মনে করি না। কাজেই এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আমরা কীভাবে এখানে রাখব, সেটা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। কেননা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা উদ্বেগজনকভাবে কমে যাচ্ছে। প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা এখানে আগে থেকেই বাস করছিল। গত ১৮ মাসে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা নতুন করে এসেছে। প্রতিবছর রোহিঙ্গা শিবিরে ৪০-৫০ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কয়েকজন তরুণের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। বৈশ্বিক ও আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা আমাদের জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করল?
আ ন ম মুনীরুজ্জামান: মালয়েশিয়ায় উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে আমাদের তরুণদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা আমাদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। আমাদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে আসছে। মালয়েশিয়া আমাদের বড় শ্রমবাজার। মালয়েশিয়ায় উগ্রবাদী তরুণেরা যে সমস্যাটা সৃষ্টি করেছে, সেটা শুধু মালয়েশিয়ার ভেতরে সীমিত নয়। তারা সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে মধ্যপ্রাচ্যে আইএসআইএসের কাছে পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নিচ্ছিল। কাজেই এখানে একটা আন্তর্জাতিক মাত্রাও যোগ হয়েছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশেও এ ধরনের উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি। কাজেই শুধু মালয়েশিয়ায় একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, এভাবে দেখা ঠিক হবে না। বাংলাদেশে তারা কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে কিংবা কাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে, সেটা আমাদের খুব গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।
আমাদের আরেকটি বড় উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিটা একেবারে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ৫ আগস্টের পর পুলিশ সঠিকভাবে কাজ করছে না। উগ্র মতবাদ ও জঙ্গি মতবাদ দমনের জন্য পুলিশের বেশ কিছু বিশেষায়িত ইউনিট তৈরি করা হয়েছিল। সেই ইউনিটগুলো বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে। এসব ইউনিটের যে সক্ষমতা সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেটা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে নজর দেওয়া ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের সক্ষমতাটা একেবারে নেই বললেই চলে। কাজেই উগ্রবাদের কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো কিন্তু আমরা সঠিকভাবে যাচাই করতে পারছি না। এদিকে আমাদের খুব দ্রুত দৃষ্টি দিতে হবে।
মালয়েশিয়ায় যারা জেলে আছে বা যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, আমরা যদি খুব বলিষ্ঠ এবং পরিষ্কার ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিই, তাহলে মালয়েশিয়া নয়, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য অনেক দেশে আমাদের শ্রমবাজারের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ব্যাপারে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খুবই আশু কিছু বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সে ধরনের কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়েনি। যে গুরুত্ব দিয়ে এই সমস্যাটা তাদের সামাল দেওয়া উচিত ছিল, সেটা তারা করেনি। এই দুর্বলতার সমস্যাটাকে আরও গভীরে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষি করে শুল্ক কমাতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার কারণ কী বলে মনে করেন?
আ ন ম মুনীরুজ্জামান: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ–অর্থনৈতিক সমস্যাট। শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল। পরে আলাপ-আলোচনার জন্য তারা এই সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছিল। সে ক্ষেত্রে এই সময়কে কাজে লাগিয়ে অনেক দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। যেমন ভিয়েতনাম আলোচনার মাধ্যমে তাদের ওপর আরোপিত শুল্ক ২০ শতাংশ পর্যন্ত নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। আমরা জানতে পারছি, ভারতও প্রায় ২০ শতাংশ বা তার নিচে শুল্ক নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কার্যকর আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা সময়টাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির চেষ্টা সঠিক ব্যক্তির দ্বারা করা হয়নি। যেমন ওয়াশিংটনে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উপস্থিত থেকে আলোচনাটা পরিচালনা করছিলেন। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। এটি কোনোভাবেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাজ নয়।
এখানে আরেকটি বড় ঘাটতির জায়গা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যাঁরা রপ্তানি করেন, তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়নি, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ত করাও হয়নি। কাজেই যে আলাপ-আলোচনাটি হয়েছে, সেটা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল, সেটা আমরা জানি না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে চিঠিটা দিয়েছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে পূর্বঘোষিত ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে শুল্ক ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। এখন আমাদের যদি ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে হয়, আর আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো যদি আমাদের চেয়ে কম শুল্ক দেয়, তাহলে কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে আমরা অনেকখানি পিছিয়ে পড়ব। এতে আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পে যে চাপ তৈরি হবে, তাতে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।
তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার। সেই বাজারে রপ্তানি যদি বিঘ্নিত হয়, তার স্পিল-ওভার প্রভাব ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারসহ অন্যখানেও পড়বে। আমরা এরই মধ্যে শুনতে পাচ্ছি, ইউরোপের কিছু কিছু ক্রেতা বলতে শুরু করেছেন, তাঁরা বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে দর-কষাকষি করতে চান। এটা আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। কেননা আমরা রপ্তানির ক্ষেত্রে এককভাবে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। ফলে ৩৫ শতাংশ শুল্কের কারণে অর্থনীতির ওপর যে ঝুঁকি আসবে, সেটা মোকাবিলা করা বাংলাদেশের জন্য খুবই কঠিন হবে।
এ রকম ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যে দর-কষাকষির বিষয়টাকে যে ধরনের গুরুত্ব দেওয়া দরকার, যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল, সেটা করা হয়নি। এখানে উচিত ছিল ট্রেড লবিস্ট নিয়োগ করা। ভিয়েতনামসহ আরও কিছু দেশ খুবই দক্ষ ট্রেড লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। বাংলাদেশ সে রকম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রথমে দায়সারাভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে, শেষ মুহূর্তে নেগোসিয়েশন করতে গেছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তো নেগোসিয়েশন হয় না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অপর পক্ষ যখন জানে যে আমরা খুব নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছি, তারা তো আমাদের কাছ থেকে যতটুকু পারে, ততটুকু নেওয়ার চেষ্টা করবেই।
প্রথম আলো:আপনাকে ধন্যবাদ।
আ ন ম মুনীরুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আর ক ন আর ম র দ শ র জন য ভ র জন ত ক জনগ ষ ঠ র পদক ষ প ন বড় ধরন র প রথম আল র খ ইন র আম দ র প আম দ র জ আম দ র স ন র জন য র জন য স র আম দ র পর স থ ত ক অবস থ অবস থ ন সমস য ট ক শলগত ত ন কর র ভ তর সরক র র ওপর সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবেশী দেশগুলো অস্থির, ভারত এখন কী করবে
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা নতুন কিছু নয়। তবে এখন যে অস্থিরতা এ অঞ্চলে চলছে তা ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি ভারতকে আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
সাম্প্রতিক নেপালের সহিংস অস্থিরতা তারই উদাহরণ। শুধু নেপালের ঘটনা নয়। ভারতের পূর্বদিকে বাংলাদেশে ২০২৪ সালে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল এবং তার জের ধরে সেখানে সরকার পতন হয়েছিল; সেই সংকটের মীমাংসা এখনও হয়নি।
অন্যদিকে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে থাইল্যান্ড নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছে। কারণ সেখানে আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করা হয়েছে ও সম্প্রতি কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তে তাদের একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে।
আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রকল্পের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি যোদ্ধারাও আছেন।
আরও পড়ুনভারত ও চীনের টানাটানিতে পড়েছে নেপাল৩১ জুলাই ২০২০ভারতের পশ্চিমে পাকিস্তান এখনও অতীতের ‘ভূতদের’ সঙ্গে লড়াই করছে। উগ্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠী, দুর্বল অর্থনীতি আর অকার্যকর শাসনব্যবস্থা পাকিস্তানকে অস্থির করে রেখেছে। ভারতের দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা তিন বছর আগে প্রেসিডেন্টকে সরানোর পর আপাত শান্ত হয়েছে। কিন্তু দেশটির অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আর উত্তরে চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাও এই অস্থিরতার বড় কারণ হয়ে আছে।
ভারতের জন্য এসব সংকট মোটেও দূরের কোনো ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ ইতিমধ্যেই পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে অস্বস্তি তৈরি করছে। পাকিস্তানের সীমান্তপারের সন্ত্রাসের হুমকি এ গ্রীষ্মে কাশ্মীরে প্রায় যুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলেছিল। আর এখন নেপালের অস্থির রাজনীতি চীনের জন্য নতুন করে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছে। এত বড় এক অস্থিরতার বলয়কে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
এখন কীভাবে এই ধাক্কাগুলো সামলানো যায় এবং কীভাবে গোটা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনা যায়, সেটিই ভারতের নেতৃত্বের সামনে মূল প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
সাদা চোখে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষকে ততটা গুরুতর মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ভারত তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির অধীনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশ ও তাদের ৬০ কোটিরও বেশি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ছে।নেপাল দিয়েই শুরু করা যাক। দেশটি দুই দশক আগে দীর্ঘ মাওবাদী বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে যে উচ্চাভিলাষী সংবিধান প্রণয়ন করেছিল, তা টিকিয়ে রাখতেই তারা হিমশিম খাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল, বিতর্কিত ও ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। পক্ষপাত, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে স্থিতিশীলতার আশা বারবার ভেঙে পড়েছে। সম্প্রতি যেসব ভয়াবহ সহিংসতা ঘটেছে, তা আসলে এই গভীর অস্থিরতার লক্ষণ।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে, তারা আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে বা মানবাধিকারের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে অর্থনীতি কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প ছিল, দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া শুল্কনীতির কারণে সেটিও এখন টালমাটাল।
আরও পড়ুনভারত ‘তুমি রিয়েলিটি মাইন্যে ন্যাও’০৪ ডিসেম্বর ২০২৪সাদা চোখে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষকে ততটা গুরুতর মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ভারত তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির অধীনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশ ও তাদের ৬০ কোটিরও বেশি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ছে।
এই অঞ্চলের যে কোনো অশান্তি সেই প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। তাছাড়া থাইল্যান্ড বহুদিন ধরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেছে। যদি এর প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয় কিংবা বা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের শান্তি-প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কম্বোডিয়ার সঙ্গে থাইল্যান্ডের বিরোধ আরও বেড়ে যায়, তাহলে ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক করিডরের স্বপ্নই ভেঙে পড়তে পারে।
পাকিস্তানকে ‘চিরকালীন সংকটে থাকা দেশ’ বলা হয়তো কঠিন শোনায়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে এটিই বাস্তবতা। সেখানে বারবার বেসামরিক সরকারকে দুর্বল করা হয়েছে। যেমন, ২০২২ সালে ইমরান খানের নির্বাচিত সরকার সেনাবাহিনীর ইশারায় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। রাজনীতি রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত হলে চরমপন্থীরা মাথা তোলে, আর নাজুক অর্থনীতি সেই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানে সেটিই দেখা গেছে।
আরও পড়ুননেপালের গণ–অভ্যুত্থান ভারতের মাথাব্যথা বাড়াল১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ভারতের দৃষ্টিতে পাকিস্তানের এই সংকট শুধু অভ্যন্তরীণ নয়। এগুলো প্রায়ই কাশ্মীর সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ছড়ায়, আঞ্চলিক শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করে, এমনকি পারমাণবিক সংঘাতের শঙ্কাও তৈরি করে। ভারত যখন বাইরের দিকে তাকাতে চায়, এই স্থায়ী অস্থিতিশীলতা তখন ভারতকে উপমহাদেশের দাবার ছকে আটকে রাখে। এর সঙ্গে পাকিস্তান-চীন জোট মিলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এটি নিকট ভবিষ্যতে বদলানোর সম্ভাবনা কম।
এসব ঘটনা মিলিয়ে যে বড় প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছে, তা হলো: ভারতের চারপাশে গণতন্ত্র পিছিয়ে পড়েছে। প্রতিবেশি দেশগুলোতে সংবিধান বারবার বদলানো হচ্ছে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আদালতকে ব্যবহার হচ্ছে। দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক সেনাপ্রধান রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন। রাজনৈতিক নেতাদের কখনো কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, কখনো নির্বাসনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের জন্য এ প্রবণতা মোকাবিলা করা জরুরি। আর এখন আরও দৃঢ় আঞ্চলিক কৌশল ছাড়া উপায় নেই। বাস্তবে পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে সংকট দেখা দিলে ভারতই প্রথম ভরসা। তবে যখন কোনো দেশ মনে করে তাদের ভারতের সাহায্য দরকার নেই, তখন তারা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকেও গুরুত্ব দেয় না।
আরও পড়ুননেপালের অভ্যুত্থান নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যেভাবে মিথ্যা বয়ান হাজির করছে১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ভারতের চারপাশের অশান্ত পরিস্থিতিই যথেষ্ট কঠিন। তার ওপর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট আরও অনিশ্চয়তা যোগ করছে। ট্রাম্পের দক্ষিণ এশিয়া নীতি এতটাই খামখেয়ালি যে, ছোট দেশগুলো এখন নিরাপদ থাকতে বিকল্প পথ খুঁজছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পর্যন্ত প্রশ্ন উঠছে—চীন যখন শক্তি প্রদর্শন করছে আর মার্কিন নিরাপত্তার ছাতার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে, তখন কি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে হাঁটা উচিত না?
ভারত যদিও এ ঝড়ের মুখে দৃঢ় থেকেছে, তবুও আঞ্চলিক টানাপোড়েন আর ট্রাম্পসৃষ্ট অস্থিরতা ভারতের বহুদিনের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ধরে রাখাকে কঠিন করে তুলছে। এখন ভারতের কাজ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা নয়, বরং সম্পর্কের কৌশলগত, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক মূল ভিত্তি ধরে রাখা। পাশাপাশি আচমকা মার্কিন নীতি পরিবর্তনের ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি নেওয়াও দরকার।
ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য চায় না। তার লক্ষ্য হলো এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, নীতিনির্ভর ও সংযুক্ত অঞ্চল গড়ে তোলা যেখানে অতীতের বারবারের সংকট সরে যাবে এবং সে জায়গায় ভবিষ্যতের দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
নিরুপমা রাও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত
সত্ত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ