তাড়াহুড়ায় ছাদ বিদ্যুৎ প্রকল্পের কেনাকাটায় অনিয়ম হতে পারে: সিপিডি
Published: 27th, July 2025 GMT
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাদ ব্যবহার করে তিন হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, এটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য, বাস্তবায়ন করা কঠিন। ডিসেম্বরের সময়সীমা বেধে না দিয়ে সময় নিয়ে এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তাড়াহুড়ার কারণে কেনাকাটায় অনিয়ম হতে পারে, নিম্নমানের পণ্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ঝুঁকি থাকে।
‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি; নকশা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো বিষয়ে প্রস্তাবনা’ শিরোনামে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়। আজ রোববার রাজধানীর সিপিডি কার্যালয়ে সিপিডি ও বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউবেল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ) যৌথভাবে এটির আয়োজন করে।
আলোচনা সভার শুরুতে সিপিডির পক্ষ থেকে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ২০১০ সালে বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগের জন্য চাহিদার ৩ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়। এতে সংযোগ পেতে নামমাত্র সৌরবিদ্যুৎ বসানো হয়েছে। এটা একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল। নিম্নমানের সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে, যা কোনো কাজে আসেনি। সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তাড়াহুড়ার ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সরকারি অফিস বেশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে। সেখানে রক্ষণাবেক্ষণ হবে কি না, গ্রিডের অবস্থা কী, এগুলো আগে থেকে চিন্তা করতে হবে। বিদ্যুতের দাম আলাদা করে নির্ধারণ করে দিতে পারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
ছাদ বিদ্যুৎ বাস্তবায়ন নিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সিপিডি। এতে বলা হয়, শুরুতে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ছাদ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেখা যেতে পারে। পরীক্ষামূলকভাবে ৪০০ থেকে ৫০০ ভবনে করা উচিত। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগে বাছাই করা কিছু ভবনে এটা করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজ নিজ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে করবে। এটা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে পারে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য জানা যাবে।
ছাদ বিদ্যুৎ প্রকল্প ভালো উদ্যোগ হলেও এটিকে সতর্কভাবে স্বাগত জানিয়েছেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, এর আগে বাসাবাড়িতে লোকদেখানো সৌরবিদ্যুৎ বসানো হয়েছে। এতে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে একটা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। সে জায়গায় যেন বর্তমান কর্মসূচি না যায়, তাই সতর্ক থাকতে হবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ২০২৫–এর ডিসেম্বরের মধ্যে তিন হাজার মেগাওয়াট স্থাপন করতে চায় সরকার। তারা হয়তো তাদের মেয়াদের মধ্যে এটি করে দেখাতে তাড়াহুড়া করছে। যদিও এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। দ্রুত করতে গেলে নানা সমস্যা হতে পারে। সরকারের ক্রয় প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিতে পারে। ক্রয় প্রক্রিয়া নয়ছয় করে কারও পকেট ভারী যেন না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
বিএসআরইএ সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, সাহসী ও উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ। অতীতের মতো যাতে ধ্বংস না হয়, সতর্ক থাকা জরুরি। তাড়াহুড়া করে ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক ভুঁইফোড় কোম্পানি কাজ নিতে পারে।
আলোচনা সভায় বিএসআরইএর পক্ষ থেকে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এতে মূলত বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, স্বল্প সুদে ঋণ দিতে হবে, যা কোনোভাবেই ৩ শতাংশের বেশি নয়। গ্রামাঞ্চলে স্কুল, কলেজে নিরাপত্তা থাকে না, তাই সৌর প্যানেল চুরি হতে পারে। এটি বিবেচনায় রাখতে হবে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিভিন্ন পণ্য আমদানি শুল্ক বেশি।
পাওয়ার গ্রিড পিএলসি বাংলাদেশের প্রধান প্রকৌশলী সরদার মোহাম্মদ জাফরুল হাসান বলেন, গ্রিড মূলত ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন। ছাদে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাবে ৩৩ কেভি বিতরণ লাইনে। তবে সৌরবিদ্যুৎ বেশি হলে গ্রিডে সামঞ্জস্যের বিষয় আছে। ইতিমধ্যে গ্রিডে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছাদ থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট যুক্ত হলে গ্রিডে কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই অর্থায়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক খোন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত বলেন, সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প হলো ছাদে সৌরবিদ্যুৎ। ছাদে বিদ্যুৎ অর্থায়নে ব্যাংক উৎসাহ দিচ্ছে। সুদের হার ৩ শতাংশ করা যাবে না, এটা ৫ শতাংশ ঠিক আছে। ব্যাংকের আর্থিক দিকটিও বিবেচনা করতে হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডার) পরিচালক মো.
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, আলোচনা সভায় যেসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এগুলো বিবেচনায় নিয়েই কাজ করছে সরকার। শিগগিরই পরিষ্কার নির্দেশনা সবাই পাবে। পিডিবির প্রকল্প সংস্থাটির নিজস্ব জনবল প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। ছাদে করলে জমির অপচয় হয় না, খরচও কমে যাচ্ছে।
সিপিডির নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী। আর বিএসআরইএর নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সদস্য মো. নাসির উদ্দিন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স রব দ য ৎ ব ড স ম বর র উৎপ দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫