১১১ বছর আগে রৌদ্রোজ্জ্বল এক সকালে বসনিয়ার সারায়েভোর সড়কগুলোতে সাজ সাজ রব। সস্ত্রীক সফরে আসছেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ। সড়কপথে ছাদখোলা বিলাসবহুল গাড়িতে আসছেন তাঁরা। তাঁদের দেখতে সড়কের দুপাশে উপচে পড়া মানুষের ভিড়। কে জানত ওই ভিড়েই লুকিয়ে আছেন আততায়ী।

সেদিন ভিড়ের ভেতর থেকে পিস্তল হাতে বেরিয়ে আসেন গ্যাভরিলো প্রিনসিপ নামের এক যুবক। খুব কাছ থেকে দুটি গুলি ছোড়েন তিনি। একটি লাগে আর্চডিউক ফার্দিনান্দের গলায়, আরেকটি তাঁর স্ত্রী সোফির পেটে। দুজন গাড়িতেই নিথর হয়ে পড়েন। মারা যাওয়ার আগে আর্চডিউকের শেষ কথা ছিল, ‘সোফি, সোফি, মরে যেয়ো না…বাচ্চাদের জন্য বেঁচে থাকো।’ সেদিন ছিল তাঁদের বিবাহবার্ষিকী।

গ্যাভরিলো প্রিনসিপ ছিলেন একজন সার্ব জাতীয়তাবাদী। প্রিনসিপ এবং অন্য জাতীয়তাবাদীরা বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ওপর অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির শাসনের অবসান ঘটাতে সংগ্রাম করছিলেন। বসনিয়া–হার্জেগোভিনার সামরিক গভর্নর অস্কার পোটিওরেকের অনুরোধে আর্চডিউক ফার্দিনান্দের সারায়েভো সফরে বসনীয় ও সার্ব জাতীয়তাবাদীরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাঁরা এ সফরকে সাম্রাজ্যবাদী দখলের প্রতীক হিসেবে দেখেছিলেন।  

দুজন গাড়িতেই নিথর হয়ে পড়েন। মারা যাওয়ার আগে আর্চডিউকের শেষ কথা ছিল, ‘সোফি, সোফি, মরে যেয়ো না…বাচ্চাদের জন্য বেঁচে থাকো।’ সেদিন ছিল তাঁদের বিবাহবার্ষিকী।

ভাবী সম্রাটকে হত্যার মাধ্যমে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় শাসনকে ধাক্কা দিয়ে ওই জাতীয়তাবাদীরা স্বাধীনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেননি, তাঁদের এ কাজ গোটা বিশ্বকে প্রাণঘাতী এক দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে, সূচনা হবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের।

সোমের প্রথম যুদ্ধ চলাকালে ১৯১৬ সালের নভেম্বর মাসে ফ্রান্সে এক কানাডীয় সেনা কামানের গায়ে বড়দিনের শুভেচ্ছাবার্তা লিখছেন। ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মানুষ হতাহত হন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ