সন্তানেরা যাচ্ছে স্কুলে, নারীদেরও আলো দেখাচ্ছে কৃষিবিমা
Published: 28th, July 2025 GMT
বন্যা এলে আতঙ্কে থাকেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের শারমিন আক্তার। বন্যায় বারবার ফসল ডুবে যায়। আবার পরের বছর নতুন আশায় বুক বাঁধেন। ভালো ফসল হলে তা বেচে ভালো করে ঘর তৈরি করবেন আর ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাবেন; কিন্তু গত বছরেও আবাদের পেঁয়াজ আকাল বন্যায় নষ্ট হয়ে যায় শারমিনের। তবে এবার আর সেভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। নিজের ২১ শতাংশ জমির ফসল বিমা করিয়েছিলেন। এর সুফলও পেয়েছেন তিনি। শারমিন আক্তার বলেন, ‘মানুষের জীবনের বিমা হয় এত দিন শুনে এসেছি; কিন্তু ফসলের বিমা হয় এলাকার বড় ভাইদের মুখে শুনেছি। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। কিছুটা অবিশ্বাস নিয়ে বিমা করেছিলাম। গত বছর ২১ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ আকাল বন্যায় নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিমা দাবির নগদ ৮ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছি। ছেলেকে স্কুলে পড়ানোর স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ করেছি। এবার সেই টাকায় ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। এ বছর ২১ শতাংশ জমিতে আমন ধান রোপণ করেছি। ফসল বিমার আওতায় সারা দেশের কৃষকদের আনা উচিত।’
মেঘনা খাতুন। চিলমারী উপজেলার অষ্টমিরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিস্তা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েছেন। এরপর আশ্রয় মিলেছে অষ্টমির চরে। উদয়-অস্ত পরিশ্রম করে চরে ফলাচ্ছিলেন সোনার ফসল; কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে প্রতিবছরই নষ্ট হচ্ছিল ধান, পাট কিংবা ভুট্টা। তাই হাড়ভাঙা খাটুনির পরও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছিল না। অকাল বন্যা কিংবা তীব্র খরায় প্রতিবছরই আবাদের একটি অংশ নষ্ট হচ্ছিল। অনেকটা পেটেভাতে করে দিন পার করছিল মেঘনার পরিবার; কিন্তু গ্রামের নারীদের নিয়ে ‘যুগনিধি মহিলা জলবায়ু ও জীবিকা উন্নয়ন সমিতি’ গঠনের মাধ্যমে ফসল বিমার ব্যবস্থা নিজ গ্রামে চালু করেছেন নারীরাই। এর ফলে ঝুঁকি নিয়েও সারা বছর ফসল চাষ করছেন চরবাসী। এতে করে ফসল উৎপাদনে আর্থিক ঝুঁকি কমেছে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে।
বন্যার ক্ষতি থেকে এই নারীদের বের করে আনতে সহায়তা করছে কৃষিবিমা। সন্তানদের অনেকে যাচ্ছে স্কুলে। তাই তো মুখে হাসি সবার.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২৫ বছর পর রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কেউ রইলেন না
ক্লাব বিশ্বকাপ খেলেই চলতি মাসে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে এসি মিলানে যোগ দিয়েছেন লুকা মদরিচ। ক্রোয়াট কিংবদন্তির প্রস্থানে শূন্য হয়েছে রিয়াল–সমর্থকদের হৃদয় থেকে ক্লাবটির ড্রেসিংরুম। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের ট্রফি কেবিনেটে ২৮টি শিরোপায় ঘাম জমে আছে মদরিচের। তাঁর ব্যক্তিগত ট্রফি কেবিনেটও হয়েছে সমৃদ্ধ। রিয়ালে থাকতেই ২০১৮ সালে জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। মদরিচের প্রস্থানের সঙ্গে রিয়ালেও ব্যালন ডি’অরজয়ী আর কেউ রইলেন না।
আরও পড়ুনসেই কলম্বিয়ার কাছে হেরেই কোপার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় আর্জেন্টিনার১ ঘণ্টা আগেচলতি শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে, অর্থাৎ গত ২৫ বছরে এমন কিছু কখনো দেখা যায়নি। আরেকটু ভেঙে বলা যায়, গত ২৫ বছরে রিয়ালের স্কোয়াডে এমন অন্তত একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। মদরিচের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আড়াই দশক পর ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য হয়ে পড়েছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। গত ২৫ বছরে ৮ জন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে ড্রেসিংরুমে পেয়েছে রিয়াল।
বর্ষসেরার ব্যক্তিগত পুরস্কার ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। সেবার জেতেন ব্ল্যাকপুলের ইংরেজ কিংবদন্তি স্ট্যানলি ম্যাথুজ। পরের তিনটি বছরেই এই ট্রফি উঠেছে রিয়ালের ঘরে। ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে জেতেন কিংবদন্তি আলফ্রেদো ডি স্টেফানো এবং তার মাঝখানে ১৯৫৮ সালে জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি রেমন্ড কোপা।
অবিশ্বাস্য ব্যাপার, এরপর চার দশকের বেশি সময় রিয়ালে ব্যালন ডি’অর জয়ী কাউকে দেখা যায়নি। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ২০০০ সালে ক্লাবটির সভাপতি হওয়ার পর ‘গ্যালাকটিকোস’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে দলে ভেড়ান বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের। সেই পথ ধরেই ২০০০ সালের জুলাইয়ে রিয়ালে নাম লেখান পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুইস ফিগো। সে বছরের ১৯ ডিসেম্বর ব্যালন ডি’অর জেতেন ফিগো এবং শুরু হয় রিয়ালের ২৫ বছরের ধারা—যেখানে ড্রেসিংরুমে অন্তত একজন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে দেখা গেছেই।
আরও পড়ুনগার্দিওলার এ কোন চেহারা, ভাবনায় ফেললেন ভবিষ্যৎ নিয়েও১২ ঘণ্টা আগেফিগো যোগ দেওয়ার পরের বছর রিয়ালে নাম লেখান জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতায় সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি। ২০০২ সালে যোগ দেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও। ১৯৯৭ সালে ব্যালন ডি’অর জেতার পাশাপাশি ২০০২ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানোয় সে বছরও বর্ষসেরার এ ট্রফি জেতেন রোনালদো।
২০০৪-০৫ মৌসুমে রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় ছিলেন চারজন—ফিগো, জিদান, রোনালদো ও মাইকেল ওয়েন। ফিগো ও ওয়েন ২০০৫ সালে রিয়াল ছাড়েন, রোনালদো ২০০৭ সালে। এর মধ্যেই অবশ্য ব্যালন ডি’অরজয়ী আরেকজনকে দলে ভেড়ায় রিয়াল। ২০০৬ সালে উড়িয়ে আনা হয় ইতালির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ফাবিও কানাভারোকে। সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন কানাভারো। রোনালদোর প্রস্থানের পর প্রায় আড়াই বছর রিয়ালের স্কোয়াডে একমাত্র ব্যালন ডি’অরজয়ী হিসেবে দিন কেটেছে কানাভারোর।
কানাভারো রিয়াল ছাড়েন ২০০৯ সালে। সে বছরই ক্লাবটিতে যোগ দেন ২০০৭ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কাকা ও ২০০৮ সালে জয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০২২ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী করিম বেনজেমাও রিয়ালে নাম লেখান সে বছর (২০০৯)।
রোনালদো এরপর ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জেতেন ব্যালন ডি’অর। ২০১৮ সালের মে মাসে রোনালদো রিয়াল ছাড়েন। এরপর মাত্র কয়েক মাস ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য ছিল রিয়াল। শূন্যতাটা ঘুচে যায় সে বছরই ৩ ডিসেম্বর মদরিচ ব্যালন ডি’অর জেতায়। এরপর বেনজেমা ব্যালন ডি’অর জিতলেও ২০২৩ সালে তিনিও রিয়াল ছাড়েন। থেকে গিয়েছিলেন শুধু মদরিচ। তাঁর প্রস্থানের মধ্য দিয়ে রিয়ালে এখন ব্যালন ডি’অর জয়ী কেউ রইলেন না।
তবে ইঙ্গিত আছে জয়ের। গত বছর ব্যালন ডি’অর জয়ে রদ্রির সঙ্গে পেরে ওঠেননি রিয়ালের উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। যদিও চলতি বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা বেশ পিছিয়ে। কিন্তু নতুন কোচ জাবি আলোনসোর অধীন নিশ্চয়ই এ খরা ঘুচিয়ে ফেলবে রিয়াল—সমর্থকেরা সে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।