ভোগে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে স্বর্ণকেশী মডেল কেন বিতর্ক ছড়াচ্ছে
Published: 28th, July 2025 GMT
শহরে এসেছে নতুন এক সুপারমডেল। নজরকাড়া, কেতাদুরস্ত এই নারী মডেলের কিন্তু বাস্তবে অস্তিত্ব নেই। কারণ, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি।
আগস্ট মাসে খ্যাতনামা মার্কিন সাময়িকী ভোগের ছাপা সংস্করণে এই মডেলকে দেখা গেছে। ‘গেস’ ব্র্যান্ডের একটি বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে স্বর্ণকেশী এই মডেলকে। মডেলের পরনে রয়েছে গেসের গ্রীষ্মকালীন পোশাকের তালিকায় থাকা চেক প্রিন্টের ম্যাক্সি ও ফুলের নকশার পোশাক।
বিজ্ঞাপনটির এক কোনায় ছোট অক্ষরে লেখা—মডেলটি এআই দিয়ে তৈরি। ভোগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই এআই মডেলের ব্যবহার তাদের সম্পাদকীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়। যা–ই হোক, এর মধ্য দিয়ে ভোগ সাময়িকীতে প্রথমবারের মতো এআই দিয়ে তৈরি চরিত্রকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হলো।
গেস-এর এই বিজ্ঞাপনের পেছনে রয়েছে ‘সেরাফিন ভ্যালোরা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেন্টিনা গনজালেস ও আন্দ্রেয়া পেত্রেস্কু বিবিসিকে বলেন, গেস-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা পল মার্সিয়ানো ইনস্টাগ্রামে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর ব্র্যান্ডটির গ্রীষ্মকালীন প্রচারণার জন্য একটি এআই মডেল তৈরির অনুরোধ করেন।
ভ্যালেন্টিনা গনজালেস বলেন, এআই দিয়ে প্রথমে ১০টি মডেল তৈরি করেন তাঁরা। পল মার্সিয়ানো এর মধ্য থেকে একজন বাদামি চুলের ও একজন স্বর্ণকেশী নারী মডেলকে পছন্দ করেন। পরে তাঁরা এই দুই মডেল নিয়ে কাজ এগিয়ে নেন।
আন্দ্রেয়া ও ভ্যালেন্টিনা—দুজনের বয়সই ২৫ বছর। স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনার সময় পরিচয় হয় তাঁদের। দুই বছর ধরে সেরাফিন ভ্যালোরা নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন তাঁরা। এআই মডেল তৈরির বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দুজন বলেন, মানুষ সাধারণত মনে করে, এআই দিয়ে ছবি তৈরি খুব সহজ। এটি ভুল ধারণা। প্রকৃত বিষয় হলো, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া।
সেরাফিন ভ্যালোরায় বর্তমানে এআই মডেল তৈরি কাজে পাঁচজন কর্মী রয়েছেন। একটি মডেল তৈরির ক্ষেত্রে প্রাথমিক ধারণা থেকে শুরু করে সেটিকে চূড়ান্ত রূপ দিতে প্রায় এক মাস সময় লেগে যায়। আন্দ্রেয়া ও ভ্যালেন্টিনা জানান, গেস-এর মতো বড় ব্র্যান্ডের কাছ থেকে কাজের জন্য বর্তমানে তাঁরা যে অর্থ নেন, তা ছয় অঙ্ক থেকে কম যেকোনো পরিমাণ হতে পারে।
‘আরেকটা চরম ধাক্কা’
এআই মডেল দিয়ে তৈরি এই বিজ্ঞাপন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ফ্যাশন খাতকে সব ধরনের মানুষের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য যেসব মানুষ মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য লড়াই করে আসছেন, তাঁদের ওপর এই বিজ্ঞাপন কী প্রভাব ফেলতে পারে, সে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া ভোক্তা—বিশেষ করে যেসব তরুণ অবাস্তব সৌন্দর্যের মানদণ্ড নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন, তাঁদের ওপর প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
ফ্যাশন খাতে এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন ফেলিসিটি হেওয়ার্ড। ফ্যাশন–সংক্রান্ত প্রচারে এআই মডেলের ব্যবহার ‘অলসতা ও সস্তা প্রচেষ্টার’ মতো মনে হয় স্থূল শরীরের এই নারীর কাছে। তিনি বলেন, আলোচনায় আসা ও বিনা মূল্যে প্রচার পাওয়ার জন্য গেস এটা করছে। অথবা তারা খরচ কমাতে চাইছে। কিন্তু এর প্রভাব নিয়ে কিছু ভাবছে না।
ভোগ সাময়িকীতে এমন একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ ‘খুবই হতাশাজনক ও বেশ ভয়ংকর’ বলে মন্তব্য করেছেন ফেলিসিটি হেওয়ার্ড। তাঁর আশঙ্কা, এতে করে ফ্যাশন খাতে বৈচিত্র্য আনার জন্য অনেক বছরের যে প্রয়াস, তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ফ্যাশন দুনিয়ায় সব ধরনের মডেলকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে ২০১০-এর দশকে বড় অগ্রগতি হয়েছিল। সে সময়ে মার্কিন ব্র্যান্ড ভিক্টোরিয়াস সিক্রেটের মডেল হিসেবে প্রথমবারের মতো ফ্যাশন শোতে হেঁটেছিলেন ট্রান্সজেন্ডার ভ্যালেন্টিনা সাম্পাইও। এই দশকেই বিশ্বজুড়ে প্রথম হিজাব পরা মডেল হিসেবে কাজ করেন হালিমা আডেন। স্যাভেজ এক্স ফেন্টির মতো ব্র্যান্ডগুলোও স্থুলকার মডেলদের ফ্যাশন শোতে জায়গা দিয়েছিল।
কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই ধারা থেমে গেছে বলে মনে করেন ফেলিসিটি হেওয়ার্ড। তাঁর ভাষায়, ‘এই মানুষগুলো আর কাজই পাচ্ছেন না।’ তাঁর মতে, এ পরিস্থিতিতে এআই মডেলের ব্যবহার আরেকটা চরম ধাক্কা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র এআই দ য় র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।
অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।
এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।
দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।
২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার