বিমানবন্দরের কর্মচারী খুনের মামলায় এক আসামির রিমান্ড
Published: 29th, July 2025 GMT
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অফিস সহকারী উসমান সিকদার খুনের মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামির নাম মো. রাসেল। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান জিনিয়া শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আসামি রাসেলের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানায়, বিমানবন্দরসংলগ্ন সরকারি কোয়ার্টারের বাসায় থাকতেন উসমান সিকদার। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে বিমানবন্দরসংলগ্ন লিংক রোড থেকে উসমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ভাই এমরান সিকদার বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল, নিরাপত্তাকর্মী বাদল মজুমদার ও ফটিকছড়ির মো.
এতে বলা হয়, ফটিকছড়ির মো. রাসেল নামের এক ব্যক্তি উসমান সিকদারের সঙ্গে ৩৭ হাজার রিয়াল শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পাচার করানোর চুক্তি করেন। কিন্তু পরে উসমান রাসেলকে জানান, রিয়ালগুলো বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা তাঁর কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছেন। রাসেলের কথামতো বিমানবন্দরের অভিবাসন পার হওয়া যাত্রীর হাতে তুলে দিতে পারেননি। বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিলসহ অন্যরা ভাগ–বাঁটোয়ারা করে নেন। এদিকে রাসেল তাঁর রিয়ালের জন্য চাপ দিতে থাকেন। তখন উসমান রিয়ালগুলো ভাগ–বাঁটোয়ারায় কারা কারা জড়িত, তা বলে দেবেন বলে হুমকি দেন। এতে বিমানবন্দরের জড়িত কর্মচারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে যান। পরে তাঁরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে উসমানকে খুন করেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উসম ন
এছাড়াও পড়ুন:
থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।
সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।