ভারতের পণ্যে এবার ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন ট্রাম্প
Published: 30th, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বহুদিন ধরে আলোচনাধীন বাণিজ্য চুক্তি যদি চূড়ান্ত না হয়, তাহলে ভারতের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তারা ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে’।
সাংবাদিক জানতে চান, ভারত কি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার মনে হয়, তাই হবে। ভারত আমার বন্ধু, কিন্তু.
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সোমবার সিএনবিসিকে বলেন, ‘ভারত কিছু খাত উন্মুক্ত করতে ইচ্ছুক, আমরাও আলোচনায় আগ্রহী। তবে এ বিষয়ে আরও আলোচনা দরকার। তারা বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে কতটা উচ্চাভিলাষী, সেটা বুঝতে এ আলোচনা দরকার।’ খবর সিএনএন
সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে ট্রাম্প বারবার যেসব বিষয়ে জোর দিয়েছেন, সেগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেসব বাজার আগে বন্ধ ছিল, সেগুলো যেন খুলে দেওয়া হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত—কোনো পক্ষই এখনো চুক্তির নির্দিষ্ট সমস্যাগুলো প্রকাশ করেনি। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী গত সপ্তাহে আশাবাদী ছিলেন, ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি সম্ভব।
ভারতের সঙ্গে চুক্তি না হলেও দেশটিকে এখনো আলাদা করে চিঠি দেননি ট্রাম্প। ইতিমধ্যে ১২টির বেশি বাণিজ্য অংশীদারকে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২ এপ্রিল ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যে শুল্ক ৯ জুলাই স্থগিত করা হয়।
ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ককে ট্রাম্প ‘খুব কঠিন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। গত এক দশকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি দ্বিগুণ হয়েছে। ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন, ভারত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। শুধু তা–ই নয়, ট্রাম্প একাধিকবার ভারতকে শুল্কের রাজা আখ্যা দিয়েছেন।
চলতি বছর ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের ঠিক আগে ট্রাম্প বলেন, ‘ওরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শুল্ক নেয়।’ পরবর্তীকালে তিনি মোদিকে এ–ও বলেন, ‘আপনারা আমাদের সঙ্গে ঠিকঠাক আচরণ করছেন না।’
ভারতের তথাকথিত ‘অশুল্ক বাধা’ নিয়ে হোয়াইট হাউস বিশেষভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, যেমন ডিজিটাল সেবায় অতিরিক্ত কর, আমদানি পণ্যে কঠোর পরীক্ষার নিয়ম ইত্যাদি।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। অন্যদিকে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়েছে ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। ভারত থেকে যেসব পণ্য সবচেয়ে বেশি গেছে তার মধ্যে আছে ওষুধ, মুঠোফোনসহ যোগাযোগযন্ত্র ও পোশাক।
কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প প্রশাসন বলে আসছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। এমনকি গত মে মাসে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য থেকে শুল্ক প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে। এ দাবি ভারত সঙ্গে সঙ্গেই নাকচ করে দেয়।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক আরোপ করে, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। সেখানে পণ্য বিক্রি করা খুবই কঠিন। গত ১৫ মে কাতারের দোহায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প এ কথা বলেন। তিনি তখন আরও বলেন, তবে তারা আমাদের কাছ থেকে শুল্কই নেবে না—এমন প্রস্তাব দিয়েছে।
কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পরে সে দাবিকে ‘অসময়োচিত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত আলোচনাকে তিনি ‘জটিল ও সূক্ষ্ম’ বিষয় হিসেবে আখ্যা দেন।
এর আগে এনডিটিভির এক সংবাদে বলা হয়, আগস্টের মাঝামাঝি মার্কিন প্রতিনিধিদলের ভারতে আসার কথা। উভয় পক্ষই অস্থায়ী চুক্তি সই করতে দ্রুত কাজ করছে। আপাতত লক্ষ্য হচ্ছে, ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না হলেও যেন সমঝোতা হয়। সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে এ চুক্তির ঘোষণা হতে পারে, অর্থাৎ আলোচনায় যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো আছে। এদিকে ভারতীয় প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চম দফা আলোচনা শেষে দেশে ফিরেছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেন, ১ আগস্টের পরও অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। যদিও এ সময়সীমার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কঠোর। ওই দিন থেকেই সবাইকে নতুন পাল্টা শুল্ক দিতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প আগস ট র
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’