যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বহুদিন ধরে আলোচনাধীন বাণিজ্য চুক্তি যদি চূড়ান্ত না হয়, তাহলে ভারতের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তারা ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে’।

সাংবাদিক জানতে চান, ভারত কি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার মনে হয়, তাই হবে। ভারত আমার বন্ধু, কিন্তু.

..।’

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সোমবার সিএনবিসিকে বলেন, ‘ভারত কিছু খাত উন্মুক্ত করতে ইচ্ছুক, আমরাও আলোচনায় আগ্রহী। তবে এ বিষয়ে আরও আলোচনা দরকার। তারা বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে কতটা উচ্চাভিলাষী, সেটা বুঝতে এ আলোচনা দরকার।’ খবর সিএনএন

সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে ট্রাম্প বারবার যেসব বিষয়ে জোর দিয়েছেন, সেগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেসব বাজার আগে বন্ধ ছিল, সেগুলো যেন খুলে দেওয়া হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত—কোনো পক্ষই এখনো চুক্তির নির্দিষ্ট সমস্যাগুলো প্রকাশ করেনি। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী গত সপ্তাহে আশাবাদী ছিলেন, ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি সম্ভব।

ভারতের সঙ্গে চুক্তি না হলেও দেশটিকে এখনো আলাদা করে চিঠি দেননি ট্রাম্প। ইতিমধ্যে ১২টির বেশি বাণিজ্য অংশীদারকে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২ এপ্রিল ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যে শুল্ক ৯ জুলাই স্থগিত করা হয়।

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ককে ট্রাম্প ‘খুব কঠিন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। গত এক দশকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি দ্বিগুণ হয়েছে। ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন, ভারত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। শুধু তা–ই নয়, ট্রাম্প একাধিকবার ভারতকে শুল্কের রাজা আখ্যা দিয়েছেন।

চলতি বছর ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের ঠিক আগে ট্রাম্প বলেন, ‘ওরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শুল্ক নেয়।’ পরবর্তীকালে তিনি মোদিকে এ–ও বলেন, ‘আপনারা আমাদের সঙ্গে ঠিকঠাক আচরণ করছেন না।’

ভারতের তথাকথিত ‘অশুল্ক বাধা’ নিয়ে হোয়াইট হাউস বিশেষভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, যেমন ডিজিটাল সেবায় অতিরিক্ত কর, আমদানি পণ্যে কঠোর পরীক্ষার নিয়ম ইত্যাদি।

মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। অন্যদিকে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়েছে ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। ভারত থেকে যেসব পণ্য সবচেয়ে বেশি গেছে তার মধ্যে আছে ওষুধ, মুঠোফোনসহ যোগাযোগযন্ত্র ও পোশাক।

কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প প্রশাসন বলে আসছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। এমনকি গত মে মাসে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য থেকে শুল্ক প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে। এ দাবি ভারত সঙ্গে সঙ্গেই নাকচ করে দেয়।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক আরোপ করে, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। সেখানে পণ্য বিক্রি করা খুবই কঠিন। গত ১৫ মে কাতারের দোহায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প এ কথা বলেন। তিনি তখন আরও বলেন, তবে তারা আমাদের কাছ থেকে শুল্কই নেবে না—এমন প্রস্তাব দিয়েছে।

কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পরে সে দাবিকে ‘অসময়োচিত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত আলোচনাকে তিনি ‘জটিল ও সূক্ষ্ম’ বিষয় হিসেবে আখ্যা দেন।

এর আগে এনডিটিভির এক সংবাদে বলা হয়, আগস্টের মাঝামাঝি মার্কিন প্রতিনিধিদলের ভারতে আসার কথা। উভয় পক্ষই অস্থায়ী চুক্তি সই করতে দ্রুত কাজ করছে। আপাতত লক্ষ্য হচ্ছে, ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না হলেও যেন সমঝোতা হয়। সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে এ চুক্তির ঘোষণা হতে পারে, অর্থাৎ আলোচনায় যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো আছে। এদিকে ভারতীয় প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চম দফা আলোচনা শেষে দেশে ফিরেছে।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেন, ১ আগস্টের পরও অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। যদিও এ সময়সীমার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কঠোর। ওই দিন থেকেই সবাইকে নতুন পাল্টা শুল্ক দিতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প আগস ট র

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ