স্বাধীনতাযুদ্ধকে যখন শুধু আওয়ামী লীগিকরণ করা হচ্ছিল, তখন তাজউদ্দীন আহমদ সেটার বিরোধিতা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর কন্যা শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ শুধু আওয়ামী লীগের নয়। উনি পুরো জাতির। তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক।

আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা-২০২৫’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শারমিন আহমদ। সেখানেই তিনি এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে কথা বলেন শারমিন আহমদ। তিনটি শর্তের ওপর ভিত্তি করে এই চুক্তি হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, স্বীকৃতি বাদে বন্ধুত্ব হয় না। সেই স্বীকৃতি হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ ভারতীয় সেনাবহিনীর একক কমান্ডে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘না, এটি যৌথ কমান্ডের ভিত্তিতে হবে। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।’

আরও পড়ুনজন্মদিনে ডায়েরিতে যা লিখেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ২৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনতাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ২৮ জুলাই ২০২৫

শারমিন আহমদ বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ প্রতিরোধ না করলে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের চুক্তিপত্রে লেখা থাকত ভারতের কাছে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার যখনই মনে করবে, তখনই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে, এটিই ছিল তৃতীয় শর্ত বলে জানান শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ওই শর্তের ভিত্তিতেই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তনের জন্য বলেন।

আরও পড়ুনতাজউদ্দীন আহমদ: রোজনামচার মানুষটিকে বোঝা২৩ জুলাই ২০২৫

অনুষ্ঠানে হতাশা প্রকাশ করে শারমিন আহমদ বলেন, এসব ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এসব ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়নি বলেই ভারতীয়রা এ দেশ স্বাধীন করেছে, এমন বয়ান তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এটা খুব লজ্জার ব্যাপার। এই তথ্যগুলো নিয়ে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে হবে। কেননা, গৌরবমণ্ডিত ইতিহাস সংরক্ষণ না করা হলে জাতি আরও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্মারক বক্তা ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। তাঁর বর্ক্তৃতার শিরোণাম ছিল ‘তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি : ঐতিহাসিকতা ও রাজনৈতিকতা।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত জউদ দ ন আহমদ অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকার মিশন নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মিশন চালু করার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে ফিলিস্তিনের গাজার মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ। কিন্তু সেখানে জাতিসংঘের তেমন কার্যক্রম দেখা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি।

আজ সোমবার রাজধানীর ডিআরইউ মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। ‘ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস সংক্রান্ত চুক্তিকে কেন্দ্র করে করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ।

আরও পড়ুনজাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন চালু হওয়া নিয়ে হেফাজতের প্রতিবাদ১৯ জুলাই ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার মৌলিক অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ফ্যাসিজমের সময়ে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে, যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ও অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো মনে করেছে বাংলাদেশে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের একটা অফিস স্থাপন দরকার। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া, কোনো চুক্তি ছাড়া এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটা ন্যায়সংগত হয়নি।

বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মৌলিক ও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। পাশাপাশি দেশে যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতি, তাতে কী কী অনুমোদন করে, তা–ও বিবেচনায় নিতে হবে।

আরও পড়ুনজাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন চালু হচ্ছে ঢাকায়১৮ জুলাই ২০২৫

বৃহৎ রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মিশন স্থাপনের চুক্তি হলে বিতর্ক তৈরি হতো না বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক যে অফিস স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা রিভিউ করার একটা সময়সীমা আছে। সম্ভবত এক বছর বা দুই বছর পর তা রিভিউ হবে। তিন বছর পর সেটা রিনিউ করবে কি না, তা পরবর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দেবেন, তারা যেন সবকিছু যাচাই-বাছাই করে এই মিশন স্থাপনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে। তবে বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত থাকুক, সেটা সবার প্রত্যাশা।

আরও পড়ুনমানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে সহায়তা দিতেই মানবাধিকার মিশন চালু হচ্ছে : প্রেস উইং১৯ জুলাই ২০২৫

ঢাকায় জাতিসংঘের নতুন আবাসিক প্রতিনিধি নিয়োগ নিয়ে একটি ‘সাংঘাতিক’ খবর আছে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, তাঁরা শুনতে পেয়েছেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের বর্তমান আবাসিক প্রতিনিধির মেয়াদ শেষের দিকে। তাঁর স্থলে যিনি আসবেন, তাঁর ব্যাপারে তাঁরা কিছু আপত্তিকর কথা শুনেছেন। হয়তো বাংলাদেশ সরকার তাঁকে অনুমতি দেওয়ার আগে বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। তিনি এর বেশি খোলাসা করে বলতে চান না। কারণ, বিষয়টি স্পর্শকাতর। অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের নতুন আবাসিক প্রতিনিধিকে অনুমোদন দেওয়ার আগে যাতে তাঁর বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, তাঁদের কথা হলো, দেশ ও ইসলামের স্বার্থে তাঁরা কারও মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবেন না।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, অবস্থা এমন যে পুলিশ ঘুষ খায়, আবার ঘরে চুরি হলে পুলিশকেই ফোন করতে হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মিশন স্থাপনের বিষয়টিও একই রকম। সরকার ভারতীয় অপপ্রচার ঠেকাতে এমন মিশন আনতে চাইছে বলে তাঁদের জানিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুততার সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের মিশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকার শব্দকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই মিশন স্থাপিত হলে বিপদ আরও ঘনীভূত হবে। তাঁরা এই মিশন নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথাও বলছে না।

আরও পড়ুনঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না: মামুনুল হক১১ জুলাই ২০২৫

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির সালাউদ্দিন নানুপুরী, আহমদ আলী, মহিউদ্দিন রাব্বানী, যুগ্ম মহাসচিব হারুন এজহার, মীর মোহাম্মদ ইদ্রিস, ফজলুল করিম, সাখাওয়াত হোসেন, সহকারী মহাসচিব আতাউল্লা আমিন, জাতীয় ওলামা মাশায়েখের মহাসচিব রেজাউল করিম, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল হক প্রমুখ।

আরও পড়ুনজাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খোলার অনুমতি দীর্ঘ মেয়াদে বিপদ ডেকে আনবে: ইসলামী আন্দোলন১৪ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
  • মানিব্যাগ তুলতে সেপটিক ট্যাংকে নেমে বড় ভাইয়ের মৃত্যু, ছোট ভাই হাসপাতালে
  • ৪ কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১টি স্থাপনার নাম বদল
  • মাদকাসক্ত ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা, থানায় আত্মসমর্পণ বাবা-মায়ের
  • ‘মাদকাসক্ত’ ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার পর থানায় আত্মসমর্পণ মা-বাবার
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
  • মানবাধিকার মিশন নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ