নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
Published: 30th, July 2025 GMT
‘ভাইবোনেরা রাস্তায় রক্ত দিচ্ছে, আমি ঘরে বসে থাকব কেন?’— এই প্রশ্ন থেকেই রাজধানী ঢাকার নতুনবাজারের রাস্তায় নেমেছিলেন রনি। আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। আজো শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন চারটি রাবার বুলেটের যন্ত্রণা।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মেহেদী হাসান রনি। জুলাই ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলোতে তিনি হয়ে ওঠেন নতুনবাজারের মিছিলে সবচেয়ে পরিচিত মুখ। পুলিশের রাবার বুলেট তার শরীর ঝাঁঝরা করে দেয়। তিনি আজ লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে আছেন।
১৩ ও ১৪ জুলাই পুলিশের দমন-পীড়নের ছবি ছড়িয়ে পড়তেই রনির ভেতরে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। ১৫ জুলাই তিনি সহপাঠীদের নিয়ে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন নতুনবাজার ব্লকেড কর্মসূচিতে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের ভয়ঙ্কর অধ্যায়।
আরো পড়ুন:
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাবি শিবিরের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি
সেই রাতেই শুরু হয় হামলা, হুমকি, ভীতি প্রদর্শন। বন্ধু আহত হয়েছেন, নিজে হুমকি পেয়েছেন, কিন্তু পিছিয়ে যাননি রনি। সাতারকুলে থাকার সময় একাধিকবার ফোনে ভয় দেখানো হয়েছিল তাকে। তবে তার কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা।
১৮ জুলাই ভোরে তিনি আবারো রওনা দেন নতুনবাজারের দিকে। তখন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থীরা একত্রিত হন। রনি ছিলেন মিছিলের সামনের সারিতে। মাইকে স্লোগান দিতে দিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু লিংক রোডে পৌঁছাতেই পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় শুরু হয়, ধেয়ে আসে টিয়ারশেল আর রাবার বুলেটের বৃষ্টি।
কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রনি গুলিবিদ্ধ হন। শরীরে একে একে লাগে ১৪টি রাবার বুলেট। সহপাঠীরা আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে গোপনে আত্মীয়ের বাড়িতে রাখা হয়। এরপর নদীপথে কৌশলে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তার শরীর থেকে নয়টি বুলেট বের করা হয়। গলার ভেতরে থাকা একটি বুলেট বের করতে আলাদা করে অপারেশন করতে হয়। কিন্তু এখনো তার শরীরে রয়ে গেছে চারটি রাবার বুলেট। আজো তিনি সেই বুলেটের ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছেন।
শরীরে ক্ষতচিহ্ন আছে, কিন্তু চোখে অনুতাপ নেই। তিনি শুধু বলেন, “আমার শরীরে গুলি লেগেছে- মানে ওরা হাজার শিক্ষার্থীর কণ্ঠ রোধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি থামিনি, আজো থামিনি।”
ঢাকা/রাকিবুল/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’