রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
Published: 30th, July 2025 GMT
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও গুরুতর নিপীড়ন চালাচ্ছে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সোমবার এ কথা বলেছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, রাখাইনে আরাকান আর্মির দখল করা এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট, নির্বিচারে আটক ও খারাপ আচরণ, বাধ্যতামূলক শ্রম এবং জোর করে বাহিনীতে ভর্তি করানোর মতো নানা নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়ে আসছে। জাতিবিদ্বেষের মতো চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ এরই অংশ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেছেন, ‘রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে আসছে, আরাকান আর্মিও ঠিক সে রকম দমননীতি অনুসরণ করছে। তাদের উচিত, এই বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নমূলক আচরণ বন্ধ করে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা।’
২০২৩ সালের নভেম্বরে নতুন করে সংঘর্ষ শুরুর পর মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কাছ থেকে কিছু এলাকা দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, তখন আরাকান আর্মি সেসব অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে রোহিঙ্গারা বলেছে, তাদের জীবন এখনো কঠিন ও শৃঙ্খলিত। আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান বৈষম্যমূলক নীতি-বিধি ও চর্চা অব্যাহত রেখেছে।
‘অনুমতি ছাড়া আমাদের কাজ করা, মাছ ধরা, চাষাবাদ এমনকি চলাচলও নিষেধ ছিল। আমরা খাবারের তীব্র সংকটে ছিলাম। এ সময় অধিকাংশ মানুষ একে অপরের কাছে ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন।’জুন মাসে বাংলাদেশে আসা ৬২ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীমিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যের বুথিডং উপজেলা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গত এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে এসব সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
জুন মাসে বাংলাদেশে আসা ৬২ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেছেন, ‘আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে জীবন অসম্ভব রকম কড়াকড়ির মধ্যে ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া আমাদের কাজ করা, মাছ ধরা, চাষাবাদ এমনকি চলাচলও নিষেধ ছিল। আমরা খাবারের তীব্র সংকটে ছিলাম। এ সময় অধিকাংশ মানুষ একে অপরের কাছে ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন।’
এইচআরডব্লিউ বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাতের মধ্যে আটকে পড়েছেন রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। দুই পক্ষই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও বেআইনিভাবে বাহিনীতে ঢোকানোর মতো গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে।
২০২৩ সালের শেষ ভাগ থেকে রাখাইন ও চিন রাজ্যে চার লাখের বেশি মানুষ দেশের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর এ সময় প্রায় ২ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।
রোহিঙ্গা গ্রামবাসীরা সংস্থাটিকে বলেছেন, আরাকান আর্মি তাঁদের কৃষিজমি, বাড়িঘর, গবাদিপশু, মাছ ধরার সরঞ্জাম, জ্বালানির কাঠ এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে।
বুথিডংয়ের কিন টং গ্রামের দুই বাসিন্দা বলেন, মে মাসে তাঁদের কবরস্থানটি ধ্বংস করে দেয় আরাকান আর্মি। তাঁদের বলে, এখন থেকে ধানক্ষেতে মরদেহ দাফন করতে হবে।
এইচআরডব্লিউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করার পর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও অন্যান্য রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আবারও রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়েছে।
বুথিডংয়ের কিন টং গ্রামের দুই বাসিন্দা বলেন, মে মাসে তাঁদের কবরস্থানটি ধ্বংস করে দেয় আরাকান আর্মি। তাঁদের বলে, এখন থেকে ধানক্ষেতে মরদেহ দাফন করতে হবে।মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, যুদ্ধ এবং রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের জোর করে বাহিনীতে ভর্তি করানোর ফলে মুসলিম রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২৪ সালের মে থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গাশিবিরে নতুন করে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী নিবন্ধিত হয়েছেন। সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা কোনো সরকারি ত্রাণ বা সহায়তা না পাওয়ার কথা বলেছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ মনে করে, সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। তবে জাতিসংঘ ও উদ্বিগ্ন দেশগুলোর উচিত জোর দিয়ে বলা যে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কোনো পরিবেশ এখন নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এইচআরডব ল উ আর ক ন আর ম র র খ ইন র জ য শরণ র থ বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মালেগাঁওয়ে কবরস্থানে বিস্ফোরণ মামলায় বিজেপি নেত্রী প্রজ্ঞাসহ সবাই খালাস
ভারতের মহারাষ্ট্রের মালেগাঁওয়ে ১৭ বছর আগে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত সাতজনকেই বেকসুর খালাস দিলেন এনআইএর বিশেষ আদালত। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে লোকসভায় নির্বাচিত বিজেপি নেত্রী সাধ্বী প্রজ্ঞা।
আজ বৃহস্পতিবার এনআইএর বিশেষ আদালতের বিচারক এ কে লাহোটি তাঁর রায়ে বলেন, শুধু সন্দেহের বশে মামলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্যপ্রমাণ দাখিল করা হয়েছে, তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বাইকটিও যে সাবেক সংসদ সদস্যের, তা প্রমাণ করা যায়নি।
এ মামলায় মোট ৩২৩ জন সাক্ষীর বয়ান খতিয়ে দেখে বিচারপতি লাহোটি বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনাটি ভয়াবহ, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু নিতান্তই সন্দেহের বশে ও নৈতিকতার যুক্তিতে কাউকে দোষী ঠাওর করা যায় না।
মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিক জেলার মালেগাঁও শহরে ২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে এক বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যু হয়, আহত হয়েছিলেন শতাধিক। শহরের মসজিদ লাগোয়া এক কবরস্থানে এক বাইকে দুটি বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল। তাতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
অভিযোগ উঠেছিল, পূর্ববর্তী সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা হিসেবে মুসলিম–অধ্যুষিত এলাকায় ওই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। ব্যবহৃত বাইকটির মালিক ছিলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা। মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন সংস্থার তদন্তে জানা যায়, এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ওই দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত।
ওই মামলার তদন্তের সময় সাধ্বী প্রজ্ঞা ও এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজনেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিলেন। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
তদন্তে জানা গিয়েছিল, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বাইকটি প্রজ্ঞার নামে নিবন্ধন করা ছিল। কিন্তু ফরেনসিক তদন্তে তা প্রমাণ করা যায়নি। তা ছাড়া আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, প্রজ্ঞা ওই ঘটনার দুই বছর আগেই সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। এরপর তদন্তের ভার এনআইএ গ্রহণ করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রয়োগ করা হয়েছিল। অস্ত্র আইনে মামলাও রুজু হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি লোহাটি জানান, এই মামলায় ইউএপিএ প্রযোজ্য হবে না।
মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে ভোপাল থেকে বিজেপি প্রার্থী করে। তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। ভোটে প্রজ্ঞা জিতে যান। ২০২৪ সালের ভোটে অবশ্য বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেনি।
বেকসুর খালাস পাওয়ার পর ৫৫ বছর বয়সী সাধ্বী প্রজ্ঞা গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাঁর ওপর অত্যাচার হয়েছিল। তাঁর জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। বেঁচে রয়েছেন সন্ন্যাসী হয়েছেন বলে। তিনি দাবি করেন, মামলাটি ছিল গেরুয়া অবমাননার। তবে গেরুয়ারই জয় হয়েছে। হিন্দুত্বের জয় হয়েছে।