রাজশাহীতে এবার আষাঢ় মাসের ‘উপহার’ এক কোটি টাকা
Published: 2nd, August 2025 GMT
এবার আষাঢ় কী উপহার দিয়ে গেল—এ প্রশ্নে যে কেউ বলে উঠবেন, কেন, কদম ফুল। আর মাসজুড়ে বৃষ্টির ঘ্যানর ঘ্যানর। রাজশাহীতে ছাতা ছাড়া কোথাও বের হওয়া যায়নি। তবে হাওয়াটা ছিল বেশ শীতল, বাতাসটা নির্মল। গাছের পাতারা প্রতিদিনই বৃষ্টির ফোঁটায় ধুয়ে নিয়েছে গায়ের ময়লাধুলো। এতে সবুজ পাতারা আরও সবুজ হয়েছে। প্রাণপ্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে।
কিন্তু আষাঢ়ের এই ৩১ দিনের সরাসরি কোনো আর্থিক অবদানও কি আছে? রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব বলছে, হ্যাঁ। এবার আষাঢ় মাসে লাগাতার বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া শীতল ছিল। ফলে এসি (শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) ও বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবহার কম ছিল। এতে গত বছরের চেয়ে রাজশাহী শহরে ১ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৮ টাকা মূল্যের বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে। যাকে কেউ কদম ফুলের সঙ্গে এবারের আষাঢ়ের বাড়তি উপহার বলতেই পারেন। কারণ, গত বছর আষাঢ়ে বৃষ্টি হয়েছিল মাত্র এক দিন। আর এবার হয়েছে সব দিন।
রাজশাহীতে নিয়মিত আবহাওয়ার তথ্য লিপিবদ্ধ করেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক শিক্ষক ও নওগাঁর শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ। তাঁর হিসাবমতে, এবার আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এক দিনও ভারী বৃষ্টি হয়নি। গত বছর আষাঢ় মাসে মাত্র এক দিন বৃষ্টি হয়েছে। তার আগের বছর ২০২৩ সালে হয়েছে মাত্র তিন দিন। ২০২২ সালে হয়েছে চার দিন, ২০২১ সালে ছয় দিন এবং ২০২০ সালে হয়েছে পাঁচ দিন। তিনি ১৩ বছর ধরে আবহাওয়ার ডায়েরি লিখছেন। তার মধ্যে এ বছরের মতো বৃষ্টির চেহারা দেখেননি।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, জলমগ্ন রাস্তায় মাছ শিকার২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বছর আষাঢ়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আষাঢ় মাসজুড়েই এ রকম চড়া তাপ সইতে হয়েছে রাজশাহীর মানুষকে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আজিজুল হক জানিয়েছেন, মানুষের শরীরের ভেতরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৬ দশমিক ৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। বাইরের তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি মানুষের কাছে অসহনীয় লাগে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর আষাঢ়ের ২৮ তারিখে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মানুষের শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়েও কম। শুধু তা–ই নয়, মাসজুড়েই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ছিল কম।
গাছের পাতারা প্রতিদিনই বৃষ্টির ফোঁটায় ধুয়ে নিয়েছে গায়ের ময়লাধুলো। ৯ জুলাই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ডাকরা গ্রামে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গত বছর
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কম দায়ী নয়: উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বনভূমি উজাড় ও গাছপালা কমে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাঙামাটি শহরের জিমনেশিয়াম মাঠে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে যদি বলা হয় যে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই, তাহলে খুব বেশি ভুল হবে না। ৮০ সাল পর্যন্ত এখানে বন ছিল, গাছপালা ছিল, ঝোপঝাড় ছিল। এই অঞ্চলে বা দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কোনো অংশ কম দায়ী নয়।
সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চেয়ে বড় আকারের বনভূমি এখন মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী কিংবা সিলেটে দেখা যায়। পার্বত্য অঞ্চলে এই অবস্থা কেন সৃষ্টি হলো সবার ভাবতে হবে।
পার্বত্য উপদেষ্টা আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সাধারণত ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে শীতের অনুভূতি পাওয়া যেত। এখন কার্তিক মাসেও শীতের অনুভূতি পাওয়া যায় না। যারা আদিকাল থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করে আসছে, তারা প্রকৃতি সচেতন ছিল। তাই তাদের ওপর খুব বেশি ভূমি ধস হয়েছে শোনা যায় না। তাদের বাড়িঘরেও হয়নি। প্রকৃতিকে যারা চেনে না, তাদের ওপর ভূমিধস হয়।
বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব এ কে এম আকমল হোসেন আজাদ, রাঙামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. আবদুল আওয়াল সরকার, জেলা পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, সিভিল সার্জন নূয়েন খীসা, দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এসম সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। এর আগে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করা হয়। ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই মেলা চলবে। বৃক্ষমেলায় ২১টি স্টল অংশগ্রহণ করেছে।