তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি 

১৯৪৭-৪৮ (প্রথম খণ্ড)

অনুবাদ: বেলাল চৌধুরী

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন

প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল; মূল্য: ৫০০ টাকা

পৃষ্ঠা: ২১৬; প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০২০

এই ডায়েরিতে উঠে এসেছে এক ২২ বছর বয়সী স্বল্পবিত্ত ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীর নিবিষ্ট জীবনের প্রতিদিনের খতিয়ান। প্রত্যুষে ওঠা, পড়াশোনার অগ্রগতি, দিন কেমন কাটল—সবকিছুই তিনি নিয়মিতভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর শিক্ষা বিষয়ে নিষ্ঠা ও সতর্কতা গভীরভাবে অনুধাবনযোগ্য। ডায়েরির পাতায় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালনের বিবরণ যেমন রয়েছে, তেমনি স্থান পেয়েছে ছাত্ররাজনীতির ঘটনাপঞ্জি ও সময়ের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবেশের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ। এতে ধরা পড়ে সেই সময়কার ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীদের জীবনযাত্রা, আন্তসম্পর্ক ও সংগ্রামী বাস্তবতা। আর প্রতিদিনের শেষে আবহাওয়ার চুম্বক বিবরণ একজন প্রকৃতিপ্রেমী, সংবেদনশীল তরুণের আত্মজৈবনিক চেতনার জানান দেয়। এই ডায়েরি কেবল একজন কর্মীর দিনলিপি নয়, বরং তা এক যুগসচেতন তরুণের আত্মপ্রত্যয়ের দলিল।

তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতি ও সমাজসেবায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের কারণে শিক্ষাজীবনে বারবার ছেদ পড়লেও তিনি কখনো শিক্ষাকে উপেক্ষা করেননি। 

মানুষের প্রতি তাঁর গভীর দায়বদ্ধতার নিদর্শন পাওয়া যায় ১৯৫০–এর দুর্ভিক্ষ–পরবর্তী উদ্যোগে। খাদ্যের অভাবে মানুষের মৃত্যু তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ‘ধর্মগোলা’ প্রকল্পের সূচনা করেন, যেখানে ফসলের মৌসুমে শস্য সংরক্ষণ করে দুর্যোগকালে ক্ষুধার্তদের সহায়তা করা হতো। 

তাজউদ্দীন আহমদ মহাত্মা গান্ধীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ পোষণ করতেন। তাঁর মৃত্যু তাজউদ্দীনকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেদিন ছিল শুক্রবার। রাত আটটার দিকে বন্ধু জলিল তাঁকে খবরটি জানান। প্রথমে তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি—সংবাদটি অসত্য বলে মনে হচ্ছিল। গান্ধীর মতো অহিংসার প্রতীক একজন মহামানবের এভাবে বিদায় তাঁকে গভীর শোকে বিমূঢ় ও হতবাক করে তোলে। ধাক্কাটা এতটাই তীব্র ছিল যে কিছু সময়ের জন্য তিনি স্নায়বিক দৌর্বল্যে ভুগেছিলেন। এ ঘটনার মাধ্যমে তাঁর সংবেদনশীলতা ও আদর্শিক মানসিকতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ওই দিনই, অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ তারিখে তিনি লিখেছেন, ‘আমার কাছে মৃত্যু একটা সাধারণ ব্যাপার, স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি কারও মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন হইনি।’ এমনকি সেটা তাঁর বাবা, কিংবা বড় ভাইয়ের মৃত্যুতেও নয়। বাবার মৃত্যুর পর ‘আমার মনে আছে, কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে গ্রামের বাড়ি, এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তাই বাবার মৃত্যুর খবর শোনার মাত্র ১৫ মিনিট পরেই আমি ৪টা পরোটা এবং এক বাটি মাংস খেয়েছিলাম। আমার তো এ কথাও মনে আছে, তার পরের রাতে যে বিছনায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন, সেই বিছানাতে আমি ভালো ঘুমিয়ে ছিলাম।’ অথচ গান্ধীজির মৃত্যুতে তিনি লিখলেন, ‘গান্ধীজির মৃত্যুতে আমি তেমনটি হতে পারছিনে কেন?.

..জাগ্রত অবস্থাতে গান্ধীজি আমাকে আপ্লুত করে রাখলেন। স্নায়ু বিবশ হলো। আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলাম। কিন্তু সে তন্দ্রার মধ্যেও তো গান্ধীজি আমাকে আপ্লুত করে রাখলেন।’

বইটি শুধু ইতিহাস নয়, এক আত্মনিবেদিত, প্রজ্ঞাবান, মানবিক রাজনৈতিক সত্তার নির্মাণপ্রক্রিয়ার প্রতিচ্ছবি। ছাত্রজীবন, দায়বদ্ধতা, শিক্ষাপ্রীতি, আদর্শবাদ—সব মিলিয়ে এই ডায়েরি এক মহান রাষ্ট্রনায়কের অন্তর্জগতের অসাধারণ দলিল হয়ে উঠেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত জউদ দ ন র জন ত ক প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া

পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান। শনিবার (১ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, বুধবারের নির্বাচনে তিনি ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। খবর বিবিসির। 

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব এবং ব্যাপক অস্থিরতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন ঘিরে দেশটিতে গত কয়েক দিনে সহিংসতায় কয়েক শ’ মানুষ নিহত ও বহু আহত হয়েছে। দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে নিহতের সঠিক সংখ্যা যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরকার সহিংসতার মাত্রা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অস্থিরতা দমনে দেশজুড়ে কারফিউও বাড়ানো হয়েছে।

ক্ষমতাসীন চামা চা মাপিন্দুজি (সিসিএম) দলের প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভোটের আগে ভিন্নমত পোষণকারী ও বিরোধীদের ওপর কঠোর দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রধান দুই বিরোধী দলকেই নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়নি।

ফলে নির্বাচনের পরই বৃহত্তম নগরী দার-এস-সালাম ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবারও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। অস্থিরতা বন্ধ করার জন্য সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা সামিয়ার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং অসংখ্য গাড়ি, পেট্রোল স্টেশন এবং থানায় আগুন দেয়। 

বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশিরভাগ তরুণ বিক্ষোভকারীরা, যারা নির্বাচনকে অন্যায্য বলে সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার প্রধান বিরোধী নেতাদের দমন করে গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করছে। প্রধান দুই বিরোধী নেতার মধ্যে একজন কারাগারে রয়েছেন এবং অন্যজনকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী চাদেমা দলের একজন মুখপাত্র শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে তানজানিয়ার একটি কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, কমপক্ষে ৫০০ জন মারা যাওয়ার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কম্বো থাবিত এই সহিংসতাকে ‘এখানে-সেখানে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনী খুব দ্রুত ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করেছে।”

প্রধান দুই বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে চাদেমা দলের টুন্ডু লিসুকে নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগ আটক করা হয়, যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এসিটি-ওয়াজালেনডো দলের নেতা লুহাগা এমপিনাকে আইনি কৌশল খাটিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।

১৬টি প্রান্তিক দল, যাদের কারোরই ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন ছিল না, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

সামিয়ার ক্ষমতাসীন দল সিসিএম, দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কখনও কোনো নির্বাচনে সিসিএম হারেনি।

নির্বাচনের আগে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিরোধী ব্যক্তিত্বদের জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের নিন্দা জানিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর ২০২১ সালে তানজানিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সামিয়া ক্ষমতায় আসেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজ বাসা থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
  • নির্বাচনের আগে একটি দল জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায়: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • টেকনাফে মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কা, নিহত ১