যুগান্তকারী নেতৃত্বের প্রস্তুতিপর্বের খতিয়ান
Published: 4th, August 2025 GMT
তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি
১৯৪৭-৪৮ (প্রথম খণ্ড)
অনুবাদ: বেলাল চৌধুরী
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল; মূল্য: ৫০০ টাকা
পৃষ্ঠা: ২১৬; প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০২০
এই ডায়েরিতে উঠে এসেছে এক ২২ বছর বয়সী স্বল্পবিত্ত ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীর নিবিষ্ট জীবনের প্রতিদিনের খতিয়ান। প্রত্যুষে ওঠা, পড়াশোনার অগ্রগতি, দিন কেমন কাটল—সবকিছুই তিনি নিয়মিতভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর শিক্ষা বিষয়ে নিষ্ঠা ও সতর্কতা গভীরভাবে অনুধাবনযোগ্য। ডায়েরির পাতায় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালনের বিবরণ যেমন রয়েছে, তেমনি স্থান পেয়েছে ছাত্ররাজনীতির ঘটনাপঞ্জি ও সময়ের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবেশের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ। এতে ধরা পড়ে সেই সময়কার ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীদের জীবনযাত্রা, আন্তসম্পর্ক ও সংগ্রামী বাস্তবতা। আর প্রতিদিনের শেষে আবহাওয়ার চুম্বক বিবরণ একজন প্রকৃতিপ্রেমী, সংবেদনশীল তরুণের আত্মজৈবনিক চেতনার জানান দেয়। এই ডায়েরি কেবল একজন কর্মীর দিনলিপি নয়, বরং তা এক যুগসচেতন তরুণের আত্মপ্রত্যয়ের দলিল।
তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতি ও সমাজসেবায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের কারণে শিক্ষাজীবনে বারবার ছেদ পড়লেও তিনি কখনো শিক্ষাকে উপেক্ষা করেননি।
মানুষের প্রতি তাঁর গভীর দায়বদ্ধতার নিদর্শন পাওয়া যায় ১৯৫০–এর দুর্ভিক্ষ–পরবর্তী উদ্যোগে। খাদ্যের অভাবে মানুষের মৃত্যু তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ‘ধর্মগোলা’ প্রকল্পের সূচনা করেন, যেখানে ফসলের মৌসুমে শস্য সংরক্ষণ করে দুর্যোগকালে ক্ষুধার্তদের সহায়তা করা হতো।
তাজউদ্দীন আহমদ মহাত্মা গান্ধীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ পোষণ করতেন। তাঁর মৃত্যু তাজউদ্দীনকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেদিন ছিল শুক্রবার। রাত আটটার দিকে বন্ধু জলিল তাঁকে খবরটি জানান। প্রথমে তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি—সংবাদটি অসত্য বলে মনে হচ্ছিল। গান্ধীর মতো অহিংসার প্রতীক একজন মহামানবের এভাবে বিদায় তাঁকে গভীর শোকে বিমূঢ় ও হতবাক করে তোলে। ধাক্কাটা এতটাই তীব্র ছিল যে কিছু সময়ের জন্য তিনি স্নায়বিক দৌর্বল্যে ভুগেছিলেন। এ ঘটনার মাধ্যমে তাঁর সংবেদনশীলতা ও আদর্শিক মানসিকতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ওই দিনই, অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ তারিখে তিনি লিখেছেন, ‘আমার কাছে মৃত্যু একটা সাধারণ ব্যাপার, স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি কারও মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন হইনি।’ এমনকি সেটা তাঁর বাবা, কিংবা বড় ভাইয়ের মৃত্যুতেও নয়। বাবার মৃত্যুর পর ‘আমার মনে আছে, কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে গ্রামের বাড়ি, এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তাই বাবার মৃত্যুর খবর শোনার মাত্র ১৫ মিনিট পরেই আমি ৪টা পরোটা এবং এক বাটি মাংস খেয়েছিলাম। আমার তো এ কথাও মনে আছে, তার পরের রাতে যে বিছনায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন, সেই বিছানাতে আমি ভালো ঘুমিয়ে ছিলাম।’ অথচ গান্ধীজির মৃত্যুতে তিনি লিখলেন, ‘গান্ধীজির মৃত্যুতে আমি তেমনটি হতে পারছিনে কেন?.
বইটি শুধু ইতিহাস নয়, এক আত্মনিবেদিত, প্রজ্ঞাবান, মানবিক রাজনৈতিক সত্তার নির্মাণপ্রক্রিয়ার প্রতিচ্ছবি। ছাত্রজীবন, দায়বদ্ধতা, শিক্ষাপ্রীতি, আদর্শবাদ—সব মিলিয়ে এই ডায়েরি এক মহান রাষ্ট্রনায়কের অন্তর্জগতের অসাধারণ দলিল হয়ে উঠেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত জউদ দ ন র জন ত ক প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধিতা মনে করছে বিএনপি
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণাকে স্ববিরোধিতা বলে মনে করছে বিএনপি।
জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ চারটি রাজনৈতিক দল। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।
এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় রাস্তায় কর্মসূচি দেওয়া অনেকটা স্ববিরোধিতা। তবে অবশ্যই যেকোনো দলের কর্মসূচি দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। তারা কর্মসূচি দিতে পারে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদজামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের দাবির মধ্যে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি কখনো ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল না। এখন কোনো দল তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এটি নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে চাইলে দিতে পারে। কিন্তু জনগণের নামে এক দলের আদর্শ বা দাবি অন্যদের ওপর আরোপ করা কতটা সঠিক, সেটা দেখতে হবে।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলেছি, শুধু প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। আগে আইন ছিল না, এখন আইন হয়েছে। কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত। এখন ঢালাওভাবে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে চাইলে তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটা জনগণ বিবেচনা করবে।’
শুরু থেকেই আমরা বলেছি, শুধু প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। আগে আইন ছিল না, এখন আইন হয়েছে। কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত। সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি নেতাসালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না, সেটাও দেখতে হবে। যারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার অধিকার আছে। তারা যদি রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে কর্মসূচি দেয়, তাদের মাঠের রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব বিএনপি মাঠের বক্তৃতার মাধ্যমেই দেবে।