আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় শিশুদের যৌনবৃত্তিতে জড়াচ্ছেন কিছু নারী। সেখানে এসব নারীকে ‘ম্যাডাম’ নামে ডাকা হয়ে থাকে। তাঁরা মাত্র ১৩ বছর বয়সী শিশুদের পর্যন্ত যৌনকর্মে জড়াতে বাধ্য করছেন। বিবিসি আফ্রিকা আই–এর এক অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

কেনিয়ার রিফট ভ্যালির ট্রানজিট শহর মাই মাহিউতে দিনরাত ট্রাক ও লরি চলাচল করে। পণ্য ও মানুষ নিয়ে এসব যানবাহন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, এমনকি উগান্ডা, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্রের মতো অন্য দেশ পর্যন্ত যায়।

শহরটির অবস্থান নাইরোবি থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরে। এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি আগে থেকেই যৌন ব্যবসার জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন এটি শিশুদের যৌন নিপীড়নের জায়গাও হয়ে উঠেছে।

চলতি বছরের শুরুতে বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের দুজন নারী অনুসন্ধানী প্রতিবেদক যৌনকর্মী সেজে ওই শহরের যৌন ব্যবসা চক্রের ভেতরে ঢুকে পড়েন। ওই দুই অনুসন্ধানী সাংবাদিক এমন ভাব করছিলেন, যেন কীভাবে ‘ম্যাডাম’ হওয়া যায়, তা তাঁরা শিখতে চান।

ওই দুই সাংবাদিক গোপনে কিছু ভিডিও ধারণ করেছেন। ভিডিওতে অন্য দুজন নারীকে কথা বলতে শোনা যায়। তাঁরা বলছিলেন, এটা যে বেআইনি কাজ, তা তাঁরা জানেন। এরপর ওই দুই নারী বিবিসির সাংবাদিকদের সঙ্গে যৌন পেশায় জড়িত কয়েকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের পরিচয় করিয়ে দেন।

আরও পড়ুনঅনলাইনে যৌন নিপীড়নের শিকার বছরে ৩০ কোটি শিশু ২৮ মে ২০২৪

বিবিসি ওই ভিডিও এবং তাদের পাওয়া সব তথ্য গত মার্চে কেনিয়ার পুলিশকে দেয়। বিবিসির ধারণা, এরপর ‘ম্যাডামরা’ তাঁদের জায়গা বদলে ফেলেছেন। পুলিশ বলেছে, যেসব নারী ও মেয়েদের ভিডিওতে দেখা গেছে, তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

কেনিয়ায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। মামলায় জিততে হলে পুলিশের ও সংশ্লিষ্ট শিশুর সাক্ষ্য দরকার হয়। কিন্তু বেশির ভাগ সময় শিশুরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে ভয় পায়।

কেনিয়ার রিফট ভ্যালির ট্রানজিট শহর মাই মাহিউতে দিনরাত ট্রাক ও লরি চলাচল করে। পণ্য ও মানুষ নিয়ে এই যানবাহনগুলো দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, এমনকি উগান্ডা, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্র পর্যন্ত যায়।

বিবিসির রাতের আঁধারে গোপনে ধারণ করা ঝাপসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক নারী নিজেকে ‘নিয়ামবুরা’ নামে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি হেসে হেসে বলছেন, ‘তারা তো এখনো বাচ্চা। তাই একটু মিষ্টি দিলেই সহজে কাবু করে ফেলা যায়।’

নিয়ামবুরা নামের ওই নারী বলেন, ‘মাই মাহিউতে যৌনবৃত্তি যেন নগদ ফসলের মতো। ট্রাকচালকেরাই এর মূল চালিকাশক্তি। আমরা সেখান থেকেই মুনাফা করি। মাই মাহিউতে এটা এখন একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে।’

কেনিয়ার সাবেক যৌনকর্মী ‘বেবি গার্ল’ এখন জনসচেতনতামূলক কাজ করেন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসলামি নীতিশাস্ত্রে সুখের ধারণা
  • ঝগড়া থেকে দেয়ালে মাথা ঠোকা, সালমান-ঐশ্বরিয়ার সম্পর্কের বিষয়ে প্রকাশ্যে আনলেন প্রতিবেশী
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন