দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আজ সোমবার সকালে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঢাকা ও রংপুর বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি এবং সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের মেঘালয়, অরুণাচল, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায়ও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান আজ প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তা নদীর পানি আগামী দুই দিনে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি সতর্কসীমা ছুঁতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা ও বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গাইবান্ধার কিছু এলাকাও সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
অন্যদিকে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরী, জিঞ্জিরাম, কংস, লুবাছড়া ও ঝালুখালি নদীর পানি বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়তে পারে।
সিলেটের মনু, ধলাই ও খোয়াই নদের পানি আগামী দুই দিনে বাড়বে, যদিও এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতেও পানি বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে।
রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের মহানন্দা, করতোয়া, ঘাঘট, আপার আত্রাই ও পুনর্ভবা নদীর পানি বাড়তে পারে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, মুহুরী, গোমতী ও নোয়াখালী খালের পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে গঙ্গা ও পদ্মার পানি বাড়লেও এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নেত্রকোনায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে স্বামীর বাড়িতে অনশন
ভালোবেসে বিয়ে, পরিবারের সম্মতি না থাকায় কিছুটা গোপনে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর ময়মনসিংহ শহরে ভাড়া বাসায় সংসার পাতেন তারা। বছর যেতে না যেতে বেজে ওঠে ভাঙনের সুর। কনের দাবি, তার স্বামী আরেজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করতে চান এবং তাদের বিয়ে অস্বীকার করেন। তাই পারিবারিক স্বীকৃতির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভুক্তভোগী তার স্বামীর বাড়িতে এসে ওঠেন।
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ছোছাউড়া গ্রামের আলাল মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সমাধান করতে শনিবার (২ আগস্ট) সকালে উভয় পরিবার আলোচনায় বসার কথা ছিল। বিকেল পর্যন্ত আলোচনায় বসেনি।
আলাল মিয়ার ছেলে হানিফ মিয়ার সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীর উপস্থিতি টের পেয়ে হানিফ মিয়া বসত ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। উপায় না পেয়ে ওই মেয়ে ঘরের বারান্দায় অনশনে বসেন স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে। ভুক্তভোগী নারী একই উপজেলার বাসিন্দা। তিনি ময়মনসিংহ একটি বেসরকারি হাসপাতালে সেবিকার চাকরি করেন।
আরো পড়ুন:
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে নারী
সেশনজট নিরসনের দাবিতে চবির শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন
ওই নারী জানান, কলেজ জীবনের লেখাপড়া করার সময় হানিফ মিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা গোপনে বিয়ে করেন। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘারকান্দা এলাকার কাজী মো. নাদিরুজ্জামান আলম ২০২৩ সালের ২১ জুন তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করান। তারপর হানিফ মিয়ার ফুপাত বোন ময়মনসিংহে বসবাসকারী রিনা আক্তারের বাসায় তারা ভাড়ায় ওঠেন। সেখানে তাদের প্রায় এক বছর সংসার চলে। এরই মধ্যে হানিফ মিয়া তার এক নিকটাত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে প্রেমে জড়ান। এতে তাদের সংসারে ভাঙন সৃষ্টি হয়। বিষয়টি পরিবারের লোকজনের মাঝে জানাজানি হলে তাদের আলাপ আলোচনায় সমাধান হয়নি। উল্টো ওই মেয়ের ওই সঙ্গে হানিফের পরিবারে লোকজন তাদের বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে থাকে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘‘এই অবস্থায় আমার আর কোনো উপায় না থাকায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে শ্বশুর বাড়িতে এসেছি। এখানে তারা আমাকে গ্রহণ না করে উল্টো মারধর করেছেন। এখানে অবস্থান নেয়ার পর তারা ঘরে তালা লাগিয়ে চলে গেছেন। তারপরও আমি আমার দাবি আদায় ছাড়া যাবো না।’’
ময়মনসিংহে ভাড়া বাসার মালিক হানিফের ফুফাত বোন রিনা আক্তার জানান, প্রায় দুই বছর আগে হানিফের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়। এখন হানিফ তার সঙ্গে সংসার করতে চাচ্ছে না। এতে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হানিফের মোবাইল নম্বরে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
হানিফ মিয়ার বাবা আলাল মিয়া বলেন, ‘‘বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে হানিফের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারছি না। তার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’’
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ নূরে আলম জানান, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে দুই পক্ষের পরিবারের লোকজন সমাধান করতে আলোচনায় বসার কথা তিনি শুনেছেন।
ঢাকা/কামাল/বকুল