রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) ৬৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো নারী শিক্ষার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন।

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) এক ফেসবুক পোস্টে এই প্রার্থীতার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী তাসিন খান।

আরো পড়ুন:

রাবিতে ৭০ স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরজেপি টেক অলিম্পিয়াড

রাকসু নির্বাচন: মনোনয়ন ফরম নিল ছাত্রদল

ব্যক্তিগত টাইমলাইনে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে তাসিন খান লিখেছেন, “আমরা রক্তক্ষয়ী জুলাইয়ের সাক্ষী হয়েছিলাম। আন্দোলনের যখন আবাসিক হলগুলো বন্ধ করে সকল শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, সেই সংকটকালে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক পরিষদে যুক্ত হই। আমি তখন নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিয়েছিলাম যে হয়তো আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা হবে না। বেঁচে থাকলেও পরবর্তী জীবন হয়তো জেলে না হয় পলাতক হয়ে কাটাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ৫ আগস্ট পরবর্তী এই জীবনে আমি আমার বোনাস আয়ু পার করছি।”

তিনি লিখেছেন, “এই বোনাস সময়ে আমার কিছু হারানোর ভয় বা প্রাপ্তির লোভ নাই। জুলাই আমাকে বিবেকের গুরুত্ব খুব ভালোই উপলব্ধি করিয়েছে। সামনে একাধিক সুযোগ আসার পরেও আমি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে শ্রেয় মনে করিনি। তবে আমি বরাবরই রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই এবং দলান্ধতাকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করি। ক্যাম্পাসে বেশ পরিচিত কিছু সামাজিক সাহিত্যেক সংগঠনের সাথে বিভিন্ন এক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করা হয়।”

তিনি আরো লিখেছেন, “রাকসু একটি ঐতিহাসিক সুযোগ আমাদের কাছে। এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেই আমি আমার দক্ষতার জায়গা থেকে কিছু পরিকল্পনা সমেত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। এটা আমার কাছে অনেক বড় বিষয়। কারণ আমার কোনো দলীয় সাপোর্ট, ফান্ডিং বা কর্মী বাহিনী নাই। এই প্রেক্ষিতে শুধু একজন নারী প্রার্থী হিসেবেই নয় একজন ভোটার হিসেবেও প্রশাসনের কাছে অসংখ্যবার সাইবার নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা আশঙ্কার কথা বলার পরেও এখনো কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। সকল ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে আগাচ্ছি। বাকিটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর।”

ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তাসিন খান

রাকসুর প্রার্থিতা ঘোষণা করা তাসিন খান লিখেন, “আমি চাই এমন একটি রাকসু, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক বহুত্ব এবং মানবিক মূল্যবোধের চর্চা হবে প্রতিদিনের বাস্তবতা। দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা এই প্ল্যাটফর্মকে সক্রিয় ও কার্যকর করার লক্ষ্যে আমি আসন্ন রাকসু নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করছি।”

তাসিন খান শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত। রাকসুর দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

ঢাকা/ফাহিম/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩