কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বৃত্তির টাকা না পাওয়ায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। চার বছর আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বৃত্তি পেলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বৃত্তির টাকা পাননি। ফলে তাদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২ সালে দৌলতপুর উপজেলার ২৮৪টি বিদ্যালয় থেকে ২ হাজার ৩১০ জন প্রাথমিক পরীক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে মেধা ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করে ১৯৩ জন। কিন্তু বৃত্তিপ্রাপ্ত হওয়ার চার বছর পার হতে চললেও  কেউ বৃত্তির টাকা পাননি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংক ও শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অভিভাবকরা বলছেন, দিনের পর দিন ঘুরেও তারা শুধু আশ্বাস পেয়েছেন,পাননি সমাধান।

২০২২ সালে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান আবু ওবাইদুল্লাহ সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘‘আমি তারাগুনিয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকে ২০২২ সালে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। এখন আমি তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ি। এখন পর্যন্ত আমার প্রাপ্য (প্রতি মাসে ৩০০ টাকা) বৃত্তির টাকা পাইনি। এমন হলে বৃত্তি পেয়ে লাভ কি হলো?’’

বুলবুল আহমেদ নামে অপর এক অভিভাবক বলেন, ‘‘টাকা বড় ব্যাপার নয়, কিন্তু জীবনের শুরুতেই এমন অভিজ্ঞতা ওদের মেধা বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করে ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় তা নিশ্চিত করা।’’

তহমিনা খাতুন নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমার মেয়ে কঠোর পরিশ্রম করে বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু আজও সেই পরিশ্রমের স্বীকৃতি মেলেনি। সে মনোবল হারাচ্ছে।’’

তারাগুনিয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘২০২২ সালে আমাদের বিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু প্রাপ্য টাকা না পাওয়ায় অভিভাবকরা বারবার অভিযোগ করছেন। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এ বিলম্ব হচ্ছে বলে আমরা ধারণা করছি।’’

এ প্রসঙ্গে দৌলতপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। তবে যতদূর জানি, যাচাই-বাছাই শেষে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। অর্থ ছাড় সংক্রান্ত বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর দেখছে। শুধু দৌলতপুর নয়, সারা দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই একই ধরনের সমস্যা রয়েছে।’’

দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার কামাল হোসেন বলেন, ‘‘বৃত্তিপ্রাপ্তদের সম্মানস্বরূপ পুরস্কার হিসেবে যে টাকা দেওয়া হয়, তা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হাতে না। এগুলো শিক্ষার্থী যে সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি হয়েছে তারা দেখভাল করে।’’

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দৌলতপুর সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.

ইয়ার আলী বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীরা ভর্তির সময় তাদের বৃত্তির কাগজপত্রসহ আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত বৃত্তির টাকা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আসেনি। কেন আসেনি তা আমাদের জানা নেই।’’

বৃত্তির অর্থ না পাওয়ার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিকীর দৃষ্টি আকষণ করা হলে তিনি ‘‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা নেই’’ বলে বিস্তারিত পরে জানানোর আশ্বাস দেন। 

ঢাকা/কাঞ্চন 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ লতপ র উপজ ল ২০২২ স ল অফ স র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ