নরসিংদীর নিরালা আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে আলমগীর হোসেন (৩০) নামে এক কর্মচারীকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে হোটেল মালিকের ছেলে জাহিদ সরকারের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (৩০ আগস্ট) পৌর শহরের বাজিরমোড় এলাকার ওই হোটেলে ঘটনাটি ঘটে।

এ ঘটনায় সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগীর বাবা হারিছ মিয়া বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সবার নজরে আসে। 

আরো পড়ুন:

চবির সংঘর্ষের ঘটনায় ৯৫ জনের নামে মামলা 

বরগুনার ১২ আইনজীবী কারাগারে

অভিযুক্ত জাহিদ সরকার (২৮) নরসিংদী বৌয়াকুড় এলাকার বাসিন্দা ও নিরালা আবাসিক হোটেলের মালিক জাহাঙ্গীর সরকারের ছেলে। ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন শহরের বানিয়াছল এলাকার হারিছ মিয়ার ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, আলমগীর হোসেন শহরের বানিয়াছল এলাকায় জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন ‘নিরালা হরিণ বাড়ি’ নামে একটি খামার দেখা-শোনার দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি খামার থেকে জেনারেটরের ব্যাটারি চুরি হয়। এ ঘটনায় খামারের মালিকের ছেলে জাহিদ সরকার কর্মচারী আলমগীকে সন্দেহ করেন। গত শনিবার আলমগীরকে হোটেলে ডেকে নিয়ে যান তিনি। 

হোটেল কক্ষে জাহিদ সরকার ও তার লোকজন আলমগীরকে গলায় রশি দিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে লোহার পাইপ দিয়ে পেটান। এক পর্যায়ে জাহিদ সরকার ছুরি দিয়ে আলমগীরের শরীরের বিভিন্ন স্থান খুঁচিয়ে জখম করেন। পরে একই এলাকার শাকিল নামে অপর একটি ছেলেকেও মারধর করেন তিনি।

একপর্যায়ে শাকিলের হাতে পাইপ দিয়ে আলমগীরকে মারতে বলেন এবং মারধরের ভিডিও ধারণ করেন জাহিদ। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আলমগীরকে শাকিলের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠান। পরিবারের সদস্যরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আলমগীরকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। পরে তাকে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় সোমবার রাতে নরসিংদী মডেল থানায় আলমগীরের বাবা হারিছ মিয়া বাদী হয়ে জাহিদ সরকারকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- সিয়াম, আল আমিন ও শাকিল। 

আলমগীরের বাবা হারিছ মিয়া বলেন, “আমার ছেলেকে হোটেলের রুমে আটকে গলায় রশি দিয়ে জানালার সঙ্গে বেঁধে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। ধারালো ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গলা থেকে পা পর্যন্ত রক্তাক্ত জখম করেছে। আমার ছেলের শরীরে থাকা রক্তমাখা শার্ট ও প্যান্ট খুলে রেখে ডেকোরেটরের কাপড় পড়িয়ে শাকিলকে দিয়ে বাড়িয়ে পাঠায়। শুনেছি, তার শরীর থেকে খুলে রাখা রক্তমাখা কাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেলেছে। এমনকি ডাক্তার দেখালে এবং পুলিশের কাছে গেলে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে।”

ভুক্তভোগীর মা সমলা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে জীবন ভিক্ষা চেয়েছে, তারপরও তাদের মন গলেনি। তারা আমার ছেলের দুই হাত ভেঙে দিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি দিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। আমরা গরিব মানুষ, ওদের সাথে ক্ষমতায় পারব না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।”

এ ব্যাপারে জানতে হোটেল মালিক জাহাঙ্গীর সরকার ও তার ছেলে জাহিদ সরকারের মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।

নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, “এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ জ হ দ সরক র আম র ছ ল এ ঘটন য় আলমগ র এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

আসামিদের হুমকিতে অসহায় মা, নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি

খুলনা মহানগরীর লবণচরার বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার ঘের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন বিদ্যুৎ (২৪) হত্যা মামলার বিচার কাজ এক যুগ অতিবাহিত হলেও এখনো শেষ হয়নি। মামলার দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে আসামিরা জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন নিহতের পরিবারকে। তাদের বিরুদ্ধে বাদীর অপর ছেলেকে হত্যার ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। 

এ অবস্থায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা এবং আসামিদের অপতৎপরতা থেকে রক্ষা করে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছেন নিহত বিদ্যুতের মা জাহানারা বেগম। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আরো পড়ুন:

কেএমপির ৮ থানার ওসি রদবদল

জলবায়ু পরিবর্তন আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: ইইউ রাষ্ট্রদূত

লিখিত বক্তব্যে জাহানারা বেগম বলেন, ‍“২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা আমার ছোট ছেলে মো. আলমগীর হোসেন ওরফে বিদ্যুৎকে (২৪) নগরীর খানজাহান আলী (র.) সেতু এলাকায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর ৭ ডিসেম্বর আমি বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা করি (মামল নং- ০৩)। মামলাটি বর্তমানে খুলনা মহানগর দায়রা জজ (মামলা নং: ৪৪৯/১৫) বিচারাধীন আছে।” 

“মামলায় লবণচরা বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার নাজিম খলিফার দুই ছেলে আরমান খলিফা ও আরিফ খলিফা, লবণচরা মোহাম্মদীয়া পাড়া মসজিদ এলাকার আব্দুল জলিল হাওলাদারের ছেলে হারুন হাওলাদার, লবণচরা ইব্রাহীমিয়া মাদরাসা রোড এলাকার হামিদ মিস্ত্রীর ছেলে মো. সিরাজ এবং লবণচরা মোক্তার হোসেন রোড এলাকার হযরত আলী ফকিরের ছেলে বাদল ফকিরকে আসামি করা হয়। এ মামলায় আসামিরা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এই সব আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় বিভিন্ন মামলাও রয়েছে”, যোগ করেন তিনি।

জাহানারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমার কলিজার টুকরো সন্তানকে হত্যা করেও সন্ত্রাসীরা ক্ষ্যান্ত হয়নি। উপরন্ত জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা এখন মামলা তুলে নিতে আমি ও আমার এক মাত্র সন্তান এবং মামলার স্বাক্ষীদের জীবননাশসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে বারবার সাধারণ ডায়রি (জিডি) করার ফলে হত্যাকারী-সন্ত্রাসীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কোন সময় তারা আমি ও আমার বড় ছেলেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে। এ অবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি।”

তিনি আরো বলেন, “হত্যাকারী-আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমি এখন পর্যন্ত খুলনা ও লবণচরা থানায় চারটি সাধারণ ডায়রি করেছি। সর্বশেষ গত ৩ মার্চও আমি লবণচরা থানায় জিডি করি। কারণ ২ মার্চ দুপুরে মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি আরমান তার ভাই আরিফ এবং অপর আসামি জুয়েল শেখ, হারুন হাওলাদার, সিরাজ ও বাদল ফকিরসহ আরো অনেকে আমার বাসার সামনে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। এমনকি তারা আমাকে ও আমার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন বিপ্লবকেও হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেয়। এ ছাড়া, একই ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে আমি ২০১৪ সালের ৪ মার্চ ও ২ মে খুলনা থানায় এবং একই বছরের ৪ মে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লবণচরা থানায় সাধারণ ডায়রি করি।”

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামিদের হুমকিতে অসহায় মা, নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি