আমার বাড়িও নেই, গাড়িও নেই: খুরশীদ আলম
Published: 3rd, September 2025 GMT
‘মাগো মা ওগো মা’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘যদি বউ সাজো গো’, ‘চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে’, ‘চুরি করেছো আমার মনটা’—গানগুলো শুনলেই মন ভালো যায়। এসব গানের গায়ক বাংলাদেশের প্লেব্যাক ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র খুরশীদ আলম।
অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ে খুরশীদ আলম উপহার দিয়েছেন চার শতাধিক গান। অথচ এই কিংবদন্তি শিল্পীর জীবনে নেই বিলাসিতার প্রলেপ, নেই রাজকীয় বাহার। তার ভাষায়—“আমার বাড়িও নেই, গাড়িও নেই।”
আরো পড়ুন:
দল অন্যরকম: বুকের পাঁজরে রাখা সুর
বান্দরবানে ভাঙা সেতুতে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো
সম্প্রতি রাইজিংবিডি স্পেশালে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম। এস এম জাহিদ হাসান সঞ্চালিত অনুষ্ঠানে বরেণ্য এই শিল্পী জানান তার সাধারণ জীবনের গল্প।
আজকের দিনে যেখানে অধিকাংশ মানুষের স্বপ্ন থাকে—প্রাসাদোপম বাড়ি, ঝকঝকে গাড়ি, সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনা, সেখানে খুরশীদ আলম সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বললেন—“আমার দুই মেয়ে বাংলাদেশেই পড়াশোনা করেছে। আমার চাহিদা খুবই কম। আমি সরলভাবে বাঁচতে চাই।”
এই সাধারণ জীবনই যেন তার শিল্পীসত্তার পরিশুদ্ধ রূপ। যেখানে সুরই তার সম্বল, গানের প্রতি দায়ই তার আসল সম্পদ। শিল্পীর কণ্ঠের যাত্রা সহজ ছিল না। ১৯৬৯ সালে ফারুক রহমানের ‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রে নায়করাজ রাজ্জাকের জন্য গান গাওয়ার সুযোগ মেলে। কিন্তু রেকর্ডিংয়ের দিন অনেকেই সন্দেহে মুখ বাঁকায়—“এই ছেলে কি গান গাইবে?”
হতাশ প্রযোজকও প্রায় সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। তবে তার স্ত্রী অটল থাকেন—“যে ছেলেটি রেডিওতে ‘তোমার দুহাত ছুঁয়ে শপথ নিলাম’ গেয়েছে, সে এই গান গাইতে পারবে।” তবু সেদিন গানটি রেকর্ড হয়নি। তরুণ খুরশীদ ফিরলেন ভাঙা হৃদয়ে। কিন্তু সেদিনই রাজ্জাক সাহেব নিজের গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে গেলেন তাকে।
তারপর শুরু হলো চরিত্র অনুশীলনের ভিন্ন পাঠ। কীভাবে হাসতেন, কথা বলতেন, দারোয়ান কিংবা ড্রাইভারের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতেন—সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শিখিয়ে দিলেন তরুণ গায়ককে। খুরশীদও শিখলেন মনোযোগী ছাত্রের মতো।
কিছুদিন পরই আবার সুযোগ এলো। আজাদ রহমানের সুরে গাইলেন গান—‘বন্দি পাখির মত মনটা কেঁদে মরে’। এবার আর কেউ আটকাতে পারল না। গানটি হিট হলো, ছড়িয়ে পড়ল মানুষের মুখে মুখে। শুরু হলো খুরশীদ আলমের সোনালি যাত্রা।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে খুরশীদ আলম বলেন, “আমি আজাদ রহমান সাহেবের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। তার কারণেই আমি প্রথমবার সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ পাই।”
১৯৬৭ সালে রেডিও পাকিস্তানে আধুনিক গান দিয়ে শুরু। এরপর প্লেব্যাক। আর তারপর ইতিহাস। খুরশীদ আলমের কণ্ঠে ভেসে এসেছে প্রেম, বেদনা, আবেগ আর অনন্ত আনন্দ।
দীর্ঘ এই পথচলায় খুরশীদ আলম কখনো ভোগবিলাস চাননি। তিনি চান কেবল গান, গান আর গান। তার ভাষায়, “শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে চাই”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’