‘মাগো মা ওগো মা’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘যদি বউ সাজো গো’, ‘চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে’, ‘চুরি করেছো আমার মনটা’—গানগুলো শুনলেই মন ভালো যায়। এসব গানের গায়ক বাংলাদেশের প্লেব্যাক ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র খুরশীদ আলম। 

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ে খুরশীদ আলম উপহার দিয়েছেন চার শতাধিক গান। অথচ এই কিংবদন্তি শিল্পীর জীবনে নেই বিলাসিতার প্রলেপ, নেই রাজকীয় বাহার। তার ভাষায়—“আমার বাড়িও নেই, গাড়িও নেই।” 

আরো পড়ুন:

দল অন্যরকম: বুকের পাঁজরে রাখা সুর

বান্দরবানে ভাঙা সেতুতে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো  

সম্প্রতি রাইজিংবিডি স্পেশালে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম। এস এম জাহিদ হাসান সঞ্চালিত অনুষ্ঠানে বরেণ্য এই শিল্পী জানান তার সাধারণ জীবনের গল্প। 

আজকের দিনে যেখানে অধিকাংশ মানুষের স্বপ্ন থাকে—প্রাসাদোপম বাড়ি, ঝকঝকে গাড়ি, সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনা, সেখানে খুরশীদ আলম সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বললেন—“আমার দুই মেয়ে বাংলাদেশেই পড়াশোনা করেছে। আমার চাহিদা খুবই কম। আমি সরলভাবে বাঁচতে চাই।” 

এই সাধারণ জীবনই যেন তার শিল্পীসত্তার পরিশুদ্ধ রূপ। যেখানে সুরই তার সম্বল, গানের প্রতি দায়ই তার আসল সম্পদ। শিল্পীর কণ্ঠের যাত্রা সহজ ছিল না। ১৯৬৯ সালে ফারুক রহমানের ‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রে নায়করাজ রাজ্জাকের জন্য গান গাওয়ার সুযোগ মেলে। কিন্তু রেকর্ডিংয়ের দিন অনেকেই সন্দেহে মুখ বাঁকায়—“এই ছেলে কি গান গাইবে?” 

হতাশ প্রযোজকও প্রায় সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। তবে তার স্ত্রী অটল থাকেন—“যে ছেলেটি রেডিওতে ‘তোমার দুহাত ছুঁয়ে শপথ নিলাম’ গেয়েছে, সে এই গান গাইতে পারবে।” তবু সেদিন গানটি রেকর্ড হয়নি। তরুণ খুরশীদ ফিরলেন ভাঙা হৃদয়ে। কিন্তু সেদিনই রাজ্জাক সাহেব নিজের গাড়িতে বসিয়ে নিয়ে গেলেন তাকে।  

তারপর শুরু হলো চরিত্র অনুশীলনের ভিন্ন পাঠ। কীভাবে হাসতেন, কথা বলতেন, দারোয়ান কিংবা ড্রাইভারের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতেন—সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শিখিয়ে দিলেন তরুণ গায়ককে। খুরশীদও শিখলেন মনোযোগী ছাত্রের মতো। 

কিছুদিন পরই আবার সুযোগ এলো। আজাদ রহমানের সুরে গাইলেন গান—‘বন্দি পাখির মত মনটা কেঁদে মরে’। এবার আর কেউ আটকাতে পারল না। গানটি হিট হলো, ছড়িয়ে পড়ল মানুষের মুখে মুখে। শুরু হলো খুরশীদ আলমের সোনালি যাত্রা। 

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে খুরশীদ আলম বলেন, “আমি আজাদ রহমান সাহেবের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। তার কারণেই আমি প্রথমবার সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ পাই।” 

১৯৬৭ সালে রেডিও পাকিস্তানে আধুনিক গান দিয়ে শুরু। এরপর প্লেব্যাক। আর তারপর ইতিহাস। খুরশীদ আলমের কণ্ঠে ভেসে এসেছে প্রেম, বেদনা, আবেগ আর অনন্ত আনন্দ।  

দীর্ঘ এই পথচলায় খুরশীদ আলম কখনো ভোগবিলাস চাননি। তিনি চান কেবল গান, গান আর গান। তার ভাষায়, “শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে চাই”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ