রাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেলে জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়
Published: 7th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনিত প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক হিসাবে লড়বেন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় মোছা. নারগিস খাতুন।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় রাবির শহিদ মিনারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক রাকসু নির্বাচনের এ প্যানেল ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা
রাবিতে প্রযুক্তি প্রেমীদের নিয়ে ‘রোবটিড ২.
নারগিস রাবির ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৪ সাল থেকে পেশাদার ফুটবল খেলেন নার্গিস। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ছাড়াও অনূর্ধ্ব–১৪, অনূর্ধ্ব–১৬, অনূর্ধ্ব–১৭ ও অনূর্ধ্ব–১৯ জাতীয় নারী দলের হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। এছাড়া বসুন্ধরা কিংস নারী দলের হয়েও খেলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারগিস বলেন, “ছাত্রদল আমাকে তাদের প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করেছে, এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। ছাত্রদল নারীদের সম্মান করে, ক্রীড়াকে উৎসাহিত করে। তাদের প্যানেলে যুক্ত হয়ে ভালো লাগছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমি খুব কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দের সমস্যা এবং তাদের প্রাপ্যতা বুঝে না পাওয়ার বিষয়গুলো খেয়াল করেছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি তার বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে প্রতিষ্ঠানের সম্মান অর্জনে ভূমিকা রাখার জন্য। কিন্তু তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।”
“আমি অনেক খেলোয়ারদের দেখেছি যাদের সক্ষমতা আছে সুযোগ-সুবিধা পেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিত্ব করার। আবার অনেক মেয়েকে দেখেছি যারা খেলতে ইচ্ছুক, কিন্তু খেলার সেরকম সুযোগ পাচ্ছে না,” যোগ করেন নারগিস।
নারগিস আরো বলেন, “শুধু বিশ্ববিদ্যালয় গণ্ডি নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে খেলাধুলায় প্রতিনিধিত্ব করানো, নিয়মিত প্র্যাকটিসের জন্য মেয়েদের জিমনেসিয়ামের মাঠ পুনরায় চালু করা, প্রতিটি বিভাগ এবং হলে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রতিটি হল বিভাগ এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় ক্রীড়ার আলোকে আলোকিত করাসহ খেলোয়াড়রা যাতে তাদের প্রাপ্যতা এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন, সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে চাই।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ছ ত রদল অন র ধ ব ছ ত রদল ন রগ স ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি
বরেন্দ্র অঞ্চলে বছরে বৃষ্টি হয় প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানিও ক্রমাগত নিচে নামছে। ফলে দিনকে দিন অঞ্চলটি খরাপ্রবণ হয়ে উঠছে। তবে, গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতের স্মরণকালের ভারী বর্ষণে বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির বাড়ি ধসে পড়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার দরগাপাড়া গ্রামে কৃষক জহিরুল ইসলাম নিজের জমির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “মাঠের ৮০ ভাগ ধান শুয়ে পড়েছে। এই ধান তুইলতে লোকও পাওয়া যাবে না। সবাইকে একসঙ্গে ধান তুইলতে হবে। আমরা এবারের খুব ক্ষতির শিকার।”
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারী বর্ষণে ৪০০ পুকুর ভেসে গেছে
পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস
সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলি মাঠ উঁচুনিচু সিঁড়ির মতো। দুই পাশ উঁচু হলেও মাঝের অংশ তুলনামূলক নিচু থাকে, যা স্থানীয়রা ‘কান্দর’ বলেন। এবার এই কান্দরগুলো তলিয়ে গিয়ে বিলের মতো হয়েছে। এসব জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। কখনো কখনো বিলের ধান পানিতে ডুবলেও কান্দর কখনো ডুবে না। শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সবই তলিয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, “গ্রামের দিকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। তবে, শহরে আমরা মাত্র ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি।”
এদিকে, বিলের পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় মানুষ দলবেঁধে মাছ ধরতে নেমেছেন। শনিবার (১ নভেম্বর) থেকেই মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। পবা উপজেলার শুলিতলা ভিমারডাইং এলাকায় জোয়াখালি নদীতে অর্ধশতাধিক মানুষ মাছ ধরছিলেন।
ক্ষেত থেকে শুয়ে পড়া ধান কাটছেন এক কৃষক
আলোকছত্র গ্রামের কৃষক মো. মনিরুজ্জামান (৬৫) বলেন, “জাল ফেললেই বড় বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমি আমার জীবনে এবার দ্বিতীয়বার উত্তরা পেলি দেখছি। সাধারণত নদীর স্রোত উত্তর দিকে যায়, কিন্তু এবার উত্তরেই এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে পানি দক্ষিণে যাচ্ছে।”
বিলের মধ্যে খনন করা পুকুরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছচাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গোদাগাড়ীর কালোসাঁকো বিলে চারটি পুকুরে মাছচাষ করতেন মারিফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রিশিকুল ইউনিয়নের খড়িয়াকান্দি এলাকায় দুটি স্থানে পাকা রাস্তা প্লাবিত হয়ে একপাশ থেকে অন্যপাশে পানি যাচ্ছে। স্থানীয়রা সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। রাস্তার দুই পাশে শত শত বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। খড়িয়াকান্দি খালের পাশে ১০–১২টি বাড়ির মাটির দেয়াল ভেঙে পড়েছে।
মান্ডইল নলপুকুর গ্রামের বিশ্বনাথ সরেন জানান, তার বাড়ির দুটি ঘর ধসে পড়েছে।
জালে বড় মাছ উঠায় খুশি স্থানীয় এক বাসিন্দা
রিশিকুল এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন বন্যা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তারপর এত বৃষ্টি ও বন্যা হয়নি। এবার প্রথম।”
এলাকাবাসী জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না সম্ভব হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবীরা খিচুড়ি রান্না করে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করছেন। গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, আলোকছত্র হয়ে তানোরের সরনজাই ও কালীগঞ্জ এলাকায় মাঠের পর মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে।
কালীগঞ্জের কৃষক সাবিয়ার রহমান বলেন, “আমার ১২ বিঘা জমির ধান শেষ। আধাপাকা ধান ঘরে তুলতেও লোক পাওয়া যাবে না।”
এবার মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় আলু ও শীতকালীন সবজি চাষে বিলম্ব হবে। পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ও বাগমারায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি ঢুকে যাওয়ায় পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুই পাশের জমি প্লাবিত করে বৃষ্টির পানি সড়কে উঠেছে
শনিবার বাগমারার বাসুপাড়ায় নুর মোহম্মাদ নামের এক পানচাষির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, বরজে পানি ঢুকে যাওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দাবি করেছেন, “ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।” তিনি বলেন, “৫০০ হেক্টর ধানের ক্ষতির প্রতিবেদন আমরা দিচ্ছি। ধান শুয়ে পড়লেই কিন্তু ক্ষতি হবে না। মাঠে যাচ্ছি, দেখছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কিছু উপজেলা থেকে পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। মাছ বেরিয়ে গেছে। এটি অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ