চট্টগ্রামের বায়েজিদ-অক্সিজেনের অনন্যা আবাসিক এলাকায় এখন যেন অন্য এক জগৎ। চারপাশে শুভ্র কাশফুলের ঢেউ। বাতাস বইলেই সেই ঢেউ নাচে, দুলে ওঠে, আর চোখে-মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে যায়। 

শরতের দুপুর কিংবা বিকেল, যে সময়ই আসা হোক, একবার এই সাদা সমুদ্রের ভেতর দাঁড়ালে মনে হয় প্রকৃতি আপনাকে থামতে বলছে। চট্টগ্রামের অনন্যা যেন এক টুকরো সাদা স্বর্গ!

চট্টগ্রাম শহরের ভিড় আর ব্যস্ততা থেকে মুক্তি খুঁজে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন অনন্যা আবাসিকে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ পরিবার নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। কারো কাছে এই কাশফুল স্মৃতির জানালা খুলে দেয়, কারো কাছে এটি নিখাদ আনন্দ।

মুরাদপুর থেকে আসা সাবরিনা কাশফুলের ভেতর দাঁড়িয়ে হেসে বললেন, “বইয়ের পাতায় যতবার কাশফুল দেখেছি, এখানে এসে মনে হচ্ছে বাস্তবে আরও সুন্দর। মনে হয় শহরেই যেন গ্রামকে খুঁজে পেলাম।”

আগ্রাবাদ থেকে আসা মিমের কণ্ঠে ছিল বিস্ময়, “ছোটবেলায় কাশফুলের গল্প শুনতাম। কিন্তু এত বিশাল জায়গা জুড়ে এভাবে দেখব ভাবিনি কখনো। সত্যিই এক অপূর্ব দৃশ্য।”

শিশুরাও কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

চান্দগাঁও থেকে আসা হাফিজ স্ত্রীর হাত ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন কাশফুলের মাঝপথে। তিনি বললেন, “এখানে দাঁড়ালে মনে হয় পৃথিবী কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেছে। শহুরে ক্লান্তি মুছে যায়।”

তার স্ত্রী নুসাইবা যোগ করলেন, “প্রকৃতির এই সাদামাটা সৌন্দর্য মানুষের মুখে হাসি ফোটায়। সবাই এখানে এসে যেন কিছুটা হালকা হয়ে যায়। এখানে কাশফুল দেখতে এসে অনেকেই ফুল কেটে নিয়ে যাচ্ছেন, এতে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।”

শরৎ মানেই কাশফুল। বাংলা সাহিত্যে, কবিতায়, গানেও যার বারবার উল্লেখ আছে। তবে অনন্যায় যে দৃশ্য এখন দেখা যাচ্ছে, তা অনেকের কাছেই নতুন। যেন শহরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা এক শরৎউৎসব।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে। কাশফুলের মাঝেই গড়ে উঠছে মানুষজনের আড্ডা, গল্প, আনন্দ। তবে এই সৌন্দর্য টিকে রাখতে সচেতনতারও প্রয়োজন। প্রকৃতিকে যেমন পাওয়া যায়, তেমনি রেখে যাওয়াটাই দায়িত্ব। স্থানীয়রা কাশফুল কাউছে কেটে না নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।

অনন্যার এই শুভ্র কাশফুল তাই শুধু চোখের আনন্দ নয়, বরং এক ধরনের মনে করিয়ে দেওয়া, প্রকৃতির কাছে ফিরলে জীবন সহজ হয়ে যায়।

ঢাকা/রেজাউল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দর য প রক ত অনন য

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ