সৌদি আরব তাদের শীর্ষস্থানীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানি হুমাইন ‘হুমাইন চ্যাট’ নামে একটি কথোপকথনমূলক এআই অ্যাপ চালু করেছে, যাকে ইসলামি মূল্যবোধ আর আরবি ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ বলেছেন উদ্ভাবকেরা। সৌদি আরবের ১২০ জন এআই–বিশেষজ্ঞ, যাঁদের অর্ধেক নারী এই চ্যাটবট তৈরিতে কাজ করেছেন।

গত ২৫ আগস্ট হুমাইন তাদের অ্যালাম লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের ওপর ভিত্তি করে হুমাইন চ্যাট চালু করেছে। প্রাথমিকভাবে এটি শুধু সৌদি আরবে পাওয়া যাবে; তবে শিগগিরই এটি মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়বে বলে তাদের আশা।

এটি আরবি ও ইংরেজি—দুই ভাষায় কথোপকথন চালাতে পারে, এমনকি মিসরীয়, লেবানিজের মতো বিভিন্ন আরবি উপভাষায়ও সাবলীল। হুমাইন চ্যাট বিশ্বের ৩৮০ মিলিয়ন আরবিভাষীকে আরও সহজে তাদের তথ্য গ্রহণে সহায়তা করবে।

এটি কেবল একটি প্রযুক্তি নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতিফলন।তারেক আমিন, হুমাইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাআরও পড়ুনইসলামি গবেষণায় এআই কতটা কার্যকর১৪ জুন ২০২৫

হুমাইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক আমিন এ উদ্যোগকে ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি কেবল একটি প্রযুক্তি নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতিফলন।’

অ্যাপটি কেবল সৌদি নিজস্ব প্রতিভার হাতে গড়া, যেখানে নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করেছেন। এটি ইসলামি মূল্যবোধের আলোয়, ঐতিহ্যের সুরে মুসলিমদের পরিচয়কে জাগিয়ে তুলবে।

হুমাইন চ্যাট অ্যালাম মডেলের ওপর নির্মিত, যা বিশ্বের বৃহত্তম আরবি ডেটাসেটে প্রশিক্ষিত। এই ডেটাসেটে ইসলামি সংস্কৃতি, মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্য ও স্থানীয় মূল্যবোধের গভীর ছাপ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি তাতে ইসলামি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তার সব জবাব দেবে কোরআন ও হাদিসের আলোকে।

আরও পড়ুনএআই কি কোরআনের সঠিক অনুবাদ করতে পারে০৮ জুন ২০২৫যদি তাতে ইসলামি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তার সব জবাব দেবে কোরআন ও হাদিসের আলোকে।

অ্যাপটি পশ্চিমা চ্যাটবট যেমন চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি বা চীনের ডিপসিকের মতো নয়, যারা মূলত ইংরেজি ডেটাসেটে প্রশিক্ষিত। হুমাইন চ্যাট আরবি ভাষায় গভীর ও সূক্ষ্ম বিষয়েরও উত্তর দিতে পারে।

সৌদি ডেটা অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথরিটি (এসডিএআইএ) যে মডেল গ্রহণ করেছে, তা আগে আইবিএমের ওয়াটসনএক্স প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত হয়েছিল। কোম্পানিটি সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মালিকানাধীন, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৯ গিগাওয়াটের ডেটা সেন্টার গড়ার পরিকল্পনা করছে। এই উদ্যোগে এনভিডিয়া ও অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেসের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের সমর্থন রয়েছে।

এ প্রকল্পটি সৌদি আরবের ভিশন–২০৩০-এর একটি অংশ, যা তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখে।

সূত্র: ব্লুমবার্গনিউ অ্যারাব

আরও পড়ুনইসলামি গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা০৩ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ম ইন চ য ট ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ