প্রেমিকার বাড়িতে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে ছটফট করছিলেন যুবক, ভিডিও করছ
Published: 9th, October 2025 GMT
প্রেমিকার বাড়িতে এক যুবক আত্মহত্যার জন্য গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় মাটিতে গড়াগড়ি করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন। সেই দৃশ্য বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, কেউবা ভিডিও করছিলেন। এভাবে ছটফট করতে করতে যুবকটি একপর্যায়ে মারা গেলে তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়।
এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের সামান্যপাড়া গ্রামে।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে ইউপি সদস্যের ইয়াবা সেবনের ভিডিও ভাইরাল
জুলাই আন্দোলন ও ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে ক্ষমা চাইলেন খুবির ২ শিক্ষার্থী
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি বুধবার (৮ অক্টোবর) ছড়িয়ে পড়লেও এ ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে।
মৃত ওই যুবকের নাম স্বপন প্রামাণিক (৩৫)। তিনি পাবনা সদর উপজেলার খয়সুতি গ্রামের ইমাম প্রামাণিকের ছেলে।
তিনি সাঁথিয়া উপজেলার সনামান্যপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে গিয়ে প্রেমিকার কাছ থেকে প্রেমের স্বীকৃতি না পেয়ে ওই বাড়ির সবার সামনে আত্মহত্যার জন্য গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করেন। ট্যাাবলেট সেবনের কিছুক্ষণ পরই যন্ত্রণা শুরু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সামান্যপাড়া গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল স্বপন প্রামাণিকের (৩৫)। এ সম্পর্কের সূত্রে প্রেমিক স্বপনকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই প্রবাসীর স্ত্রী। কিন্তু একপর্যায়ে তিনি স্বপনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
এতে গত সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে প্রেমিকার বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন স্বপন। সেখানে গিয়ে প্রথমে নিজের হাত কাটেন। এতেও প্রেমিকা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় স্বপন ক্ষুব্ধ হয়ে গ্যাস ট্যাবলেট খান। পরবর্তীতে স্বপন গুরুতর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘসময় ওই বাড়িরে উঠোনে মৃত্যু যন্ত্রণায় গড়াগড়ি দিতে থাকেন। আর্তচিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাতে থাকেন তিনি। এ সময় বাড়ির লোকজন ছাড়াও প্রতিবেশীরা সেখানে ছুটে আসেন।
কিন্তু আশপাশের কেউ তাকে উদ্ধার না করে ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করেন। এক পর্যায়ে স্বপন নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে এলাকাবাসী স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাঁথিয়া থানা পুলিশ খবর পেয়ে স্বপনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে স্বপন বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন, কিন্তু আশপাশের কেউ এগিয়ে আসছেন না। মানবিক দায়িত্বের এমন ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
কথিত প্রেমিকার মামা শ্বশুড় জানান, খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই স্বপন মারা যায়। এ ঘটনার পর থেকে প্রেমিকা পলাতক রয়েছেন।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিুসর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “তারা (প্রেমিক-প্রেমিকা) দুজনেই বিবাহিত। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই স্বপনের স্ত্রী বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করেছেন। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”
ঢাকা/শাহীন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ য স ট য বল ট উপজ ল র স বপন
এছাড়াও পড়ুন:
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও রাগসংগীতে বিশুদ্ধতার ধারণা
আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব বরাবরই এক বিস্ময়কর মানুষ। এ কথা যেমন নিরেট সত্য, তেমনি এ কথাও সত্য যে তিনি একই সঙ্গে এক পরম সাধারণ মানুষ ছিলেন। খাঁ সাহেবের সংগীতের মূলে কোনো আভিজাত্য বা দূরত্ব ছিল না, প্রতিটি সুরের ভেতর দিয়ে ধ্বনিত হয়েছে মাটির গন্ধ, ক্ষুধার ইতিহাস, মানুষের ক্লান্তি ও আশ্বাসের শব্দ।
আমি আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবকে চিনেছি আমার গুরুজির কাছ থেকে। সেদিন বিহাগের তালিম চলছিল। তালিমের একপর্যায়ে গুরুজি আমায় থামিয়ে বললেন, ‘তোকে একটা গল্প বলি। বাবা আলাউদ্দিন খাঁ বিহাগের বিনকারী শেষ করবেন, সম্ভবত ঝালা বাজাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তাঁর চোখ দিয়ে জল বয়ে এল আর তিনি বললেন, “এত দিন পর গান্ধারটা লাগল!”’ সেই গল্প শুনে আমি বুঝেছিলাম আত্মসন্ধান, শ্বাসের আশ্বাসে গলার মধ্য দিয়ে উঠে আসা আত্মার ছবিও নেহাত।
আলাউদ্দিন খাঁ কলোনিয়াল ভারতবর্ষে সেই সামন্ত সংগীতের শৃঙ্খল ভেঙে নয়া সংগীতধারার বিনির্মাণ করেছিলেন, যেখানে দরিদ্র, কৃষক, ‘মুসলমান’, ‘হিন্দু’, ‘বাঙালি’, উড়িয়া, মারাঠি—সবাই এক সুরে মিশে যেত। সংগীতে ধর্মের সীমা ভেঙে যায় এবং সেই ভাঙার মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় নতুন গণতান্ত্রিক নন্দনচেতনা।আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব উপমহাদেশের একটা জটিল সময়ে বর্তমান ছিলেন। দীর্ঘ দমন, কলোনিয়াল আধিপত্য, সামাজিক বিভাজনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিজেকে খুঁজে পাওয়া মানে একপ্রকার সোশিও-পলিটিক্যাল আত্মপরিচয় পুনরুদ্ধারও। ভারতীয় সংগীত, বিশেষ করে আলাউদ্দিন খাঁর মতো মানুষদের হাতে হয়ে উঠেছিল এক প্রতিস্পর্ধী রাজনীতি। আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব নিজেই ছিলেন এক বিপ্লবী সংগীতচেতা। কলোনিয়াল ভারতবর্ষে সেই সামন্ত সংগীতের শৃঙ্খল ভেঙে নয়া সংগীতধারার বিনির্মাণ করেছিলেন, যেখানে দরিদ্র, কৃষক, ‘মুসলমান’, ‘হিন্দু’, ‘বাঙালি’, উড়িয়া, মারাঠি—সবাই এক সুরে মিশে যেত। সংগীতে ধর্মের সীমা ভেঙে যায় এবং সেই ভাঙার মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় নতুন গণতান্ত্রিক নন্দনচেতনা। আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব এখানেও বিস্ময়কর।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ