ভালোবাসা নাকি এক মিষ্টি নেশা। আদতে মিষ্টি খাবার তো এক নেশাই বটে। ‘সুগার ক্রেভিং’ হয় অনেকেরই। সারা দিন টক, ঝাল, নোনতা—নানা স্বাদের নানা খাবার খাওয়ার পরও মনটা খুব করে চায় একটু মিষ্টি স্বাদ। তাতেই জুড়ায় প্রাণ।

ভালোবাসার সঙ্গে মিষ্টি

ভালোবাসার মানুষকে ‘সুইটহার্ট’ বলে ডাকেন অনেকে। ব্যাপারটা এমন, যেন কেবল ‘হার্ট’ বললেও বোঝানো যায় না। সঙ্গে মিষ্টির অস্তিত্ব জানান দেওয়া না হলে আবেগের প্রকাশটাই ঘটে না ঠিকঠাক।

প্রিয়জনকে ‘হানি’ বা ‘সুইটি পাই’ বলেও সম্বোধন করেন কেউ কেউ। বিয়ে ও জীবনের নানা সাফল্য উদ্‌যাপনের আনুষ্ঠানিকতায়ও থাকে মিষ্টিমুখের আয়োজন। বাগ্‌দান পর্বের স্থানীয় নামেও আছে মিষ্টির উপস্থিতি—‘পানচিনি’। সম্পর্কের সৌন্দর্য প্রকাশ করতেও বলা হয় ‘মিষ্টি সম্পর্ক’ বা ‘মধুর সম্পর্ক’।

ভাইরাল ‘মিষ্টি কিছু’

প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটালে কেন ভালো লাগে, জানেন? ডোপামিন আর অক্সিটোসিনের মতো ভালো লাগার হরমোনগুলোর নিঃসরণ বাড়ে তখন। মিষ্টি খাবার খেলেও ডোপামিনের মাত্রা বাড়ে। মন খারাপের সময়েও মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন বহু মানুষ। মিষ্টি খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ভালো লাগার অনুভব।

ভালোবেসে কাউকে ‘মিষ্টি কিছু’ দিতে চাওয়ার বিষয়টিও তাই হয়ে উঠেছে ক্রেতাকে আকর্ষণের এক মাধ্যম। যেমনটা দেখা গেল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। সারি বেঁধে কেক, মিষ্টি ও পুডিং বিক্রি করতে থাকা মানুষের ভিড়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছে এক কিশোর।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘তোমায় দেব মিষ্টি কিছু’ গানটি গাইতে গাইতে ক্রেতার হাতে পণ্য তুলে দিচ্ছে এক কিশোর (বয়স বিবেচনায় তার মুখ ঘোলা করে দেওয়া হলো).

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে সংশোধন হচ্ছে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা

দেশের প্রভাবশালী বাণিজ্য সংগঠনের আপত্তির মুখে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন জারির পাঁচ মাসের মধ্যে আবার সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এই বিধিমালার ১০টি বিধির সংশোধন চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন বিধিমালায় ফেডারেশনসহ বাণিজ্য সংগঠনে টানা দুবার পদে থাকার পর একবার বিরতির বিধান বাতিল, ফেডারেশন ছাড়া অন্য সংগঠনে পরিচালকদের ভোটে সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনের বিধান করা, পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শিথিল, বাণিজ্য সংগঠনে সদস্য হওয়ার ও সদস্যপদ নবায়ন ফি কমানোসহ কিছু বিধানে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। গত মাসে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার সম্ভাব্য সংশোধন নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের মতামত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

প্রায় তিন দশক পর গত মে মাসে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগের বিধিমালাটি ছিল ১৯৯৪ সালের। এটি করা হয় ১৯৮৫ সালের বিধিমালা বাতিল করে।

বিধিমালা জারির পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) দেশের বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন বেশ কিছু বিধি সংশোধনের দাবি জানায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ব্যবসায়ী নেতারা জানান, নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার কিছু বিধানের কারণে এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বারের মতো কিছু সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার সংশোধনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে মোটামুটি একমত হওয়া গেছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

আমরা ঢাকা চেম্বার থেকে কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের অনুরোধ করেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে রাজি হয়েছেতাসকীন আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বার

যেসব পরিবর্তন আসছে

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টানা দুবার বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পর্ষদে থাকলে একবার বিরতি দিয়ে আবার নির্বাচন করা যাবে। নিয়মটি ভবিষ্যতের পাশাপাশি বিগত সময়ের জন্যও প্রযোজ্য হবে বলে নতুন বিধিমালায় বলা হয়। কিন্তু এই বিধানের কারণে এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের অনেক সাবেক ও বর্তমান নেতার পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ কারণে বিধানটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ। ব্যবসায়ীদের এই ক্ষোভের কারণে বিধানটি বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া বর্তমান বিধি অনুযায়ী, ফেডারেশনসহ সব বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকেরা সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার হওয়ার কথা। তবে সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, ফেডারেশন ছাড়া দেশের অন্য বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সহসভাপতি সরাসরি সদস্যদের ভোটে কিংবা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করার বিধান সংযোজন করা হচ্ছে। নতুন বিধিমালা জারির আগে এই পদ্ধতিতেই বাণিজ্য সংগঠনগুলোর পর্ষদের শীর্ষ পদের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসছিল।

এবারের বিধিমালায় ফেডারেশন ও অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ মাস বেঁধে দেওয়া হয়। তবে পাঁচ যুগ ধরে এমসিসিআইয়ে তিন বছর মেয়াদি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে, সেখানে প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ পরিচালক অবসরে যান। সংশোধনী প্রস্তাবে, ফেডারেশন ও অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ অথবা ৩৬ মাস করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

বিদ্যমান বিধিমালায় বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য হওয়ার ফি বা মাশুল এক লাফে ৪৩ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ানো হয় সদস্যদের বার্ষিক চাঁদার পরিমাণও। এর ফলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে সদস্য হওয়া ও সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা বৃদ্ধির বিধানটি নিয়ে সারা দেশে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে এ-সংক্রান্ত বিধানও সংশোধন করা হচ্ছে।

বিধিমালায় কী কী সংশোধন হচ্ছে, সেসব বিষয়ে গত মাসে এক বৈঠকে আমাদের জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে শেষ পর্যন্ত কী পরিবর্তন আসে, সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি আমরামীর নিজাম উদ্দিন, সাবেক সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিধিমালার সংশোধনী প্রস্তাবে সদস্য হওয়ার ফি ও বার্ষিক চাঁদা কমানোর বিষয়টি আছে। যেমন—ক শ্রেণির বাণিজ্য সংগঠনে সাধারণ সদস্য হওয়ার ফি ১৫ হাজার থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা এবং বার্ষিক চাঁদা ৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা করা হতে পারে। খ শ্রেণির বাণিজ্যে সংগঠনে সদস্য হওয়ার ফি ও বার্ষিক চাঁদা একই থাকবে। সহযোগী সদস্যের জন্যও সদস্য ফি ও বার্ষিক চাঁদার হার একই হবে।

বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করার দাবি নিয়ে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল ফেডারেশনের সদস্যদের একাংশের জোট—এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ। এই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিধিমালার সংশোধন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষে হলে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন নির্বিঘ্ন হবে।

মীর নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বাণিজ্য সংগঠন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন বিধি বাদ দিতে অনুরোধ করি। বিধিমালায় কী কী সংশোধন হচ্ছে, সেসব বিষয়ে গত মাসে এক বৈঠকে আমাদের জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে শেষ পর্যন্ত কী পরিবর্তন আসে, সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি আমরা।’

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা চেম্বার থেকে কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের অনুরোধ করেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে রাজি হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় অন্য সবার কথাও শুনছে। শেষ পর্যন্ত কী পরিবর্তন আসবে, সেটি হয়তো মন্ত্রণালয় জানাবে। আমরা ফলোআপ করছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ