মিরপুরে আগুনে ১৬ মৃত্যু: ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা
Published: 15th, October 2025 GMT
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রাসায়নিক গুদামের মালিক শাহ আলম এবং ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার রাতে নিহত একজনের পরিবারের পক্ষ থেকে এই মামলা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশের পল্লবী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সালেহ মুহম্মদ জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় যে দুজনকে আসামি করা হয়েছে, তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে তাঁরা পলাতক।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিয়ালবাড়ির ৩ নম্বর রোডে অবস্থিত আলম ট্রেডার্স নামের ওই রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। এই আগুন বিস্ফোরিত হয়ে বিপরীত পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির দোতলায় স্মার্ট প্রিন্টিং নামের একটি কারখানায় টি-শার্ট প্রিন্ট করা হয়। আর তিন ও চারতলায় আর এন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা আছে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা চেষ্টার পর গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে চারতলা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে রাসায়নিক গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে আজ বেলা আড়াইটার দিকে (২৭ ঘণ্টা পর)। তবে ফায়ার সার্ভিস এখনো রাসায়নিকের গুদামের ভেতরে উদ্ধার অভিযান শুরু করতে পারেনি।
আরও পড়ুনরাসায়নিক গুদামটি অবৈধ, তিনবার নোটিশও দেওয়া হয়েছিল: ফায়ার সার্ভিস৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ রতল
এছাড়াও পড়ুন:
এই সংস্কারের কোনো আইনগত বৈধতা নেই, মানুষের সমর্থন নেই: জি এম কাদের
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারপ্রক্রিয়া চালাচ্ছে, তা সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের বাইরে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, খুব সীমিতসংখ্যক মানুষ এর সঙ্গে আছেন এবং এর কোনো আইনগত বৈধতা নেই।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এই সংস্কার বর্তমান সংবিধানপরিপন্থী। যেহেতু বেশির ভাগ মানুষের এতে সমর্থন নেই, সেখানে এই সংস্কার কার্যকর হবে না।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের কাকরাইলের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, দলীয় কর্মসূচিতে ধারাবাহিকভাবে বাধা দেওয়া, দল ও লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ষড়যন্ত্র করা, সরকারের নানা ব্যর্থতা, আগামী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ হত্যা, এ আন্দোলনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি ‘মাদার অর্গানাইজেশন’ হিসেবে ভূমিকা পালন করা, সমন্বয়কদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস এবং সরকার পতনে সশস্ত্র আন্দোলনের প্রস্তুতির কথাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ আজ এক বিশাল সমস্যাসংকুল পথ অতিক্রম করছে, যেখানে অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা, উদ্বেগ ও অশান্তি বিরাজমান।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, সরকার এমন একটি নির্বাচন চাইছে, যেখানে তাদের মতবাদের লোকই শুধু নির্বাচন করবে—সরকারি দল এবং আধা সরকারি দল বা এ ধরনের কিছু। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। কারণ, আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দল যারা নির্বাচনের বাইরে থাকবে, তারা নিশ্চয়ই এর প্রতিবাদ করবে।
জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, এখন সময় এসেছে; এই সরকারের নিজে থেকে চলে যাওয়া ভালো। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক ধরনের সরকার গঠন করা উচিত, যারা নিরপেক্ষভাবে সামনের নির্বাচনটি পরিচালিত করবে।
জাতীয় পার্টিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার জন্য সরকার বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেন জি এম কাদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর দুজন সমন্বয়ক জাতীয় পার্টিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যায়িত করে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই বলে ঘোষণা দিয়ে দেন। এর পরপরই মন্ত্রী মর্যাদার উপদেষ্টা (তথ্য উপদেষ্টা) মাহফুজ আলমও বলেন, রাজনীতি করতে পারবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত সরকারেরই।
জি এম কাদের বলেন, সরকারি প্ররোচনায় দলের (জাপার) কিছু নেতা, যাঁদের সত্যিকার অর্থে দোসর বলা যায়, তাঁরা লাঙ্গল প্রতীকের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টির কোনো নিষ্পত্তি করছেন না।
প্রসঙ্গ সশস্ত্র সংগ্রামজি এম কাদের বলেন, ছাত্র সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলনটি নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ ছিল না; এখানে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, মানুষ হত্যা করা হয়েছে এবং নাশকতা করা হয়েছে। হাসিবুল ইসলাম নামের একজন সমন্বয়ক বলেছেন টেলিভিশন টক শোতে। পরবর্তী সময়ে এটাও বলেছেন, আমরা প্রস্তুত ছিলাম, যদি এইভাবে সরকার পতন না হতো, তাহলে আমরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করতাম। তার মানে তাঁদের সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতিও ছিল।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, একটি সশস্ত্র সংগ্রাম করে সরকারকে পতন ঘটাতে বিপুলসংখ্যক প্রশিক্ষিত মানুষ, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বড় অঙ্কের অর্থের জোগান দরকার হয়। এই বিষয়টি প্রশ্ন উত্থাপন করে যে এটি কি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে গোপনভাবে করা সম্ভব? নাকি বাইরে থেকে কেউ এতে জড়িত ছিল? তিনি বলেন, যদি বাইরে থেকে কেউ জড়িত থাকে, তবে তাদের স্বার্থ শুধু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নাকি বাংলাদেশের কাঠামোতে তাদের নিজস্ব কাঠামো করে কোনো দেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে?
শিবির ‘মাদার অর্গানাইজেশন’জি এম কাদের অভিযোগ করেন, জামায়াত ও ছাত্রশিবির এই আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। শিবিরের কর্মীরা ‘হেলমেট বাহিনী’ হিসেবে ছাত্রলীগের মধ্যে ছিল বলেও প্রকাশ পেয়েছে। তিনি মনে করেন, এই আন্দোলনের পেছনে যদি কোনো সুপরিকল্পিত নকশা (মেটিকিউলাসলি ডিজাইনড) থাকে, তবে শিবির একটি মাদার অর্গানাইজেশন বা সর্বোচ্চভাবে একটি মুরব্বি সংগঠন হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সমন্বয়কদের ইতিহাস পর্যালোচনা করে তিনি দেখেছেন যে তাঁদের বেশির ভাগই মাদ্রাসার ছাত্র বা ইসলামি ঘরানার। তাঁরা অনেকেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং তাঁদের চালচলনে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
জি এম কাদের আরও বলেন, সমন্বয়কেরা যে রাষ্ট্রকাঠামোর প্রস্তাব দিচ্ছেন, তাতে তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে মনে করেন। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নেতাদের বিশ্বাসঘাতক এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মকে ভুল ছিল বলেও বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে পাকিস্তানের টাইপের একটি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আমাদের দেশে পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
কত পুলিশ হত্যা, জানতে চাইআন্দোলনের সময় এবং পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে পুলিশ হত্যার অভিযোগ করেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এই আন্দোলনের সময় এবং আন্দোলন–পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে পুলিশ হত্যা হয়েছে।
জি এম কাদের বলেন, ৪ ও ৫ আগস্ট ৩৯ জন নিহত হয়েছেন বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। কীভাবে হয়েছে, কেমন করে হয়েছে, এগুলোর ডিটেইল (বিস্তারিত) কোনো কিছু নেই। তবে অনেক পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে শোনা যায়, তিন-চার হাজারের বেশি লোক হত্যা করা হয়েছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা জানতে চাই, কতগুলো পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে বা হত্যা হয়েছে। কতগুলো এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। এইটা আমরা জানতে চাই, দেশবাসী জানতে চায়।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার, এমরান হোসেন মিয়া, মাইনুল রাব্বি চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম উপস্থিত ছিলেন।