ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর গাফিলতি, মালিকদের দায়হীনতা মিলিয়ে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। লাশগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে সেগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই, কোনটা কার লাশ। আহত তিনজন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা, রাসায়নিকের গুদামের আগুনের কারণে যে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়, তাতে অনেকে অচেতন হয়ে পড়েন। এ ছাড়া পোশাক কারখানাটির ছাদের দরজা তালাবদ্ধ থাকায় শ্রমিকেরা ভেতরে আটকা পড়েন। এত প্রাণহানির মূল কারণ এ দুটিই। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সব ধরনের বন্দোবস্তই সেখানে আগে থেকেই  ছিল। শ্রমিকের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশের প্রশ্নটি আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে কতটা গৌণ ও গুরুত্বহীন, সেই বিষয়টিই শিয়ালবাড়ির অগ্নিকাণ্ড চোখে আঙুল দিয়ে আবারও দেখিয়ে দিল।

বরাবরের মতো এবারও অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির পরই জানা গেল রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানা কোনোটারই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না। কারখানা ভবনটির কোনো জরুরি বহির্গমন পথ ছিল না। অনেককে ভবনটি থেকে জানালা ভেঙে বের হতে হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, অগ্নিনিরাপত্তা সনদ কিংবা বহির্গমন সিঁড়ি ছাড়া সেখানে কারখানা করার অনুমোদন কীভাবে মিলল? এর থেকেও বড় প্রশ্নটি হলো, একটি আবাসিক এলাকায় পোশাক কারখানার পাশে একটি রাসায়নিক গুদাম কীভাবে থাকতে পারে? ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, রাসায়নিক গুদামটি অবৈধ, তিনবার নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। নোটিশ দেওয়া মানেই কি ব্যবস্থা নেওয়া?

আমরা মনে করি, কারখানা ও গুদামের মালিক, কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও সংস্থার কোনোটাই মিরপুরের অগ্নিকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী ও ২০১৯ সালে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরানোর সুস্পষ্ট সুপারিশ ছিল। কিন্তু রাসায়নিক দ্রব্য পরিবহন ও গুদামজাতকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যুগোপযোগী আইন এবং সমন্বিত কোনো বিধিমালা নেই। বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সংস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকায় শেষ পর্যন্ত সমন্বিত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতিও এখানে বড় বাধা।

অগ্নিকাণ্ডে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের স্বজনদের শোক ও ক্ষত অমোচনীয়; কোনো কিছু দিয়েই সেটা পূরণীয় নয়। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে অবশ্যই যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহত সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

ভবিষ্যতে যাতে এ রকম মানবিক বিপর্যয় রোধ করা যায়, তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য। অতীতের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই নতুন এই বিপর্যয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। শিয়ালবাড়ির অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনায় গুদামমালিক, কারখানামালিক, কারখানা পরিদর্শকসহ যাঁদের দায় ও গাফিলতি রয়েছে, তদন্ত করে তাঁদের সবাইকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে।

শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে ও তাঁদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে শ্রম সংস্কার কমিশন বেশ কয়েকটি সুপারিশ দিয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে না সরকার, না রাজনৈতিক দল—কেউই আমলে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। বলা চলে সংস্কার–ভাবনা থেকে শ্রমিকেরা বাদ পড়ে গেছেন। কিন্তু শ্রমিকদের অনিরাপদ পরিবেশে রেখে কোনো উন্নয়নই টেকসই হতে পারে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ পর ব শ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

পায়ে থাকা নূপুর দেখে বোনের লাশ শনাক্তের দাবি

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যের একজন নার্গিস আক্তার বলে দাবি করেছেন বোন পরিচয় দেওয়া মৌসুমি। তাঁর দাবি, পায়ে থাকা নূপুর দেখে বোনের লাশ শনাক্ত করেছেন তিনি।

আজ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে প্রথম আলোকে এ কথা বলেন মৌসুমি।

গতকাল মঙ্গলবার শিয়ালবাড়ির একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। গুদামে আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়ে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশগুলো গতকাল সন্ধ্যার পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুনমিরপুরে আগুন: ১০ জনের লাশ শনাক্তের দাবি স্বজনদের১ ঘণ্টা আগে

মৌসুমি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বোন নার্গিস (১৯) মাত্র ১৫ দিন আগে চারতলা ভবনটির তিনতলার কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন। নার্গিস কোনো মুঠোফোন ব্যবহার করতেন না। কারখানাটির লাইনম্যানের কাছ থেকে খবর পেয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসে বোনের লাশ শনাক্ত করেন তিনি।

মৌসুমি বলেন, পায়ে থাকা নূপুর দেখে তিনি তাঁর বোনের লাশ চিনতে পেরেছেন।

মৌসুমি জানান, তাঁদের বাবার নাম ওয়াজিউল্লাহ। তিনি ফলের আড়তে কাজ করেন।

মর্গের সামনে জড়ো হওয়া ভুক্তভোগী স্বজনদের একজন ফাতেমা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ে মাহিরা আক্তার (১৪) চারতলা ভবনটির তিনতলার কারখানায় কাজ করতেন। মেয়ের লাশ দেখে তিনি চিনতে পেরেছেন।

ফাতেমা বেগম (বাঁয়ে) বলছেন, তাঁর মেয়ের নাম মাহিরা আক্তার। তাঁর লাশ শনাক্ত করতে পেরেছেন তিনি। আজ বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণপূর্তের কর্মকর্তা সরকারি বাসার দরজা-জানালা ‘খুলে নিয়ে গেছেন’
  • কাল ভোট, চলছে রাকসু ভবন প্রস্তুতের কাজ
  • চট্টগ্রামে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের পর ভবনে আগুন
  • মাদাগাস্কারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসের জীর্ণ দশাই কি বিক্ষোভ উসকে দিয়েছিল
  • পায়ে থাকা নূপুর দেখে বোনের লাশ শনাক্তের দাবি
  • মিরপুরে আগুন: ১০ জনের লাশ শনাক্তের দাবি স্বজনদের
  • বিশেষ পোশাক পরে মিরপুরের রাসায়নিক গুদামে ঢোকার প্রস্তুতি ফায়ার সার্ভিসের
  • পদ্মায় বিলীন বিদ্যালয়টি চালুর উদ্যোগ নেই