সালফোর্ড সিটিকে অনায়াসেই ছদ্মবেশী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বলে দেওয়া যায়। এই দলটির মালিকেরা ইউনাইটেডের সাবেক খেলোয়াড়, একজন তো ফুটবল ডিরেক্টরও। সেই দলটিই গতকাল রাতে এফএ কাপের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে।

সালফোর্ড ম্যানচেস্টার সিটির কাছে এমন সময়ে ৮ গোল হজম করেছে, যার আগের ৬ ম্যাচে দলটির জালে কেউই বল পাঠাতে পারেনি। হতাশ সালফোর্ড কোচ তাই ম্যাচশেষে বলেছেন, কেউ যদি বলত ‘‘৭ ম্যাচে ৮ গোল হজম করো’’, সেটার পক্ষে ছিলাম। কিন্তু এক ম্যাচে ৮ গোল হজম মানতে পারছি না।

ইতিহাদে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে সিটির হয়ে গোল করেছেন ৫ জন। এর মধ্যে ৬২, ৭২ ও ৮১ মিনিটে ৩ গোল করেছেন জেমস ম্যাকাটি। সর্বশেষ দুই মৌসুম শেফিল্ডে ধারে থাকা এই উইঙ্গারের এটি ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। এ ছাড়া জেরেমি ডকু দুটি (৮ ও ৬৯ মিনিট) এবং ডিবিন মুবামা (২০), নিকো ও’রেইলী (৪৩) ও জ্যাক গ্রিলিশ (৪৯) একটি করে গোল করেন। গ্রিলিশ ও ডকুর দ্বিতীয় গোলটি এসেছে পেনাল্টি থেকে।

মাঠে ডিরেক্টর বক্সে বসে খেলাটি দেখেছেন সালফোর্ড সিটির সহ-মালিক ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক খেলোয়াড় পল স্কোলস ও নিকি বাট। আরেক মালিক রায়ান গিগস টেকনিক্যাল এরিয়ায় ছিলেন ফুটবল ডিরেক্টর হিসেবে। এই তিনজন ছাড়াও সালফোর্ডের মালিকানায় আছেন ইউনাইটেডের সাবেক ফুটবলার গ্যারি নেভিল, ফিল নেভিল ও ডেভিড বেকহাম।

ম্যাচের পর সালফোর্ড কোচ কার্ল রবিনসন পেপ গার্দিওলার দলের প্রশংসা করে বলেন, ‘ম্যানচেস্টার সিটি পেপ কখনো কাউকে অসম্মান করে না। আজ তারা দেখিয়েছে, কেন তারা সিটি, কেন তারা এ পর্যায়ে।’ আগের ৬ ম্যাচে গোল হজম না করার প্রসঙ্গ টেনে রবিনসন যোগ করেন, ‘আমি তো খেলোয়াড়দের বলেছি, কেউ যদি আমাকে বলত যে ‘‘সাত ম্যাচ আট গোল হজম করো’’, আমি সেটার পক্ষে থাকতাম। কিন্তু এক ম্যাচেই ৮ গোল হজম করে ফেলাটা মানতে পারছি না।’

ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়াও এফএ কাপের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে বড় জয় পেয়েছে চেলসি ও লিভারপুল। চেলসি ৫-০ গোলে হারিয়েছে মোরেকাম্বেকে, অ্যাকরিংটনের বিপক্ষে লিভারপুলের জয় ৪-০ ব্যবধানে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ