ক্ষমতায় থেকে দল গঠন মানুষ ভালোভাবে নেয় না
Published: 12th, January 2025 GMT
প্রথম আলো:
অভ্যুত্থানের একটা বড় স্পিরিট অন্তর্ভুক্তিমূলকতা, বহুত্ববাদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু আমরা দেখছি, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক স্বরগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বাদ পড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা আক্রান্তও হচ্ছে। অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে এটা কি সাংঘর্ষিক নয়?
জোনায়েদ সাকি: জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা, তার সঙ্গে এগুলো সরাসরি সাংঘর্ষিক। প্রতিটি বড় আন্দোলনের ক্ষেত্রে দুই ধরনের প্রবণতা থাকে। একটা প্রবণতা থাকে গণতান্ত্রিক, অর্থাৎ সবাইকে নিয়ে ইতিবাচক একটা দিকে যাওয়া। অন্যদিকে আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছিল, যেসব প্রবণতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছিল, বিপরীত পক্ষ হিসেবে কেউ কেউ সেই চর্চাগুলোকেই সামনে নিয়ে আসে। অভ্যুত্থান একটা গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষাকে সামনে এনেছে। মানুষ আশা করছে এমন একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা পাবে যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, জীবনচর্চা, লিঙ্গীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে প্রত্যেকে নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং রাষ্ট্র তার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদার গ্যারান্টি দেবে।
অন্যদিকে আমরা দেখছি, নানা ধরনের উগ্রতার একটা প্রকাশ ঘটছে। অভ্যুত্থান–পরবর্তী যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, সেটাকে কাজে লাগিয়ে একটা গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। মাজারের ওপর হামলা হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়, পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগত সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে, নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, এটা সত্যি। একই সঙ্গে আবার এ ঘটনাগুলোকে সংখ্যায় অনেক দেখিয়ে, অনেক রং চড়িয়ে, সারা দুনিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে। এখানে আমরা পতিত ফ্যাস্টিস্টদের ভূমিকা দেখছি; আবার ভারতের মিডিয়ার একাংশ ও তাদের শাসক দলের দিক থেকেও এ প্রচারণা দেখছি।
প্রথম আলো:কিন্তু এ ধরনের হামলায় বিচার ও প্রতিকার হতে দেখি না।
জোনায়েদ সাকি: আমরা বলেছি, আমরা অসত্যের বিরুদ্ধে সত্য নিয়ে লড়াই করতে চাই। সে কারণেই প্রতিটা ঘটনার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। যারা এর জন্য দায়ী, তাদেরকে জবাবদিহি ও বিচারের আওতায় আনা দরকার। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে একটা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রকেও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আগেও আমরা দেখেছি, এ ধরনের ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হয় না, প্রতিকার মেলে না, এমনকি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। সে কারণে আমরা জোরালো দাবি করে আসছি, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করতে হবে এবং কর্তব্যরত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এটা করা গেলেই যে মিথ্যা প্রচারণাটা চলছে, সেটাকে আমরা যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারব।
একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে উগ্রতার বিরুদ্ধে একটা সামাজিক গণপ্রতিরোধ সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশে এ ধরনের উগ্রতার চর্চা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অনুমোদিত নয়, সেই বার্তাটি সুস্পষ্টভাবে তাদেরকে দিতে হবে।
জোনায়েদ সাকি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইন্টারনেট বন্ধ, স্টারলিংক চালু করলেন ইলন মাস্ক
মার্কিন ধনকুবের ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, ইরান সরকারের পক্ষ থেকে স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর তিনি উপগ্রহনির্ভর ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংক সেখানে চালু করেছেন।
শনিবার সকালে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে এক পোস্টে মাস্ক লিখেন, “The beams are on,” অর্থাৎ “সংযোগ চালু হয়েছে।”
ইরান সরকার শুক্রবার সকালে দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দেশটির সাধারণ মানুষ আন্তর্জাতিক সংবাদ ও তথ্যের উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় স্টারলিংকের মাধ্যমে বিকল্প ইন্টারনেট সংযোগ চালু করেন ইলন মাস্ক।
তার আগে ইসরায়েল দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় এবং শীর্ষস্থানীয় সরকারপন্থি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। এই হামলার ফলে ইরানে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সরকারি সূত্রের বরাতে ওয়াশিংটন টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই হামলা ইরানের শাসকের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভাব্য আন্দোলন দমন করতেই ইরান সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
শুক্রবারই মার্কিন রক্ষণশীল টকশো সঞ্চালক মার্ক লেভিন এক পোস্টে ইলন মাস্ককে বলেন, তিনি যেন স্টারলিংকের মাধ্যমে ইরানিদের পুনরায় ইন্টারনেট সংযোগ দেন। মার্ক লেভিন মাস্ককে বলেন, স্টারলিংক চালু করা হলে তা ইরানি শাসনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেবে। এরপরই ইলন মাস্ক জানান, স্টারলিংক চালু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, স্টারলিংক হচ্ছে স্পেসএক্সের মালিকানাধীন একটি উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা পৃথিবীর কাছাকাছি কক্ষপথে থাকা হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দূরবর্তী বা সংযোগবিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট সরবরাহ করে। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল ও ওয়াশিংটন টাইমস