দরপতনে শুরু হয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এ সপ্তাহের লেনদেন। গতকাল রোববার প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৩৮ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৫৬ পয়েন্টে নেমেছে। গত ১১ ডিসেম্বরের পর এটাই সূচকের সর্বোচ্চ পতন। গত সপ্তাহে সূচকটি মোট ৫ পয়েন্ট হারিয়েছিল।
এদিকে ডিএসইএক্স সূচক ফের পুনর্বিন্যাস হতে যাচ্ছে। এবার নতুন করে ৮৭ কোম্পানির শেয়ার যুক্ত হবে। বাদ পড়বে ১৪টি। এতে এই সূচকভুক্ত মোট কোম্পানি সংখ্যা বেড়ে ৩২৬টিতে উন্নীত হবে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৫৩ কোম্পানির শেয়ার সূচকভুক্ত। আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে সূচকটি নতুনভাবে গণনা হবে।
গতকাল ডিএসইতে ৩৯৬ কোম্পানির কম-বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৮০টিই দর হারিয়েছে। শেষ লেনদেন দরের হিসাবে দর অপরিবর্তিত থাকে ৪৭টি। এদিন কোনো খাতই দরপতনের বাইরে ছিল না।
সূচকের পুনর্বিন্যাস
তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে এবার ডিএসইএক্স সূচক গণনা হতে যাচ্ছে। বার্ষিক সূচক পুনর্বিন্যাসের নিয়মে ডিএসইএক্স সূচক ৩২৬টি শেয়ার নিয়ে গণনা হবে। তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার সূচকভুক্ত হতে চলায় সূচকের ওঠানামা বর্তমানের তুলনায় বেশি বাড়তে বা কমতে পারে।
বিশ্বখ্যাত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপির সুপারিশে ২০১৩ সাল থেকে ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক হিসেবে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স, সংক্ষেপে ডিএসইএক্স গণনা করে আসছে। এ সূচকে তালিকাভুক্ত সেসব কোম্পানির শেয়ারগুলোই যুক্ত হয়, যাদের ন্যূনতম ফ্রি-ফ্লোট বাজার মূলধন অন্তত ১০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ছয় মাসে প্রতি কর্মদিবসে গড়ে ১০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা থাকতে হয়। তবে পূর্ববর্তী বছরে সূচকভুক্ত কোনো শেয়ারের ফ্রি-ফ্লোট বাজার মূলধন কমে ১০ কোটি টাকার নিচে নামলেও যদি ৭ কোটি টাকার নিচে না নামে এবং সর্বশেষ ছয় মাসে দৈনিক গড় লেনদেন ১০ লাখের নিচে নামলেও যদি ৭ লাখের নিচে না নামে, তাহলে ওই শেয়ার সূচকে বহাল রাখার নিয়ম রয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আমের দাম পড়ছে কেন, কী বলছেন ব্যবসায়ীরা
এবার আমের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু দামে মার খাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। ভরা মৌসুমে বাজারে আমের ভালো দাম না পেয়ে হতাশ তাঁরা। আমের দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণের কথা বললেন ব্যবসায়ীরা।
অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন জাতের আম আগেভাগেই পেকে গেছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাংক ১০ দিন বন্ধ থাকায় লেনদেন বন্ধ ছিল। ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির পর এখন অনেকের হাতে টাকাপয়সা নেই। তাই বাজার ভরা আম, কিন্তু ক্রেতা নেই। এসব কারণেই এবার আমের দাম পড়ে গেছে।
আরও পড়ুনকেন এবার একসঙ্গে পেকে যাচ্ছে ক্ষিরশাপাতি, আম্রপালি, ল্যাংড়া১৫ জুন ২০২৫গতকাল রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, রাজশাহীর বানেশ্বর ও নওগাঁর সাপাহারে বড় তিনটি আমার বাজার ঘুরে প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা আমের দাম নিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হতাশার কথা শুনেছেন।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী বললেন, এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে আগেই আম পেকে গেছে। বেশ কিছু জাতের আম একসঙ্গে পেকে গেছে। বাজারে আমের প্রচুর আমদানি হয়েছে। ঈদের পরে ঢাকার যে ব্যাপারীদের আম কিনতে রাজশাহীতে আসার কথা, তাঁদের অর্ধেকও এখনো আসেননি। ফলে বাজারে আমের আমদানি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু কেনার লোক নেই। এ জন্য আমের বাজারে ধস নেমেছে।
কানসাট আমের বাজারে কথা হয় কয়েকজন আমচাষির সঙ্গে। তাঁদের মতে, ঈদের দীর্ঘ ছুটি, অনলাইনে আম পাঠানো ক্রেতাদের অনুপস্থিতি, অতিরিক্ত গরমে আম পেকে যাওয়া, আম্রপালি, কার্টিমন, এমনকি বারি-৪ জাতের আমও আগাম বাজারে চলে আসায় ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া জাতের আমের দরপতন হয়েছে।কানসাটের বাজারগতকাল সকালে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট আমের বাজারের আড়তদার সাহেব আলীর সঙ্গে। তিনি বললেন, তিনি মাঝারি মানের ক্ষীরশাপাতি (হিমসাগর নামেও চেনেন অনেকে) আম কিনেছেন ২ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে। ৫২ কেজিতে মণ ধরে এ আম কেনা হয়। কেজির হিসাবে ধরলে পড়বে ৪৩ টাকা ২৫ পয়সা।
সাহেব আলী জানান, বাজারে এখন ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া জাতের আমই প্রধান। ভালো মানের আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে। সবচেয়ে নিম্নমানের আম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে। ল্যাংড়া আম বিক্রি হচ্ছে আরও কমে। ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।
কানসাট আমের বাজারে কথা হয় কয়েকজন আমচাষির সঙ্গে। তাঁদের মতে, ঈদের দীর্ঘ ছুটি, অনলাইনে আম পাঠানো ক্রেতাদের অনুপস্থিতি, অতিরিক্ত গরমে আম পেকে যাওয়া, আম্রপালি, কার্টিমন, এমনকি বারি-৪ জাতের আমও আগাম বাজারে চলে আসায় ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া জাতের আমের দরপতন হয়েছে। ঈদের আগে যে দরে আম বিক্রি হয়েছে, এখন তার চেয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কমেছে আমের দাম।
এখানকার ব্যবসায়ীরাও বলছেন, গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে নাক ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গোসহ বিভিন্ন জাতের আম।নওগাঁর বাজারআমের ‘নতুন রাজধানী’খ্যাত নওগাঁয় এবার আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেওয়া সময়সীমা অনুসারে আম্রপালি আম বাজারে আসার কথা ছিল ১৮ জুন থেকে। কিন্তু প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের প্রায় ১৫ দিন আগে থেকেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম্রপালি। শুধু আম্রপালি নয়, প্রায় সব জাতের আম এবার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পেকে গেছে।
এখানকার ব্যবসায়ীরাও বলছেন, গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে নাক ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গোসহ বিভিন্ন জাতের আম।
এসব ল্যাংড়া আম প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, আম্রপালি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা, নাক ফজলি ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা এবং বারি আম-৪ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে।
অথচ গত বছর এ সময়ে নওগাঁর বাজারে ল্যাংড়া আম প্রতি মণ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, আম্রপালি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, নাক ফজলি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
কথা হয় সাপাহার আম বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে আম্রপালি, নাক ফজলি, বারি আম-৪, ল্যাংড়া, ব্যানানা ম্যাঙ্গো আগেভাগেই পেকে গেছে। গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও নাক ফজলি আম বাজারে ওঠার চার-পাঁচ দিন দাম ঠিকমতো পেলেও সময়ের আগেই আম্রপালি ও ল্যাংড়া আম বাজারে উঠতে শুরু করায় দরপতন শুরু হয়।