বড় ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ যেভাবে ছোট দল
Published: 14th, January 2025 GMT
লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে গত মৌসুমটা দারুণভাবে শেষ করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিলিয়ান এমবাপ্পের আগমনের কারণে চলতি মৌসুমেও অন্যতম ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল রিয়ালকে। কিন্তু গত মৌসুমের তুলনায় এ মৌসুমে রিয়ালের পারফরম্যান্স বেশ সাদামাটাই। এমবাপ্পের সংযুক্তিও দলের পারফরম্যান্সে বিশেষ কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।
উল্টো গত মৌসুমে দারুণ নৈপুণ্য দেখানো ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও জুড বেলিংহামও বেশ নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে বার্সেলোনার কাছে ৫-২ গোলে হেরে স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপাও হাতছাড়া হয়েছে রিয়ালের। সব মিলিয়ে এই মৌসুমে রিয়ালের পারফরম্যান্স মোটেই সন্তোষজনক নয়। বরং তুলনামূলক সম শক্তির দলগুলোর বিপক্ষে রিয়ালের পারফরম্যান্সকে বেশ শোচনীয়ই বলতে হয়।
শুরুতে বার্সেলোনার বিপক্ষে পারফরম্যান্সের কথাই ধরা যাক। লা লিগায় ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেই রিয়াল বিধ্বস্ত হয়েছিল ৪-০ গোলে। সেই ম্যাচে হাইলাইন ডিফেন্সিভ কৌশলে রিয়ালকে আটকে দেওয়ার পাশাপাশি আক্রমণেও বার্সা ছিল দুর্দান্ত। এরপর স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালেও রিয়ালের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে বার্সা। জেদ্দায় দারুণ নৈপুণ্যে রিয়ালকে তারা উড়িয়ে দিয়েছে ৫-২ গোলে। অর্থাৎ শুধু বার্সার কাছেই রিয়াল দুই ম্যাচে হজম করেছে ৯ গোল।
আরও পড়ুনএল ক্লাসিকোতে রিয়ালের ঘুমপাড়ানি ফুটবল ও ফ্লিকের আরেকটি মাস্টারক্লাস ১৩ জানুয়ারি ২০২৫লা লিগায় এখন শীর্ষে থাকা আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষেও জিততে পারেনি রিয়াল। প্রথম লেগের ম্যাচটিতে কোনোরকমে ড্র করেছিল কার্লো আনচেলত্তির দল। বার্সেলোনা বা আতলেতিকোর মতো বড় না হলেও চলতি মৌসুমে দারুণ নৈপুণ্য দেখাচ্ছে অ্যাথলেটিক বিলবাও। এই মুহূর্তে ১৯ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার ৪ নম্বরে আছে বিলবাও। সেই বিলবাওয়ের মাঠ থেকেও কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে ফিরতে পারেনি মাদ্রিদের ক্লাবটি।
বার্সার কাছে হেরে বিধ্বস্ত রিয়ালের দুই তারকা ফুটবলার জুড বেলিংহাম ও কিলিয়ান এমবাপ্পে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।
অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’
অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যানএনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।
জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’
আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।
এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।
আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগেএনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’