নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক। জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন, সংস্কার ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহকারী সম্পাদক এহ্‌সান মাহমুদ

সমকাল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভর করে জাতীয় নাগরিক কমিটি যেভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, গত চার মাসে এটি পিছিয়ে পড়ল কি? রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগেই জনগণের কাছ থেকেও দূরত্ব তৈরি হলো কিনা?

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যারা করেছেন, তারাই জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করেছেন, বিষয়টা এমন না। জাতীয় নাগরিক কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা যেমন অংশ নিয়েছেন, তেমনি নাগরিকরাও অংশ নিয়েছেন। নাগরিকরা অংশ নিয়েছেন ছাত্রদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েই। সেই নাগরিকদের কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিল না। তারা যাতে সংঘবদ্ধ হতে পারেন সেই ধারণা থেকে নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এটি এজের (বয়সের) পার্থক্য। যাদের ছাত্রত্ব থাকবে, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনে থাকবেন, যাদের ছাত্রত্ব শেষ তারা নাগরিক কমিটিতে থাকবেন। 

এবারে আন্দোলনটা যখন হয়েছিল, তখন কোনো বিভাজন বা দলীয় মতাদর্শিক লড়াই ছিল না। এ সফল আন্দোলনের পরে শেখ হাসিনার আমলে যে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাধীনতা খর্ব করে রাখা হয়েছিল, এখন তা ফিরে পেয়েছে। তারা তাদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার ফিরে পায়। এ রাজনৈতিক দলগুলো যখন তাদের ব্যানারে ফিরে যায়, তখন দলীয় রাজনীতির বিভক্ত হওয়ার ধারাবাহিকতা আবার ফিরে আসে। আদর্শিক বিভাজনটিও ফুটে ওঠে। ফলে আন্দোলন শুরুর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের যে অবস্থান ছিল, সেটি পরে আর থাকেনি। এ আন্দোলনের পরে আমাদের একটা উপলব্ধি হয়েছে যে, তরুণ প্রজন্ম যারা আন্দোলন করেছে, তারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটি রূপান্তর প্রত্যাশা করে। এটি উপলব্ধি করে তাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা শুরু করি। তারই ফসল এখনকার জাতীয় নাগরিক কমিটি। এটি কেমন কাজ করছে সেটি ভবিষ্যতে ইতিহাসের কাঠগড়ায় বিচার হবে। আমরা ইতোমধ্যে এমন কিছু উদ্যোগ বা কাজ করেছি, যা নাগরিক কমিটি না শুরু করলে করা হতো না। ইতিহাস আমাদের সে সুযোগ দিয়েছে। সে জন্য আমরা ইতিহাসের কাছে কৃতজ্ঞ।

সমকাল: সম্প্রতি জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে বেশ কথা শোনা গেল। কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়ার পরেও আপনারা ঘোষণা থেকে সরে এলেন। এটিকে কীভাবে দেখছেন? 

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী: আমরা নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখতে পাই যে সেই সময়ে আন্দোলনের রূপরেখার একটি লিখিত দলিল আছে। এবারের হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের এমন কোনো লিখিত রূপরেখা নেই। শেখ হাসিনাকে হটাতে এত মানুষকে জীবন দিতে হবে, এত মানুষ আহত হবে– এটি আমরা কখনও ভাবিনি। এত বিপুলসংখ্যক মানুষ লড়াই করে জীবন দিল, আহত হলো, তারা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়, এটির একটা দালিলিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা আমরা করছি। এটি জনমানসের মাঝে আছে। সামষ্টিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের সামনে হাজির করার জন্যই এটি করা জরুরি। গত চার মাসে আমরা দেখিনি বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল এটির জন্য কোনো উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এগিয়ে এসেছি। নাগরিক কমিটি বৈষম্যবিরোধী অংশের সঙ্গে আলাপ করেছে। আমরা সম্মিলিতভাবে এটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছি। 

সমকাল: সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে প্রথমে ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’ বলা হয়েছিল। 

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যেহেতু সরকারি দল নয়, তাই সরকার এটি বলেছে। আমরা আমাদের দায়িত্ব থেকে এটি করেছি। এই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, সরকারের ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। নইলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। 

সমকাল: গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পরে ঘোষণাপত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে আপনাদের কাছে?

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী: জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। হয়তো এমন হতে পারে, শব্দ চয়নে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এগুলো আমরা সমাধান করেছি। আমরা খসড়া করে ফেলেছি। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের বিষয়ে মানুষের প্রত্যাশা জানতে ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী জনসংযোগ করা হয়েছে। আন্দোলনের পর ছাত্র-জনতার একটি সরকার গঠন হয়েছিল। সরকারেরই ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল। সরকারের বিভিন্ন কাজে আমরা মন্থর গতি দেখতে পাচ্ছি। যখন ২০২৪ সাল অতিক্রান্ত হচ্ছিল, আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, তাদের একটি দায়বদ্ধতা রয়েছে, সে জন্য তাদের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জুলাইয়ে একটি ঐক্যের জায়গা রয়েছে, সে জায়গায় জনগণকে সমুন্নত রাখতেই এ উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও বাংলাদেশের মানুষের সেখানে আসার কথা ছিল, আমরা তাদের সেখানে পাইনি। যখন জাতির একটি সংকটকাল যাচ্ছিল এবং শহীদ ও আহতের স্বীকৃতি নিয়ে কোনো ঘোষণা আসছিল না, সেই সংকট মুহূর্তে আমরা এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। 

সমকাল: ঘোষণাপত্র ঘোষণা করা নিয়ে আপনারা কয়েকবার পিছু হটলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতার কথাও বলেছেন আপনারা। বিষয়টি যদি পরিষ্কার করেন.

.. 

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী: ঘোষণাপত্র নিয়ে সবার ঐকমত্য রয়েছে। রাষ্ট্রের যতগুলো অংশ এবং দেশের সব পক্ষ ও মানুষের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গিগত জায়গা বা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো কীভাবে তুলে আনা যায়, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে একটু দেরি হয়েছে। গত ৫৩ বছর এ রাষ্ট্রকে অকার্যকর বানিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, সব মানুষ ও পক্ষ যাতে অংশ নিয়ে তাদের ভাষাটা প্রকাশ করতে পারে। ৫ আগস্ট আমরা যে জনতার স্রোত দেখতে পেয়েছিলাম, প্রত্যেক মানুষের কথা যেন এ ঘোষণাপত্রে থাকে; এবং যাদের দীর্ঘকালীন ন্যায্য অধিকার রয়েছে, যা নিয়ে সবাই লড়াই করছেন, প্রতিটি অধিকার যেন থাকে, সেসব বিষয় নিয়ে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি।

সমকাল: নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের অগ্রগতি কতদূর?

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী: সময়ের টানে বাংলাদেশে সেকেন্ড রিপাবলিকের (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র) একটি দল আসবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধসে পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো ধসে গেছে। এই আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম জানান দিয়েছে, তারা এগিয়ে আসছে। সেটি নাগরিক কমিটি করুক কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা এগিয়ে আসুক– সেটি সেকেন্ড রিপাবলিকের রাজনৈতিক দলের করতে হবে। পুরোনো রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা ও সংস্কৃতি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে। আমরা নাগরিক কমিটি বলেছি, সেটি ঠিক করে দিতে আমরা সহায়তা করতে পারি। 

সমকাল: এই রাজনৈতিক দলে তাহলে আপনারা থাকছেন না?

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী: জাতীয় নাগরিক কমিটি কখনও রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে না। এখান থেকে গিয়ে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন। একই সঙ্গে নাগরিক কমিটি এবং রাজনৈতিক দলের সদস্য কেউ থাকতে পারবেন না। রাজনৈতিক দল গঠনের ডাকটি মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররাই দেবেন। নাগরিকের জায়গা থেকে আমরা যেভাবে আন্দোলনে সহায়তা করেছি, সেভাবেই থাকব। 

সমকাল: নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে কারা থাকছেন? দলের গঠনতন্ত্রে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তার বাইরে নতুন কী থাকছে?

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্ব মেনেই আমরা রাজনৈতিক দল করতে চাই। সেটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে। সকল মতের মানুষকে নিয়েই আমরা এটি করতে চাই। সেখানে বিএনপি, জামায়াত করেন, এমন একজন যিনি বর্তমানে বিএনপি বা জামায়াতের রাজনীতিকে সমর্থন করছেন না, তারাও থাকতে পারেন। এ ছাড়াও সাধারণ নাগরিকের মধ্য থেকেও থাকতে পারেন। মানুষ স্বপ্নের বাংলাদেশকে যেভাবে দেখতে চায়, সেভাবে দলটিকে তৈরি করতে চাই। 

সমকাল : ধন্যবাদ আপনাকে। 

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী : সমকালকেও ধন্যবাদ। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র হয় ছ ল সমক ল র একট আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল

সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।

সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।

১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরু

ফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।

কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।

তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।

ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুন

ফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।

এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।

আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১

ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।

বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।

৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুন

একটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।

এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন

সকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।

নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।

৫. শরীরচর্চা করুন

শরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।

সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।

ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণ

ব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।

সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।

৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন

বাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১

নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।

সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম

আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ