জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে দেওয়া ভাষণে তিনি তার এক মেয়াদে প্রশাসনের অর্জন তুলে ধরেন। তিনি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, মহামারী থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার এবং আমেরিকাকে আরও নিরাপদ করার কথা উল্লেখ করেন।
বিদায়ী ভাষণে বাইডেন বলেন, "আমরা যা করেছি তার পূর্ণ প্রভাব অনুভব করতে সময় লাগবে। তবে বীজ রোপিত হয়েছে, যা আগামী দশকগুলোতে বেড়ে উঠবে এবং ফল দেবে।" সুত্র- বিবিসি
রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। আর মেয়াদ শেষে বিদায় নেবেন ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইডেন। ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার দিন কয়েক আগে বাইডেন তার বিদায়ী ভাষণ দিলেন।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাইডেন বলেন, "শক্তিশালী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের অপ্রতিহত প্রভাব ব্যবহার করে আমাদের জলবায়ু সংকট মোকাবিলার পদক্ষেপ ধ্বংস করতে চায়, নিজেদের ক্ষমতা এবং মুনাফার স্বার্থে।"
তিনি সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেন, বিশেষ করে মেটা, যা স্বাধীন তথ্য যাচাইকারীদের কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। বাইডেন বলেন, "সামাজিক মাধ্যম সত্যের উপর মিথ্যা চাপিয়ে দিচ্ছে, ক্ষমতা ও মুনাফার জন্য।"
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) বিপুল সম্ভাবনা দেখলেও এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন বাইডেন। তিনি বলেন, এআই বিপুল সম্ভাবনা উপহার দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রহরা না থাকলে তা নতুন হুমকির জন্ম দিতে পারে। তবে রূপান্তরমূলক প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই চীনের ওপর নেতৃত্ব নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন বাইডেন।
প্রাইমটাইমে দেওয়া ভাষণে ৮২ বছর বয়সী বাইডেন বলেন, আজ আমেরিকায় চরম সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাবের একটি অলিগার্কি বিকশিত হচ্ছে, যা আক্ষরিক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এটি খুব অল্পসংখ্যক অতিধনী লোকের হাতে ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রীকরণ।
বাইডেন সিলিকন ভ্যালির ধনী ব্যক্তিদের প্রতি ইঙ্গিত করেন, যাদের মধ্যে ইলন মাস্ক উল্লেখযোগ্য। মাস্ক ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং তার প্রচারণায় বিশাল আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব যেমন জেফ বেজোস এবং মার্ক জাকারবার্গ ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছেন।
বক্তৃতার শেষে বাইডেন আমেরিকানদের আহ্বান জানান, "আপনারা দেশের রক্ষাকবচ হোন। আগুনের শিখা প্রজ্জ্বলিত রাখুন।"
বাইডেনের বিদায়ী ভাষণটি আসে একই দিনে, যেদিন তিনি ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন। এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে ১৯ জানুয়ারি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার একদিন আগে।
তিনি জানান, এই আলোচনা তার কূটনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।
তবে ট্রাম্পও এই চুক্তির কৃতিত্ব দাবি করেছেন, উল্লেখ করে বলেছেন, "আমার নির্বাচনী জয়ই এই চুক্তিকে সম্ভব করেছে।"
২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বাইডেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বাইডেন লড়তে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।
বাইডেনের বিদায়ী ভাষণ ছিল ওভাল অফিস থেকে তার পঞ্চম এবং শেষ আনুষ্ঠানিক ভাষণ। বাইডেন সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি তার পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড-এর প্রশংসা করেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ