১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন পর্যটকরা: পরিবেশ উপদেষ্টা
Published: 19th, October 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ উন্মুক্ত করা হবে। তবে, দ্বীপে রাত্রিযাপন-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত থাকা মানেই দূরত্ব সৃষ্টি নয়। গণতন্ত্রে মতবিরোধ থাকতেই পারে। যারা সনদে স্বাক্ষর করেছেন, তারা তাদের মতামতসহ নোট দিয়েছেন, তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ।
জুলাই সনদ এবং এনসিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি আগে ভিন্নমত পোষণ করলেও এখন এনসিপি বারবার জুলাই সনদের প্রসঙ্গ তুলছে। সাধারণ মানুষের কাছে তারা নিজেদের মতো করে বার্তা দিচ্ছে। এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। সরকার এ বিষয়ে কিছু বলবে না। তবে, এনসিপি চাইছে যে, সনদের বাস্তবায়ন রূপরেখা দলিলে যুক্ত হোক এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে হোক।
আইনি ভিত্তির প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি স্পষ্ট আইনি কাঠামো তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। কমিশন যখন এ বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ করবে, তখন সরকার অবস্থান নেবে। যদিও এটি সরাসরি আইন হবে না, তবে একটি ভিত্তি তৈরির রূপরেখা দেওয়া হবে।
সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে উপদেষ্টা আরো বলেন, এনসিপি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবে। সব পক্ষকে একটি সমঝোতায় আসতে হয়। আমরা আশাবাদী, ইতিবাচক কিছুই হবে।
এনসিপির দাবির যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যৌক্তিকতা নির্ধারণ আমার বিষয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। যদি রাজনৈতিকভাবে তারা একমত হয়, আমরা সেটাকেই গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করব।
সরকারের পরামর্শে এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করেনি, এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। প্রধান উপদেষ্টা খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এমন কোনো প্রমাণ নেই, যা প্রমাণ করে যে, সরকার এনসিপিকে স্বাক্ষর না করতে বলেছে। এসব গুজব সন্দেহ সৃষ্টির জন্য ছড়ানো হয়।
বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড ও সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে, এ লক্ষ্যেই নির্বাচন কমিশন ও সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন স্থানে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। এগুলোর প্রতিটির তদন্ত হবে। এর আগেও সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত হয়েছে এবং স্বচ্ছভাবে করা হয়েছে। এবারও তা-ই হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।
ঢাকা/এএএম/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই সনদ র জন ত ক প রসঙ গ উপদ ষ ট এনস প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইনানীতে ‘ফাইভ স্টার’ খাবার এখন সাধারণ মানুষের নাগালে
সন্ধ্যা নামতেই কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকতের আকাশে ঝুলে পড়ে রঙিন আলো। দূরে ঢেউয়ের গর্জন, কাছে ভেসে আসে বারবিকিউয়ের ধোঁয়া। একপাশে কেউ চা হাতে গল্পে মশগুল, অন্যপাশে শিশুরা মকটেইলের গ্লাসে ফেনা উড়িয়ে হাসছে।
এমন মনোরম পরিবেশে সি পার্ল বিচ রিসোর্টে শুরু হয়েছে তিন মাসব্যাপী বর্ণিল ফুড ফেস্টিভ্যাল। যেখানে খাবার আর আনন্দ মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অপূর্ব উৎসবের আবহ। আর ‘ফাইভ স্টার’ মানের খাবারগুলো খেতে পারবেন সাধারণ মানুষও।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইনানী সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র সামনে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন মাঠে বসেছে ঐতিহ্যবাহী কাঠ আর খড়ের ছাউনি ১২-১৫টি স্টল।
পর্যটক, স্থানীয় ও অতিথিদের জন্য এখানে সাজানো হয়েছে দেশি-বিদেশি নানা মুখরোচক খাবারের সমাহার। এক স্থানে সমুদ্রের হাওয়া আর খাবারের গন্ধে তৈরি হয়েছে এক অন্যরকম আবেশ। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে এই ফুড ফেস্টিভ্যাল।
মেন্যুতে রয়েছে ফাস্টফুড, আইসক্রিম ও ওয়াফলস, চা-কফি, জুস ও মকটেইল, চটপটি-ফুচকা, ডোনাট-নাগেটস, পিৎজা, মিষ্টান্ন, ফ্যামিলি ফ্রাই বাস্কেট, এগ-চিকেন-লিভার রোল, বিরিয়ানি, নুডুলসসহ নানা পিঠা-পায়েস ও ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবার।
ওই রিসোর্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্র্যান্ড ম্যানেজার মোহাম্মদ আবরার রাজ্জাক বলেন, “এটি শুধুই স্ট্রিটফুড নয়, বরং ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন। আমরা চেষ্টা করেছি দেশীয় স্বাদকে আন্তর্জাতিক পরিবেশে তুলে ধরতে। ফুড ফেস্টিভ্যালের প্রতিটি স্টলে রাখা হয়েছে খাবারের মান ও পরিচ্ছন্নতার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা। দামও রাখা হয়েছে সবার নাগালে ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।”
তিনি আরো বলেন, “দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার এখানে রাখা হয়েছে, যেন পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণের পাশাপাশি বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদও উপভোগ করতে পারেন।”
ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাসুদুল হক বলেন, “আমরা শুধু খাবার বিক্রির আয়োজন করিনি বরং একটি অভিজ্ঞতা তৈরি করেছি। সি পার্লের এই ফুড ফেস্টিভ্যালে পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের জন্য রয়েছে এমন এক পরিবেশ যেখানে খাবার, সংগীত ও সাগরের হাওয়া মিলে তৈরি করে স্মরণীয় মুহূর্ত। আমাদের লক্ষ্য পর্যটকরা যেন এখানে এসে সমুদ্রের সৌন্দর্যের সঙ্গে নানান রকমের খাবার উপভোগ করতে পারেন।”
ফুড ফেস্টিভ্যালের পুরো এলাকা সাজানো হয়েছে থিমভিত্তিক আলোকসজ্জায়। সন্ধ্যা নামতেই সৈকতের ঢেউয়ের শব্দে যোগ হয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, মৃদু আলোর নিচে খাবারের গন্ধে ভরে যায় পরিবেশ। রিসোর্টের খোলা প্রান্তরে রাখা হয়েছে আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা, যেখানে বসে পর্যটকরা একসঙ্গে খাবার উপভোগ করছেন।
ঢাকা থেকে আগত দম্পতি মাসুম রানা ও মোবাশ্বেরা সালসাবিল বলেন, “আমরা ধানমন্ডি থেকে বেড়াতে এসেছি। ইনানীর সৈকতের এমন পরিবেশে ফুড ফেস্টিভ্যাল হবে ভাবতেই পারিনি। এখানকার খাবারের স্বাদ দারুণ, বিশেষ করে বিরিয়ানি আর মকটেইল। মনে হচ্ছে ঢাকার কোনো বড় রেস্টুরেন্টে খাচ্ছি কিন্তু খোলা আকাশের নিচে সাগরের হাওয়ায়!”
রাজধানীর উত্তরা থেকে সন্তানসহ ঘুরতে আসা পরিবারের নুসরাত জাহান মিনু বলেন, “আমার ছোট বাচ্চারা আইসক্রিম আর ওয়াফলস খুব পছন্দ করেছে। জায়গাটা খুবই সুন্দর ও নিরাপদ। সিপার্লের আয়োজনটি পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর জন্য একদম উপযুক্ত। দামও হাতের নাগালে, তাই ইচ্ছেমতো খাওয়া যায়।”
স্থানীয় ছেপটখালীর বাসিন্দা মো. শহিদুল আরাফাত বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ হয়েও এখানে এসে ফাইভ স্টার রিসোর্টের খাবার খেতে পারছি, এটা বড় আনন্দের বিষয়। ১০০ থেকে ৫০০ টাকায় ভালো মানের খাবার পাওয়া যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আশা করি এমন আয়োজন নিয়মিত হবে।”
এ আয়োজনকে ঘিরে এরইমধ্যে কক্সবাজারের পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। অনেকেই বলছেন, এমন আয়োজন সৈকত শহরে খাবার সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
তিন মাসব্যাপী এই ফুড ফেস্টিভ্যাল কেবল এক উৎসব নয়, বরং কক্সবাজারে পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্পের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
ঢাকা/এস