পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ উন্মুক্ত করা হবে। তবে, দ্বীপে রাত্রিযাপন-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।

রবিবার (১৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত থাকা মানেই দূরত্ব সৃষ্টি নয়। গণতন্ত্রে মতবিরোধ থাকতেই পারে। যারা সনদে স্বাক্ষর করেছেন, তারা তাদের মতামতসহ নোট দিয়েছেন, তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ।

জুলাই সনদ এবং এনসিপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি আগে ভিন্নমত পোষণ করলেও এখন এনসিপি বারবার জুলাই সনদের প্রসঙ্গ তুলছে। সাধারণ মানুষের কাছে তারা নিজেদের মতো করে বার্তা দিচ্ছে। এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। সরকার এ বিষয়ে কিছু বলবে না। তবে, এনসিপি চাইছে যে, সনদের বাস্তবায়ন রূপরেখা দলিলে যুক্ত হোক এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে হোক।

আইনি ভিত্তির প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি স্পষ্ট আইনি কাঠামো তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। কমিশন যখন এ বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ করবে, তখন সরকার অবস্থান নেবে। যদিও এটি সরাসরি আইন হবে না, তবে একটি ভিত্তি তৈরির রূপরেখা দেওয়া হবে।

সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে উপদেষ্টা আরো বলেন, এনসিপি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবে। সব পক্ষকে একটি সমঝোতায় আসতে হয়। আমরা আশাবাদী, ইতিবাচক কিছুই হবে।

এনসিপির দাবির যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যৌক্তিকতা নির্ধারণ আমার বিষয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। যদি রাজনৈতিকভাবে তারা একমত হয়, আমরা সেটাকেই গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করব।

সরকারের পরামর্শে এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করেনি, এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। প্রধান উপদেষ্টা খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এমন কোনো প্রমাণ নেই, যা প্রমাণ করে যে, সরকার এনসিপিকে স্বাক্ষর না করতে বলেছে। এসব গুজব সন্দেহ সৃষ্টির জন্য ছড়ানো হয়।

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড ও সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে, এ লক্ষ্যেই নির্বাচন কমিশন ও সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন স্থানে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। এগুলোর প্রতিটির তদন্ত হবে। এর আগেও সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত হয়েছে এবং স্বচ্ছভাবে করা হয়েছে। এবারও তা-ই হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।

ঢাকা/এএএম/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই সনদ র জন ত ক প রসঙ গ উপদ ষ ট এনস প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১ লাখ কোটি টাকার পারিবারিক ব্যবসাও সামলান এই তারকা-পত্নী

দক্ষিণী সিনেমার মেগাস্টার রাম চরণ। ২০১২ সালে ১৪ জুন উপাসনার সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন তিনি। বিয়ের ১০ বছর পর প্রথম সন্তানের বাবা-মা হন এই দম্পতি। আবারো জমজ সন্তানের বাবা-মা হতে যাচ্ছেন তারা। কয়েক দিন আগে আইআইটি হায়দরাবাদে ডিম্বাণু সংরক্ষণ নিয়ে মন্তব্য করার পর কটাক্ষের শিকার হন উপাসনা, তৈরি হয় বিতর্ক। সময়ের সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেন উপাসনা। তারপর থেকে আলোচনায় রয়েছেন এই তারকা-পত্নী।  

রাম চরণের স্ত্রী উপাসনার আরেক পরিচয় তেলুগু চলচ্চিত্রের মেগাস্টার চিরঞ্জীবীর পুত্রবধূ। রাম চরণ রুপালি পর্দার ‘রাজা’ হলে ব্যবসার ‘রানি’ উপাসনা। তারকা-পত্নী হওয়ার পাশাপাশি তার নিজস্ব একটি পরিচয়ও রয়েছে। বেসরকারি অ্যাপোলো হাসপাতালের করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির ভাইস চেয়ারপার্সন উপাসনা। পাশাপাশি সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত। নারী ও শিশুদের জন্য নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

বিজয়ের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে যা বললেন রাশমিকা

ধানুশ-কৃতির সিনেমার আয় ১৩৬ কোটি টাকা

 

পারিবারিকভাবে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে উপাসনার যোগসূত্র। ভারতের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল ও চিকিৎসা পরিষেবা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রতাপচন্দ্র রেড্ডির নাতনি। ৭৭ হাজার কোটি রুপির (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকার বেশি) ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী উপাসনা। তার মা শোবনা কামিনেনি হলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারপার্সন। প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা হলেন উপাসনা।

 

হায়দরাবাদে স্কুল জীবনের পাঠ শেষ করেন উপাসনা। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। লন্ডনের রিজেন্টস ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিপণন ও ব্যবস্থাপনায় বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করে তিনি। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন এই মেধাবী ছাত্রী। তারপর দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন উপাসনা। পারিবারিক ব্যবসার বৃত্ত ছেড়ে উপাসনার প্রভাব গণমাধ্যমে বিস্তৃত। একটি ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক উপাসনা। নারীদের স্বাস্থ্য-সুস্থতা নিয়ে মাঝেমধ্যেই কলম ধরেন।

 

উপাসনার কর্মযজ্ঞ এখানেই শেষ নয়। একটি বীমা সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। উপাসনার বাবা অনিল কামিনেনির সংস্থারও দায়িত্ব তার কাঁধে রয়েছে। এমনকি, তার শাশুড়ি, রাম চরণের মা সুরেখা কোনিদেলার খাবারের ব্যবসার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন উপাসনা। অর্থাৎ হেঁশেল থেকে স্বাস্থ্য, সমস্ত ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ উপাসনার।

 

একটি বিশেষ উদ্যোগের সঙ্গে উপাসনার নাম জড়িয়ে আছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে ভারতজুড়ে ১৫০টিরও বেশি বৃদ্ধাশ্রম দত্তক নিয়েছেন ব্যবসায়ী পরিবারের এই কন্যা। শুধু দত্তক নেওয়াই নয়, এসব বৃদ্ধাশ্রমের সদস্যরা যাতে সঠিক আদর-যত্ন পান সেদিকেও খেয়াল রাখেন উপাসনা। জীবন সায়াহ্নের এই মানুষগুলো যাতে শারীরিক-মানসিকভাবে ভালো থাকেন সেটাই টার্গেট বলে জানিয়েছেন উপাসনা।

 

উপাসনার নানু ডা. প্রতাপচন্দ্র রেড্ডি একজন ধনকুবের। ১৯৮৩ সালে অ্যাপোলো হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় ৫০ বছর বয়েসি প্রতাপচন্দ্রের হাত ধরে। ভারতের প্রথম ৫০ জন শিল্পপতির তালিকায় নাম লেখান প্রতাপচন্দ্র। হাসপাতাল ছাড়াও ২১টি ভিন্ন সংস্থা রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের ছাতার নিচে। পাঁচ হাজার ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে ২৯১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র, ডিজিটাল হেলথ পোর্টালও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের।

 

বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আগে প্রতাপচন্দ্র পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। নিজের কন্যাদেরও ব্যবসার কাজ বুঝিয়েছেন প্রতাপচন্দ্র। তা চার কন্যাই প্রতিষ্ঠানটির উঁচু পদে রয়েছেন। প্রতাপচন্দ্রের এক কন্যা শোবনার মেয়ে উপাসনা এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

 

কলেজ জীবন থেকেই একে অপরকে চিনতেন রাম চরণ ও উপাসনা। বন্ধু মহলে তারা ছিলেন আলোচিত। অম্ল-মধুর সম্পর্কে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। এরপর এক সময় রাম চরণ দেশের বাইরে যান। তখন পরস্পরের সঙ্গ মিস করতেন তারা। সবাই ধরেই নিয়েছিল প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন দু’জন। কিন্তু তখনও পরস্পরকে বন্ধুই ভাবতেন তারা। রাম চরণের ‘মাগাধীরা’ সিনেমাটি মুক্তির পরই মূলত উপাসনার সঙ্গে এই অভিনেতার প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। দু’জনের পরিবারের মধ্যে বেশ মধুর সম্পর্ক ছিল, এজন্য বিয়ে নিয়েও কোনো ঝামেলা হয়নি।   

 

২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর হায়দরাবাদের টেম্পল ট্রি ফার্মসে রাম চরণ ও উপাসনার বাগদান হয়। জাঁকজমকপূর্ণ এই আয়োজনে ছিলেন দুই পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনরা। তাদের বাগদান নিয়ে ভক্তদের মধ্যে বেশ উন্মাদনা ছিল। তাকে নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতিতে বেশ বিব্রত ছিলেন উপাসনা। তবে সবকিছু বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন রাম চরণ। ২০১২ সালের ১৪ জুন পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের উপস্থিতিতে এই জুটির বিয়ে ও বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের পর যৌথ সিদ্ধান্তে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করেন রাম চরণ-উপাসনা। এই ডিম্বাণু থেকেই তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। এ নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন উপাসনা।

 

উপাসনার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৩০ কোটি রুপি। রাম চরণের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩৭০ কোটি রুপি। রাম চরণ-উপাসনার সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়েছে। এই দম্পতির হায়দরাবাদের জুবিলি হিলসে একটি বাংলো রয়েছে, যার দাম ৩০ কোটি রুপি। বিলাসবহুল বাংলোতে রয়েছে—সুইমিং পুল, একটি টেনিস কোর্ট, একটি বিশাল মন্দির, একটি জিমনেশিয়াম। তাছাড়া মুম্বাইয়ের একটি পেন্টহাউজের মালিকানাও রয়েছে রাম চরণ-উপাসনার।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ