পটুয়াখালীতে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স সম্পন্ন
Published: 16th, January 2025 GMT
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী জেলায় কার্যরত সকল তফসিলী ব্যাংকের সহযোগিতায় শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি লিড ব্যাংক হিসেবে ১১ জানুয়ারি কলাপাড়া পৌর অডিটরিয়াম কমপ্লেক্সে স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স-২০২৫ এর আয়োজন করে।
উক্ত স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্সে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বরিশাল জোনাল অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো.
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এম. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল মহসীন ও উপপরিচালক মো. মাহবুব-উল আলম।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান, কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর রিক্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ইভিপি মোহাম্মদ আবু ছায়েম এবং ব্যাংকের লিড শাখা খেপুপাড়া শাখার ব্যবস্থাপক মীর তৌহিদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে ২ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে আলোচকবৃন্দ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সঞ্চয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন এবং সঞ্চয় যে ভবিষ্যতে মানুষের জীবনে অত্যাবশ্যকীয় তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীদেরকে স্কুল ব্যাংকিং সম্পর্কে অবহিত করে তাদের মধ্যে যাতে সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরি হয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। ব্যাংকিং সেক্টরে ছাত্র-ছাত্রীদের যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমানত রয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার বলে আলোচকবৃন্দ তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
স্কুল ব্যাংকিং সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য এক র্যালির আয়োজন করা হয়।
দিনব্যাপী আয়োজিত উক্ত স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স-২০২৫ এ কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উপহার বিতরণ সব মিলে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ হ জ ল ল ইসল ম কনফ র ন স
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫