‘ভাইভার নাটক করে আর শিক্ষক হওয়া যাবে না’
Published: 16th, January 2025 GMT
ভাইভার নাটক করে লেনদেনের মাধ্যমে আর শিক্ষক হওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার।
তিনি বলেন, “বর্তমানে হলে টেন্ডারবাজি আর ফাও খাওয়া নেই। প্রতিবার ভর্তি পরীক্ষার সময় একদল ঝামেলা তৈরি করেছিল, কিভাবে ভাগ বাটোয়ারা করে টাকা খাওয়া যায়। আমরা সেই পরিবেশ থেকে বেড়িয়ে এসেছি। আপনারা চাকরি না পেলে হতাশ হবেন না, আপনাদের জন্য সারা পৃথিবী খোলা রয়েছে। ভাইভার নাটক করে লেনদেনের মাধ্যমে আর শিক্ষক হওয়া যাবে না।”
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মিলনায়তনে আয়োজিত এমবিএ ফেস্টিভ্যালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফাইন্যান্স বিভাগের ২৬তম ব্যাচের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপাচার্য বলেন, “আমাদের প্রশাসন চেষ্টা করছে, বিশ্বের কর্পোরেট সেক্টরের সঙ্গে সমঝোতা তৈরি করতে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি করতে। ছয় মাস আগে এ বিশ্ববিদ্যালয় মরুভূমির মতো ছিল। সেই জায়গা থেকে আমরা পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি। যে হলগুলোতে দখলদারিত্ব ছিল, আমরা সেই দখলদারিত্বকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
ফাইন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, “বিগত সরকার গত কয়েক বছরে দেশে প্রচুর পরিমাণে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে। এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৪টি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৭টি। এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশের জন্য প্রয়োজন ছিল না। প্রতি বছর ৩০ লাখ গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে; কিন্তু চাকরির ক্ষেত্র শূন্য। এমতাবস্থায় বেকারত্ব অবশ্যম্ভাবী।”
ফাইন্যান্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “দেশের তরে প্রতিটি জায়গায় তোমরা মেধার স্বাক্ষর এবং নিজেদের ক্যারিয়ারকে সমুন্নত রাখবে। এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের যেখানেই গেছে, তারা অনন্য ভূমিকা রেখেছে। যার যেদিকে স্কিল আছে, সেদিকেই ফোকাস করবে।
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা হলো, নৈতিক সমস্যা। তোমরা এমন কিছু করবে না, যার কারণে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগের সম্মানহানি হয়। দীর্ঘদিন তোমরা আমাদের সঙ্গে ছিলে। আমাদের কোন ভুলত্রুটি হলে তোমরা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি
ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।
যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।
কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী