বিপিএল শুরুর আগে পারিশ্রমিক নিয়ে নিয়ম করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেশি-বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের ৫০ শতাংশ অর্থ দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। টুর্নামেন্ট চলাকালীন বাকি ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বাকি ২৫ শতাংশ অর্থ দেওয়ার কথা টুর্নামেন্ট শেষে।   

কিন্তু বিপিএলের অর্ধেক ম্যাচ হয়ে গেলেও বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি ২৫ শতাংশের বেশি অর্থ পরিশোধ করেনি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল ঢাকা ক্যাপিটাল। টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ৮ ম্যাচে একটি জিতলেও প্রথম কিস্তির ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

ফরচুন বরিশাল ও রংপুর রাইডার্স ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করেছে। তবে সম্মানী নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি দুটির খেলোয়াড়দের দুশ্চিন্তা নেই। দল দুটির সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। ফরচুন সুজ ও বসুন্ধরা গ্রুপের টাকা দেওয়ার সক্ষমতাও রয়েছে।

খুলনা টাইগার্সও পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। ক্রিকেটারদের অর্থ পরিশোধ নিয়ে সুনাম আছে তাদের। তবে এবার এখন পর্যন্ত এই ফ্র্যাঞ্চাইজিও ২৫ শতাংশের বেশি অর্থ এখানো দেয়নি।

খেলোয়াড়রা অনুশীলন বয়কট করায় দুর্বার রাজশাহী ২৫ শতাংশ নগদ অর্থ ক্রিকেটারদের দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ১৯ তারিখে আরও ২৫ শতাংশ অর্থের চেক প্রদান করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে দুর্বার রাজশাহী আস্থা অর্জনের জায়গায় আসতে পারেনি।

রাজশাহীর অধিনায়ক বিজয় তাই বলেন, ‘এভাবে খেলা যায় না। টাকা কখন পাব, সে নিশ্চয়তা নেই। ধরে নিলাম আজ (গতকাল) ৫০ শতাংশ টাকা দেবে। বাকি ৫০ শতাংশের কী হবে? আমি তো ঢাকা ফিরে গিয়েছিলাম। সভাপতি স্যার বলাতে এখানে এসেছি।’

রাজশাহীর অর্থ পরিশোধের এই সংকট থেকে পুরোপুরি উত্তরণ না হলে রাজশাহীর মালিকানা বিসিবি নিজেদের হাতে নিতে পারে বলে শোনা গেছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে মেসেজে জানতে চাওয়া হয়েছিল মালিকানা বিসিবি নিচ্ছে কিনা।

তিনি উত্তরে লিখেছেন– ‘এখনও বলার সময় হয়নি।’ ফাহিমের কথায় একটা বার্তা রয়েছে, ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ এগিয়ে না এলে বিসিবি দেখবে। রাজশাহী দলের এমনটা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সপ্তম ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে তারা বিপিএলে এসেছে বিসিবি সভাপতির অনুরোধে। শেষমেশ খেলোয়াড়দের টাকা পরিশোধের দায়িত্ব বোর্ডকেই নিতে হতে পারে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল ল টন দ স ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ