চৌগাছা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্র অবশেষে ধরা পড়েছে। এই চক্রটি নারী সদস্যদের ব্যবহার করে ফাঁদ পেতে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতো। 

বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনায় রুস্তমপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে মোস্তাক হোসেন বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

মামলা তদন্তে চৌগাছা থানা ও যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের যৌথ অভিযানে নারীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, চক্রের সদস্য রুপালী খাতুন (৩৫) নামে এক নারী মোস্তাক হোসেনের ছোট ভাই আব্দুর রহমানকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। প্রথমে রুপালী তাকে পৌর শহরের কালিতলা এলাকার জনৈক সাইফুল ইসলামের বাড়িতে ডেকে নেয়। সেখানে চক্রের অন্যান্য সদস্যরা তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। 

পরে তাকে আফরা গ্রামের জহিরুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে আটকানো হয়। ওই ঘরে তাকে মারধর করে তার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং তার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

চৌগাছা থানা ও যশোর ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে রুপালী খাতুনকে প্রথমে ধরা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রুপালী খাতুন, নান্নু মিয়া, জাহিদ হাসান, দেলোয়ার হোসেন, হৃদয় মহিফুল ও জাকিয়া সুলতানা।

উদ্ধার হওয়া ভিকটিম আব্দুর রহমান জানান, চক্রের সদস্যরা তার মোবাইল ফোন থেকে তার পরিবারের কাছে প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে এক লাখ টাকা দাবি করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরে বিউটি পার্লারের আড়ালে তাদের অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তারা প্রথমে মিসকল বা টেক্সটের মাধ্যমে ভিকটিমদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। পরে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফাস্টফুডের দোকানে দেখা করার প্রস্তাব দিত। এরপর চক্রের সদস্যরা সুযোগ বুঝে ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলে তাদের নগ্ন ছবি বা ভিডিও ধারণ করত। এই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে ভিকটিমদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা আদায় করত চক্রটি।

এ চক্রের প্রতারণার শিকার হন চৌগাছা সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। তিনি চক্রের দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার অর্ধনগ্ন অবস্থায় একজন নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক ভিডিও ধারণ করে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

চৌগাছার এক কলেজ অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জীবন এবং সম্মান ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই প্রতারণা চক্রের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে প্রশাসনের পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।” 

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতারণা রোধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। জনগণকে এ ধরনের ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”

ঢাকা/রিটন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদস য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁওয়ে শহিদুল ইসলাম শহিদকে হত্যার মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক গত বুধবার (৩০ জুলাই) আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। 

শনিবার (২ আগস্ট) চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব আহমেদ অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন

চবি ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা কোনো মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো।

২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় একাধিক পিস্তল, শটগানসহ ভারী অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।

এর আগে নিউ মার্কেট মোড়ে সমাবেশ করে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে ষোলশহর মেয়র গলিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে হামলা চালায়। এর পর বহদ্দারহাট মোড়-সংলগ্ন সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা হয়। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন অটোরিকশাচালক শহিদ। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শহিদের ভাই শফিকুল ইসলাম চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন— চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন ও নুরুল আজিম রনিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

আগামী ২৫ আগস্ট বাদীর উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগপত্রে ১২৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৮ জন সাধারণ মানুষ, ৯৯ জন পুলিশ ও ১ জন চিকিৎসক।

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ