মিথেন হ্রাসে পথ দেখাতে পারে ড. আবেদ উদ্ভাবিত ছত্রাক
Published: 27th, January 2025 GMT
জলবায়ু পরিবর্তন মানব অস্তিত্ব ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য, উভয়ের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক এই দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী উৎসাহ দেখা গেলেও ভিত্তিগত সমাধান নিয়ে খানিকটা নিরুৎসাহই দৃষ্টিগোচর হয়। তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এই মানবসৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় দুই দশক ধরে কার্বন নিঃসরণ ও গ্রিনহাউস ইফেক্ট নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জিনবিজ্ঞানী ড.
জলবায়ু পরিবর্তনে মুখ্যত দায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন-গ্লোবাল ওয়ার্মিং। মানুষ দুই হাজার বছর ধরে শিল্প, কৃষি ও চিকিৎসায় প্রচুর কয়লা ও বর্জ্য পুড়িয়ে এবং পশুপালনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে যে কার্বন ছড়িয়েছে, তা উষ্ণায়নের জন্ম দিয়েছে। বন্যা, খরা, মেরুপ্রান্তে বরফ গলন থেকেই সৃষ্ট প্রকৃতির অসুখ! গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের সঙ্গে গ্রিনহাউস ইফেক্ট অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। গ্রিনহাউস ইফেক্টই প্রকৃতিতে প্রাণিজগতের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভুমিকা পালন করছে। এর কারণেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা গড়ে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে; অন্যথায় সেটা হতো ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গ্রিনহাউস ইফেক্ট কীভাবে কাজ করে? কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ও ফ্লোরিনেটেড গ্যাস বায়ুমণ্ডলে গ্লাসের মতো আবরণী তৈরি করে। এই বায়ুমণ্ডলের ভেতর তাপ আটকা পড়ে যায়। এভাবে বছরের পর বছর আটকে পড়া তাপের কারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। গ্রিনহাউস গ্যাসের মধ্যে ৮০ শতাংশই কার্বন ডাই-অক্সাইড, ১০ ভাগ মিথেন, ৭ ভাগ নাইট্রাস অক্সাইড ও ৩ ভাগ অন্যান্য। এর মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ১০০ বছর এবং নাইট্রাস অক্সাইড ১১৪ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় গ্রিনহাউস ইফেক্ট নিয়ে ভয় কেন? ইউরোপিয়ান কমিশনের ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট হাইলাইট’ রিপোর্টে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস; ২০২৩ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে ০.১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রার গড় বৃদ্ধি প্রায় ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সত্যিই ভীতিকর। শিল্পবিপ্লবের শুরু থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ, কিন্তু মিথেন বেড়েছে প্রায় ১৬৫ শতাংশ। কাজেই কার্বন ডাই-অক্সাইডের তুলনায় মিথেন অনেক বড় প্রভাবক। উল্লেখ্য, প্রতি ১০০ বছরে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ২৮ গুণ তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষমতা রাখে মিথেন। যদিও অপেক্ষাকৃত কম স্থায়ী, মিথেন অন্য যৌগের সঙ্গে বিক্রিয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করে। এসব কারণেই মিথেনের মাত্রা বৃদ্ধি জীবজগতের জন্য রেড অ্যালার্ট।
বাংলাদেশের মূল অর্থনৈতিক সহায়ক কৃষি, পশুপালন, উভয় ক্ষেত্রই মিথেন নিঃসরণে জড়িত। কৃষিকাজ থেকে প্রতিবছর ৮৩.৫৬ মিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। পশুপালন থেকে নির্গত মিথেনের পরিমাণের অবশ্য হিসাব পাওয়া যায় না। তবে ২০২২-২৩ সালের পরিসংখ্যানমতে, দেশে প্রায় আড়াই কোটি গরু ও ২ কোটি ৭০ লাখ ছাগল রয়েছে।
আমরা জানি, গরু-ছাগলের মতো গবাদি পশু সারাদিনে ঘাস-পাতা যা-ই খায়, প্রথমে জমা হয় পাকস্থলীর জাবর থলিতে। সেখানে আংশিক গাঁজন প্রক্রিয়ায় অর্ধপাচিত গলিত মণ্ড তৈরি হয়। এ সময় উপজাত হিসেবে তৈরি হয় মিথেন গ্যাস, যা পরে মুখ দিয়ে বের হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়।
মিথেনের এই বৃহৎ উৎস নিয়ন্ত্রণে অনেক গবেষণা চলছে। এর মধ্যে ‘অ্যাসপেরোগোপসিস টেক্সোফরমিস’ নামের সামুদ্রিক শৈবাল মিথেন নিরোধক প্রমাণ হয়। এই শৈবালের যৌগ ‘ব্রোমোফর্ম’ মিথেন উৎপাদনে বাধা দেয় এবং গরুর স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক উপকারী যৌগ তৈরিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। শৈবালটি গরুর খাবারে দিলে তা প্রায় ৯৮ শতাংশ মিথেন উৎপাদন কমিয়ে আনতে সক্ষম।
মুশকিল হলো, এই শৈবালে অল্প পরিমাণে ব্রোমোফর্ম প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়; গভীর সমুদ্রে বিশেষ ঋতুতে ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জন্মায় বলে এটি সংগ্রহ বা চাষাবাদও দুরূহ। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সম্প্রতি ড. আবেদ চৌধুরী নতুন এক ফাঙ্গাল স্ট্রেইনের কথা বলেছেন। ‘কার্ভুলারিয়া এসপি ৪৩৮৮’ নামে ছত্রাকটির মিথেনকে অকার্যকর করার ক্ষমতা সেই সামুদ্রিক শৈবালের চেয়েও কয়েক গুণ। ছত্রাকটি খাবার বা পানির সঙ্গে গরুকে খাওয়ালে মিথেন উৎপাদন শতভাগ থামিয়ে দেওয়া সম্ভব। ছত্রাকগুলো সহজেই জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে আরও কার্যকর করে তোলা সম্ভব। ছত্রাক মিশ্রিত খাবার প্রয়োজনীয় পরিমাণে সরবরাহ করা গেলে একদিকে যেমন পরিবেশ থেকে মিথেন কমিয়ে আনবে, অন্যদিকে গরুর স্বাস্থ্য ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশে পশুপালন ব্যবস্থা এখনও দুর্বল ও ভঙ্গুর। গ্রামীণ পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এ জন্য সহজে বোধগম্য, সুসাধ্য ও ঝুঁকিমুক্ত এই পদ্ধতি পশুপালনে মিথেন হ্রাসে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। রাসায়নিক পদার্থ বা মেকানিক্যাল যন্ত্র ব্যবহার ছাড়াই ছত্রাকের মাধ্যমে মিথেনের উৎপাদন হ্রাসের এই পদ্ধতি শুধু আমাদের দেশে নয়; বরং গোটা বিশ্বেই পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই উদ্ভাবন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবেশবান্ধব কৃষি ও নগরায়ণ এবং শিল্পায়নে গোটা বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবেশবান্ধব খামার বাস্তবায়নে ড. আবেদ চৌধুরীর এই আবিষ্কার আমাদের ভবিষ্যতে সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখায়।
আলকাতুজ্জাকিয়া আঁখি: শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক র যকর পর ব শ স লস য র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।